আবার কি ফিরবে এই ছবি? জল্পনা রাজনৈতিক শিবিরে।
সন্ধিপর্ব সারা। এ বার জয়পুরে ফিরছেন সচিন পাইলট। বিদ্রোহ ঘোষণা করেও কার্যত কোনও শাস্তি না পেয়ে হাই কম্যান্ডের নির্দেশে পাইলটের প্রত্যাবর্তনে অস্বস্তি বাড়ছে অশোক গহলৌত শিবিরে। নিজের শিবিরেরই বিধায়কদের একাংশের ক্ষোভ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রবীণ মুখ্যমন্ত্রীকে। বিধায়কদের সঙ্গে জয়সালমেরে একাধিক বৈঠক করেছেন তিনি। সেই সঙ্গে আগামী শুক্রবার বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের রণকৌশলও ঠিক করছেন তিনি। অন্য দিকে পাইলট বলেছেন, তিনি কখনও গহলৌতের বিরুদ্ধে কুরুচিকর মন্তব্য করেননি। তবে রাজস্থান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি এবং উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ পাইলট ফেরত পাবেন কি না, তা নিয়ে জল্পনা কাটেনি।
রাহুল ও প্রিয়ঙ্কা গাঁধীর সঙ্গে সোমবার পাইলট ও তাঁর অনুগামী ১৯ বিধায়কের বৈঠকের পরেই সমঝোতা হয়ে গিয়েছিল। কংগ্রেস হাই কম্যান্ড সূত্রে খবর, ওই বৈঠকে অনেকটাই নমনীয় অবস্থান নেন পাইলট। মুখ্যমন্ত্রী গহলৌতের ইস্তফার দাবি থেকে সরে আসেন তিনি। এর পরেই শীর্ষ নেতৄত্বও তাঁর অভিযোগ ও দাবিদাওয়া খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেয়। বিশেষ করে দল ও সরকার পরিচালনার পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন পাইলট। দলের তরফে সেগুলি বিবেচনার আশ্বাস দিতেই বেরোয় সমঝোতা সূত্র। আর তার পরই প্রায় স্বমহিমায় জয়পুরে ফিরছেন পাইলট ও তাঁর অনুগামী বিধায়করা।
বিদ্রোহ পর্বে গহলৌত তাঁকে ‘নিকম্মা’ বলে আক্রমণ করেছিলেন। পাইলট তার জবাবে পাল্টা আক্রমণ করেননি। সেই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করতেই মঙ্গলবার দিল্লিতে তিনি বলেন, ‘‘আমি উত্তরাধিকার সূত্রে কিছু মূল্যবোধ পেয়েছি। আমি কারও বিরুদ্ধে যতই বিরোধিতা করি, কখনও এই ধরনের ভাষা ব্যবহার করিনি।’’ পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘‘অশোক গহলৌতজি আমার থেকে অনেক বড় এবং আমি ব্যক্তিগত ভাবে তাঁকে সম্মান করি। কিন্তু তাঁর কাজের বিষয়ে প্রশ্ন তোলার অধিকার আমার আছে।’’ কিন্তু এই সন্ধির পরেই পাইলটকে দল ও সরকারের দুই পদে ফেরানো নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। কিন্তু এ বিষয়ে কংগ্রেস নেতৄত্ব বা পাইলট শিবিরের কেউই মুখ খোলেননি।
আরও পড়ুন: চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন, তবে সঙ্কট কাটেনি, আগামী ৯৬ ঘণ্টা চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে প্রণব মুখোপাধ্যায়
পদ ফেরানো হোক বা না হোক, পাইলট যে দলে ফের ভাল জায়গা নিয়ে ফিরছেন, এই বার্তাই গহলৌত শিবিরের ক্ষোভ-অসন্তোষ বাড়ার পক্ষে যথেষ্ট। মুখ্যমন্ত্রীর শিবিরের অনেক বিধায়ক, বিশেষ করে নবীন ব্রিগেড ঘনিষ্ঠ মহলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বলে দলীয় সূত্রে খবর। তবে তাঁদের ক্ষোভ সামাল দিতে ময়দানে নেমেছেন প্রবীণ বিধায়ক-নেতারা। জুলাইয়ে পাইলটদের বিদ্রোহ পর্বের গোড়া থেকেই বিধায়কদের জয়সালমেরে নিয়ে গিয়ে তুলেছেন গহলৌত। সোমবার পাইলটের প্রত্যাবর্তনের খবর সামনে আসতেই আজ মঙ্গলবার জয়সালমের ে যাচ্ছেন তিনি। সঙ্গে যাচ্ছেন আরও তিন মন্ত্রী। সেখানকার সূর্যগড়ে যে হোটেলে দীর্ঘদিন বিধায়করা ছিলেন, সেই হোটেলেই অনুগামীদের নিয়ে বৈঠক করবেন। আগামী শুক্রবার রাজস্থান বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন বসছে। আস্থা ভোট হলে তার রণকৌশল ঠিক করার পাশাপাশি নিজের শিবিরের বিধায়কদের ক্ষোভ-অসন্তোষ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি।
আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ করোনা পরীক্ষা, সংক্রমণের হার নামল ৮ শতাংশের নীচে
অন্য দিকে পাইলটের সঙ্গে দল যে সমঝোতার পথে হাঁটছে, এই খবর গহলৌত শিবিরেও ছিল। তাই বৈঠকের আগেই গহলৌত হাই কম্যান্ডের কাছে দরবার করতে শুরু করেন। পাইলটকে যাতে না ফেরানো হয়, তেমন দাবিও শীর্ষ নেতৄত্বের কানে তোলেন তিনি। কিন্তু দলীয় নেতৄত্ব তাতে কর্ণপাত করেননি। বরং তাঁকে এই পর্বের বাইরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয় দলের তরফে। দলের নেতাদের একটি সূত্রে খবর, দল যে মধ্যপ্রদেশের পুনরাবত্তি চায় না, সে কথাও গহলৌতকে বুঝিয়ে ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দেয় শীর্ষ নেতৄত্ব। দলের এই অবস্থানে গহলৌত নিজেও শীর্ষ নেতৄত্বের বিরুদ্ধে কিছুটা অসন্তুষ্ট বলেই সূত্রের খবর। কিন্তু আপাতত সে সব সরিয়ে রেখে নিজের শিবিরের বিধায়কদের ক্ষোভ সামাল দিতে এবং মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি টিকিয়ে রাখতেই বেশি সক্রিয় মুখ্যমন্ত্রী গহলৌত।