গোয়ালিয়রের ডেপুটি পুলিশ সুপার সন্তোষ পটেল। ছবি: সংগৃহীত।
সন্তোষ পটেল। মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিরের ডেপুটি পুলিশ সুপার। দু’বেলা পেট ভরাতে যে যুবককে এক সময় রাজমিস্ত্রির কাজ করতে হত, এখন তিনিই মধ্যপ্রদেশ পুলিশ প্রশাসনের অন্যতম শীর্ষ আধিকারিক।
মধ্যপ্রদেশের পান্না জেলার দেবগাঁওয়ের বাসিন্দা সন্তোষ। ঝুপড়িতে বড় হয়েছেন। বাবা-মা অন্যের জমিতে কাজ করে যা আয় করতেন, তা দিয়ে সংসার চালানো তো দূর, দু’বেলা পেট ভরানোও সম্ভব ছিল না। নদীর ধারে ঝুপড়িতে তিন ভাইবোনের সঙ্গে বড় হয়েছেন সন্তোষ।
তাঁর কথায়, “আমার বয়স তখন ৮ কি ১০। বর্ষাকালে গাছ লাগানোর কাজ করতেন অনেকে। যখন চাষের কাজ থাকত না, বাবা-মায়ের সঙ্গে আমিও সেই কাজ করতে যেতাম। কখনও আবার তেন্দুপাতা বাছাইয়ের কাজ করতাম। কাজ না পেলে বাবা মধু সংগ্রহেরও কাজ করত।” দৈনিক ভাস্কর-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সন্তোষ জানান, তিনি খেতে খুব ভালবাসেন। কিন্তু সে ভাবে খাওয়া জুটত না। বাবার সঙ্গে রাজমিস্ত্রির কাজে গেলে তিন ঘণ্টা ইট বয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ করার পর তবেই একটা বিস্কুট মিলত। আর সেই বিস্কুটের লোভেই ইট বইতেন।
কাজের পাশাপাশি পড়াশোনাও চালিয়ে গিয়েছেন সন্তোষ। কখনও বাবা টাকা জোগাড় করে বই কিনে দিয়েছেন। কখনও কারও কাছ থেকে বই ধার করে পড়াশোনা করেছেন। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত দেবগাঁওয়েই পড়াশোনা করেছেন সন্তোষ। তার পর উচ্চশিক্ষার জন্য পান্নায় চলে আসেন। পড়াশোনা চালানোর জন্য একটি ছোটখাটো কাজও জুটিয়ে নেন। সেই টাকা দিয়ে বি টেক পড়েন। সন্তোষের বাবাও কিছু টাকা পাঠাতেন। সন্তোষ বলেন, “এক দিন বাবা জানিয়ে দেয় আর টাকা পাঠাতে পারবেন না। বাধ্য হয়ে এমটেক মাঝপথে ছেড়েই গ্রামে ফিরতে হয়। বাড়ি থেকে চাপ বাড়তে থাকে চাকরির জন্য।” তাঁর কথায়, “বাবা জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, কোনও সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নাও, না হলে গ্রামে গরু-মোষ চরাও।” ১৫ মাসের মধ্যে ফরেস্ট গার্ডের চাকরি পেয়েছিলেন সন্তোষ। কিন্তু সেই কাজে মন টিকছিল না তাঁর। স্থির করেন পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় বসবেন। ২০১৮ সালে মধ্যপ্রদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় বসেন। সেই পরীক্ষায় পাশ করে ডিএসপি পদের জন্য নির্বাচিত হন।