এই পরিস্থিতিতে নয়াদিল্লির তরফে লিভিভ থেকে ভারতীয়দের আসহরড শহরে সরে আসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে দু’ঘণ্টা অন্তর বুদাপেস্ট পর্যন্ত ট্রেন রয়েছে। সাত-আট ঘণ্টার ট্রেনযাত্রার শেষে বুদাপেস্ট পৌঁছলেই ভারতীয়দের বিমানে করে দেশে ফেরানো সম্ভব হবে।
ছবি পিটিআই।
ইউক্রেনে আটকে পড়া ভারতীয় পড়ুয়াদের কত দ্রুত দেশে ফেরানো যায়, সেই বিষয়টি আলোচনা করতে রবিবার রাতে দু’ঘণ্টার ধরে বৈঠক করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পরে তিনি জানান, এই উদ্ধারকাজে ইউক্রেনের পড়শি দেশগুলির সাহায্য কী ভাবে নেওয়া যায়, সেই নিয়ে আলোচনা করেছেন তাঁরা। মোদীর কথায়, ‘‘এই ছেলেমেয়েদের দেশে ফেরানোই এখন আমাদের কাছে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’’ জানা গিয়েছে, ইউক্রেনের পূর্ব দিকে, রাশিয়া সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় যে সব ভারতীয় পড়ুয়া ও অন্যান্য নাগরিক আটকে রয়েছেন, তাঁদের উদ্ধার করতে মস্কো থেকে ভারতীয় দূতাবাসের কর্মীদের রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তে পাঠানো হচ্ছে।
ইউক্রেনের পূর্ব দিকে অবস্থিত রাশিয়ার সীমান্তের কাছাকাছি খারকিভ, সুমির মতো শহরে পুতিনের বাহিনী প্রথমেই হামলা চালিয়েছে। ফলে এই সব এলাকায় আটকে থাকা ভারতীয় পড়ুয়াদের নিরাপত্তা এখন কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে সবথেকে বড় চিন্তার কারণ। রাশিয়ার গোলায় বিধ্বস্ত খারকিভে অন্তত চার হাজার ভারতীয় ছিলেন। তাঁদের অর্ধেক আগেই ইউক্রেন ছেড়েছেন বা পশ্চিম দিকে সরে গিয়েছেন। তার পরেও ইউক্রেনের পূর্ব দিকের শহরগুলিতে প্রায় হাজার দুয়েক ভারতীয় আটকে রয়েছেন। পুতিন প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে কোনও ভাবে তাঁদের ইউক্রেন থেকে রাশিয়ায় নিয়ে এসে উদ্ধারের পরিকল্পনা চলছে। আজ বিদেশসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা দিল্লিতে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে দেখা করেছেন। ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গেও দেখা করেছেন তিনি। আগেই রাশিয়া ও ইউক্রেন দু’দেশেরই প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শ্রিংলা জানান, মস্কোয় ভারতীয় দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি ও কূটনীতিকদের একটি দলকে রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তে পাঠানো হয়েছে। ভারতীয়দের রাশিয়ায় নিয়ে আসা সম্ভব হলে আগেভাগেই তাঁদের পরিবহণ, খাবার, প্রাথমিক আশ্রয়ের বন্দোবস্ত করে রাখার চেষ্টা হচ্ছে।
রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পরে ইউক্রেনে এখনও ১৫ হাজার ভারতীয় আটকে রয়েছেন। প্রায় চার হাজার আগেই চলে এসেছেন। নয়াদিল্লির তরফে ভারতীয়দের ইউক্রেনের পশ্চিম সীমান্তে সরে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যাতে তাঁদের সীমান্ত পার করিয়ে হাঙ্গেরি, রোমানিয়া, স্লোভাকিয়া ও পোল্যান্ড থেকে বিমানে করে ভারতে ফেরানো সম্ভব হয়। ইউক্রেনের ভারতীয়দের উদ্ধার অভিযান ‘অপারেশন গঙ্গা’-য় শনিবার গভীর রাত থেকে রবিবার পর্যন্ত চারটি বিমান রোমানিয়ার বুখারেস্ট ও হাঙ্গেরির বুদাপেস্ট থেকে ভারতে পৌঁছেছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত আপাতত ১২টি বিমানের সময়সূচি ঠিক হয়েছে। এয়ার ইন্ডিয়ার সাতটি বিমানের সঙ্গে ইন্ডিগো-র দু’টি বিমানও নেওয়া হচ্ছে। বুখারেস্ট থেকে ৯টি, বুদাপেস্ট থেকে ৩টি বিমান ছাড়বে।
বিদেশসচিব শ্রিংলার মতে, প্রাথমিক ভাবে দু’টি সমস্যা দেখা দিয়েছে। এক, ইউক্রেনের লিভিভ থেকে সীমান্ত পেরিয়ে পোল্যান্ডে ঢুকতে গিয়ে ভারতীয়রা সমস্যার মুখে পড়েছেন। লক্ষ লক্ষ বিদেশি নাগরিক, এমনকী ইউক্রেনের নাগরিকরাও ওই সীমান্ত দিয়ে ইউক্রেন থেকে বেরনোর চেষ্টা করছেন। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কনকনে ঠান্ডার মধ্যে সীমান্তে আটকে থাকতে হচ্ছে। সেখানে আটকে থাকা বহু ভারতীয় পড়ুয়া ভিডিয়ো-বার্তায় জানিয়েছেন, তাঁরা ভারতের কোনও প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। ইউক্রেনের সেনা, পুলিশ তাঁদের মারধর করছে। দুই, ইউক্রেনের দক্ষিণ-পূর্বে ওডেসাতেও অনেক ভারতীয় আটকে রয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে নয়াদিল্লির তরফে লিভিভ থেকে ভারতীয়দের আসহরড শহরে সরে আসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে দু’ঘণ্টা অন্তর বুদাপেস্ট পর্যন্ত ট্রেন রয়েছে। সাত-আট ঘণ্টার ট্রেনযাত্রার শেষে বুদাপেস্ট পৌঁছলেই ভারতীয়দের বিমানে করে দেশে ফেরানো সম্ভব হবে। ইউক্রেনের দক্ষিণ-পূর্বে ওডেসা শহরে আটকে থাকা ভারতীয়দের উদ্ধারের জন্য আজ বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর মলডোভার বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। কারণ মলডোভা সীমান্ত থেকে ওডেসা কাছে। মলডোভার মাধ্যমে ভারতীয়রা রোমানিয়া পৌঁছে গেলে তাঁদের বুখারেস্ট থেকে ভারতে নিয়ে আসা যাবে। শ্রিংলা বলেন, “পোল্যান্ড থেকে কূটনীতিকরা ইউক্রেনে ঢুকলেও বেরিয়ে আসতে হচ্ছে। কারণ সেখানে মার্শাল আইন বলবৎ রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়। যে সব শহরে যুদ্ধ চলছে, সেখানে বাইরে বের হওয়া সমস্যা। আমরা যোগাযোগ রাখছি। যখনই সম্ভব হবে, তখনই উপায় বের করা হবে। মূলত কোন এলাকাগুলিতে ভারতীয়রা আটকে রয়েছেন, তার তালিকা রাশিয়া ও ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূতকে জানানো হয়েছে। ওঁরা ভারতীয়দের নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতন বলে জানিয়েছেন। রেড ক্রসের কাছেও এই তালিকা তুলে দেওয়া হয়েছে।”