তাড়াহুড়ো করতে গিয়েই কি নোট নিয়ে ভোগান্তি

নরেন্দ্র মোদী এবং অরুণ জেটলি বলছেন, ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ভারতে নগদ টাকার ব্যবহার কমিয়ে মুদ্রাহীন অর্থনীতি গড়তে সাহায্য করবে।

Advertisement

জয়ন্ত ঘোষাল

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:০৭
Share:

অপেক্ষায়...। ইলাহাবাদের একটি ব্যাঙ্কের বাইরে নোট বদলের লাইন। শনিবার। ছবি: পিটিআই।

নরেন্দ্র মোদী এবং অরুণ জেটলি বলছেন, ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ভারতে নগদ টাকার ব্যবহার কমিয়ে মুদ্রাহীন অর্থনীতি গড়তে সাহায্য করবে। নগদের বদলে চেক, ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড এবং অনলাইন অর্থাৎ ডিজিটাল পেমেন্ট প্রচলনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার কাজ চলছেই। কিন্তু এই নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত সেই কাজটাকে এক ধাক্কায় অনেকটা এগিয়ে দেবে বলে মনে করেন মোদী-জেটলিরা।

Advertisement

তার মানে, ফাস্ট ফরওয়ার্ড। অন্তত রতন ওয়াটাল-এর সেটাই বলার কথা।

রতন ওয়াটাল এখন নীতি আয়োগের মুখ্য উপদেষ্টা। আগে ছিলেন অর্থসচিব। গত অক্টোবর মাসে মোদী তাঁর নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেছেন। লেনদেনের কাজে নগদ টাকার ব্যবহার কমিয়ে ডিজিটাল পেমেন্ট চালু করার পথে কী ভাবে এগোতে হবে, সে বিষয়ে সুপারিশ করাই এই কমিটির দায়িত্ব। রতনের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের এই কমিটির রিপোর্ট দেওয়ার কথা ২০১৭ সালে ১০ অক্টোবরের মধ্যে। কমিটি যে সব সুপারিশ করতে চলেছে, তার মধ্যে সম্ভবত ৫০০ এবং ১০০০ টাকা বাতিল করার প্রস্তাবও থাকত।

Advertisement

কিন্তু তার এগারো মাস আগেই নরেন্দ্র মোদী হঠাৎ করে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের ঘোষণা করে দিলেন। এবং বললেন, এই সিদ্ধান্ত ভারতকে মুদ্রাহীন সমাজ গঠনের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিও বারবার সেই কথাই বলে চলেছেন। কিন্তু দেশ জুড়ে জনতার এত ভোগান্তি দেখে অনেকেই বলছেন, আর একটু রয়েসয়ে এগোনো উচিত ছিল না কি?

রতন ওয়াটাল মনে করেন, ‘এ এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। সমাজবিপ্লবের পথে নিয়ে যাবে দেশকে এই সিদ্ধান্ত। এর পিছনে মোদী সরকারের গভীর আর্থিক দর্শনও আছে। যা ধীরে ধীরে দেশের কালো টাকার সমান্তরাল অর্থনীতিকে অনেকটাই নিশ্চিহ্ন করতে সক্ষম হবে।’ কিন্তু তাঁর কমিটিও স্বীকার করে যে, এখনও ভারতে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ ও পরিকাঠামো তৈরি হয়নি।

পরিকাঠামো এবং মানসিকতা, দুটো নিয়েই সমস্যা আছে। এক দিকে, এখনও যথেষ্ট মানুষের কাছে ব্যাঙ্কই পৌঁছয়নি। মোবাইল থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই তাতে অনলাইন পেমেন্ট করা যায় না— হয় স্মার্টফোনের অভাব, অথবা নেট-সংযোগ অর্থাৎ কানেক্টিভিটির সমস্যা। অন্য দিকে, বহু মানুষ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতেই চান না। প্রধানমন্ত্রী জনধন যোজনা চালু করার পরেও অর্থ মন্ত্রকের অভিজ্ঞতা হল, বারবার বলা সত্ত্বেও অনেকেই ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলতে নারাজ। আবার, এই দেশের মানুষের এখনও প্লাস্টিক বা ইলেক্ট্রনিক মুদ্রা ব্যবহারের কিংবা অনলাইন লেনদেনের অভ্যাস গড়ে ওঠেনি। বিশেষ করে

ছোটখাটো খরচ মানুষ নগদ টাকাতেই করেন। রতন ওয়াটাল কমিটির মতে, সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, এ দেশে এখনও শহরের শতকরা ৬৫ ভাগ এবং গ্রামে শতকরা ৮৫ ভাগ মানুষ বেতন নেন নগদ টাকায়। চেকেও নয়, প্লাস্টিক মানি তো দূর অস্ত্। মাঝারি দোকানদার এবং ব্যবসায়ীরাও অনেকেই চেষ্টা করেন নগদ টাকায় ব্যবসা করতে।

সরকারের মধ্যেও এ নিয়ে প্রশ্ন আছে। প্রশাসনের অনেকেই মনে করছেন, বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্ট পেলে তার ভিত্তিতে আটঘাট বেঁধে ব্যবস্থা নেওয়া যেত। কিন্তু মোদীর ধারণা, জলে ফেলে দিলে তবেই মানুষ সাঁতার শেখে। এবং তিনি বিশ্বাস করেন, এ দেশের নবীন প্রজন্ম তাঁর এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement