এস জয়শঙ্কর।
ন’বছর আগে শেষ বারের জন্য কোনও ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী (সুষমা স্বরাজ) ইসলামাবাদের মাটিতে পা রেখেছিলেন। এ বার কি সুষমার উত্তরসূরি এস জয়শঙ্কর পাকিস্তান সফরে যাবেন? এসসিওভুক্ত রাষ্ট্রগুলির সরকারি প্রধানদের আসন্ন সম্মেলনের (১৪ ও ১৫ অক্টোবর) আগে এই প্রশ্নটিই আলোচনার কেন্দ্রে উঠে আসছে কূটনৈতিক মহলে।
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, শুধু মাত্র পাকিস্তানকে এড়ানোর জন্য রাশিয়া-চিন-সহ ১০টি গুরুত্বপূর্ণ ইউরোশিয়া রাষ্ট্রের সঙ্গে সংযোগকে ছিন্ন করা উচিত হবে না বলেই মনে করছে সরকারের একটি বড় অংশ। প্রাক্তন কূটনীতিকেরাও জানাচ্ছেন, বর্তমান রণকৌশলগত পরিস্থিতিতে অবশ্যই জয়শঙ্করের এসসিও সম্মেলনে হাজির থাকা উচিত।
এই মুহূর্তে জয়শঙ্কর রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সম্মেলনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে রয়েছেন। আগামী সপ্তাহের গোড়ায় দেশে ফিরলে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে এসসিও-র আয়োজক দেশ পাকিস্তানকে জানিয়ে দেওয়া হবে, কে ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে সে দেশে যাবেন। জয়শঙ্কর না গেলে পাঠানো হবে সচিব পর্যাযের কর্তাকে। সূত্রের খবর, আরও একটি সম্ভাবনা রয়েছে। জয়শঙ্কর সশরীরে না গিয়ে ভিডিয়ো মাধ্যমে বৈঠকে যুক্ত হবেন। তবে তাঁর পাকিস্তান সফরের সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছে না বিদেশ মন্ত্রক। ইতিমধ্যেই যে সব সাংবাদিক ইসলামাবাদ যাবেন, তাঁদের এই সম্মেলনে নথিভুক্তিকরণের বিষয়ে বিশদে জানিয়েছে সাউথ ব্লক। ইঙ্গিত স্পষ্ট, উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দলই পাকিস্তানে পাঠাতে চলেছে মোদী সরকার।
পাকিস্তানে ভারতের শেষ হাই কমিশনার অজয় বিসারিয়া বলেছেন, “গত বছর গোয়ায় এসসিও সম্মেলনের আয়োজন করেছিল ভারত। পাকিস্তান তাদের তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী বিলাবল ভুট্টোকে গোয়ায় পাঠিয়েছিল। ভারত সেই সৌজন্যের প্রত্যুত্তর দিতেই পারে। দ্বিপাক্ষিক বল পাকিস্তানের কোর্টে ঠেলে দিয়ে ভারতের সুযোগ রয়েছে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বহুপাক্ষিক প্রতিশ্রুতিগুলি পূরণ করার।”
প্রসঙ্গত জয়শঙ্কর সম্প্রতি বলেছেন, “ভারত নিষ্ক্রিয় থাকবে না। পাকিস্তানের তরফ থেকে আসা ইতিবাচক এবং নেতিবাচক — উভয় পদক্ষেপেরই হিসেব অনুযায়ী জবাব দেবে।”
কূটনৈতিক শিবিরের মতে, যদি এস জয়শঙ্কর এসসিও সম্মেলনে যোগ দিতে ইসলামাবাদে যান, তা হলে তা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরকারের এ যাবৎকালের সার্ক নীতির পরিপন্থী হবে। ২০১৬ সালে সার্ক-ভুক্ত রাষ্ট্রগুলির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক হয়েছিল পাকিস্তানে। যোগ দিতে গিয়েছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। সেটাই শেষ বার পাকিস্তানের মাটিতে কোনও বহুপাক্ষিক সম্মেলনে ভারতের যোগদান। পাঠানকোটে সেনা ছাউনি এবং উরি হামলার পরে বন্ধ হয়ে যায় দু’দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সফর।
ইতিমধ্যে নিউ ইয়র্কে একটি আলোচনায় জয়শঙ্কর ভারতের সঙ্গে এসসিওভুক্ত রাষ্ট্রগুলির সংযোগের সুফলকে তুলে ধরেছেন। তাঁর কথায়, “চরমপন্থা এবং সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় এসসিও। এ ভাবেই এর যাত্রা শুরু হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে আমাদের জন্য আরও অনেক বিষয় উঠে এসেছে। ফলে একই সঙ্গে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে একাধিক অংশীদারের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ থাকছে।”