দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অতিশী মারলেনা। —ফাইল চিত্র।
দিল্লি সরকারের ওয়াকফ বোর্ডের রিপোর্টকে ঘিরে অশান্তির সাক্ষী থাকল ওয়াকফ বিল নিয়ে গঠিত যৌথ সংসদীয় কমিটি (জেপিসি)-র বৈঠক। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অতিশীর দাবি, দিল্লি সরকারের অনুমতি ছাড়াই জেপিসি-এর কাছে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন ওয়াকফ বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক অশ্বিনী কুমার। ওই রিপোর্ট গ্রাহ্য না করার জন্য জেপিসি-র চেয়ারম্যান জগদম্বিকা পালের কাছে চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানিয়েছেন অতিশী।
ওয়াকফ কমিটির প্রায় প্রতিটি বৈঠকেই কোনও না কোনও কারণে গোলমাল হয়ে চলেছে। গত সপ্তাহে হওয়া শেষ বৈঠকে তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বৈঠক চলাকালীন উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের মধ্যেই জলের বোতল ভেঙে তা কমিটির চেয়ারম্যানের দিকে ছুড়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। যে কারণে তাঁকে এ দিনের অধিবেশনের জন্য সাসপেন্ড করে কমিটি। ফলে আজ বৈঠকে কল্যাণ অনুপস্থিত ছিলেন। কল্যাণের ঘটনায় বিরোধীরা কিছুটা হলেও ব্যাকফুটে পড়ে গিয়েছেন বলেই মনে করছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। দলের বক্তব্য, গোড়া থেকেই ওয়াকফ বিল নিয়ে নীতির প্রশ্নে সরকারকে আক্রমণ শানানোর কৌশল নিয়েছিলেন বিরোধীরা। সেখানে আগের বৈঠকের দিন কল্যাণ অহেতুক আগ্রাসন দেখানোয় বিষয়টি লঘু হয়ে পড়ে। মূল বিষয়টি থেকে নজর ঘোরানোর সুযোগ পেয়ে যায় সরকার পক্ষ।
সে কারণে আজকের বৈঠকে ফের নীতির প্রশ্নে শাসক শিবিরকে আক্রমণ শানানোর কৌশল নিয়ে এগোনোর সিদ্ধান্ত নেন বিরোধীরা। আজ প্রথমার্ধে বিরোধীদের আক্রমণ শানানোর সুযোগ করে দেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অতিশী। অতিশী জেপিসি চেয়ারম্যান জগদম্বিকা পালকে লেখা চিঠিতে জানান, দিল্লি সরকারের অনুমতি ছাড়াই দিল্লি ওয়াকফ বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক অশ্বিনী কুমার জেপিসি-র কাছে একটি রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। যে হেতু রিপোর্টটি দিল্লি সরকারের অনুমতি ছাড়াই জমা পড়েছে তাই সেটিকে গ্রাহ্য না করার আবেদন জানান অতিশী। তিনি চিঠিতে জানিয়েছেন, খুব দ্রুত দিল্লি সরকারের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত একটি রিপোর্ট জেপিসি-র কাছে পেশ করা হবে। কেন এ ভাবে দিল্লি সরকারের অনুমতি ছাড়াই কোনও রিপোর্ট জমা পড়ল তা নিয়ে প্রবল আপত্তি জানান বিরোধী সাংসদেরা। প্রতিবাদে বৈঠক ত্যাগ করে বেরিয়ে আসেন আসাদুদ্দিন ওয়েইসি, সঞ্জয় সিংহ, সৈয়দ নাসের হুসেনের মতো বিরোধী সাংসদেরা। বৈঠকে ওই রিপোর্টটি গ্রাহ্য হবে কি না তা নিয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
দ্বিতীয়ার্ধেও আজ কয়েক জন প্রাক্তন বিচারপতির বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বৈঠকে ফের গোলমাল হয়। সূত্রের মতে, এ দিনের বৈঠকে দিল্লি, হরিয়ানা, পঞ্জাব, উত্তরাখণ্ডের ওয়াকফ বোর্ডের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি ‘কল ফর জাস্টিস’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের বক্তব্য রাখার কথা ছিল। মূলত সুপ্রিম কোর্ট ও হাই কোর্টের বিচারপতিদের নিয়ে গঠিত ওই সংগঠনদের প্রতিনিধিদের এ বিষয়ে বলার কী যোগ্যতা রয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বেশ কিছু বিরোধী সাংসদ। যাতে আপত্তি জানান শাসক দলের সাংসদেরা। সূত্রের মতে, কেন প্রাক্তন বিচারপতিদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে সে নিয়ে সাংসদদের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয় প্রাক্তন বিচারপতিদের একাংশের। সূত্রের মতে, প্রাক্তন বিচারপতিরা পাল্টা বিরোধী সাংসদদের নামে থাকা বিভিন্ন ফৌজদারি অভিযোগ নিয়ে সরব হন। কী ভাবে এক জন সাংসদের বিরুদ্ধে সংসদ চত্বরে দাঁড়িয়ে প্রাক্তন বিচারপতিরা আঙুল তোলেন তা নিয়ে বৈঠকের ভিতরে ও বাইরে সংবাদমাধ্যমের সামনে সরব হন একাধিক বিরোধী সাংসদ।