সুমিতা ভট্টাচার্য পথ। নিজস্ব চিত্র।
অজগাঁয়ের গরিব পরিবারের স্কুলপড়ুয়া মেয়েদের উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখিয়েছেন তাঁরা। প্রতিদানে প্রত্যন্ত জনবসতিতে তিনটি রাস্তার নামকরণ হল তিন কলেজছাত্রীর পরিচয়ে। ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূমের পোটকা ব্লকের জুরি গ্রামে।
সুমিতা ভট্টাচার্য, বৈশাখী গোপ, মণিমালা শিকদার। সাধারণ ঘরের মেয়ে হলেও, গ্রামবাসীদের কাছে তাঁরাই এখন ‘সুপারস্টার’।
কারণও অনন্য। জুরি গ্রামের কোনও মেয়ে এর আগে ক্লাস এইটের গণ্ডি পেরোয়নি। সেখানে অদম্য জেদে সব বাধা সরিয়ে কলেজ পর্যন্ত পৌঁছেছেন সুমিতারা। তারই স্বীকৃতিতে জুরিতে তিন রাস্তার নাম হয়েছে ‘সুমিতা ভট্টাচার্য পথ’, ‘মণিমালা শিকদার পথ’, ‘বৈশাখী গোপ পথ’।
জামশেদপুর থেকে ২৪ কিলোমিটার দূরে পোটকা ব্লক। তারই প্রত্যন্ত গ্রাম জুরি। গ্রামের সব চেয়ে কাছের স্কুলের দূরত্ব ৩ কিলোমিটার। হেঁটে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। ভাল কলেজ জামশেদপুরে। গ্রামের কোনও মেয়ে আগে কলেজের পথে এগোনোর সাহস জোগাড় করতে পারেননি। কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকের পর জুরির ওই তিন তরুণী ভর্তি হন জামশেদপুর উওমেন্স কলেজে। সুমিতা এখন ইতিহাসে এমএ পড়ছেন। বৈশাখীরা পড়ছেন স্নাতক।
জুরি পঞ্চায়েতের প্রধান সাবিত্রী সর্দার বলেন, ‘‘সুমিতারা গ্রামের কিশোরীদের নতুন পথ দেখিয়েছেন। বেশিরভাগ মেয়ে আগে স্কুলে যেত না। তাদেরও কেউ অষ্টম শ্রেণির বেশি পর্যন্ত পড়েনি। সুমিতাদের দেখে পরিস্থিতি বদলেছে।’’ সাবিত্রীদেবী জানান, আপাতত কাগজে রাস্তার নাম লিখে কোনও বাড়ির দেওয়ালে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই কাঠের ব্লকে ওই ছাত্রীদের নাম লেখা হবে।
বাড়ির সামনের রাস্তার সঙ্গে তাঁর নাম জুড়ে যাওয়ায় গর্বিত সুমিতা। তিনি বলেন, ‘‘ঘরে-বাইরে অনেক বাধা পেরিয়ে কলেজে গিয়েছি। গ্রামের অনেকে বলতেন, কলেজে গেলে মেয়েরা বিগড়ে যায়। উচ্চশিক্ষার ইচ্ছা ছিল ছোট থেকে। কারও নিষেধ তা-ই শুনিনি।’’
খবর শুনে খুশি পূর্ব সিংভূমের ডিসি অমিত কুমার। তিনি বলেন, ‘‘ওই পঞ্চায়েত ভাল উদ্যোগ নিয়েছে। মেয়েদের স্বনির্ভর হতে তা উৎসাহ দেবে। সরকারি ভাবেও জুরি গ্রামের ওই সব রাস্তার নাম সুমিতাদেবীদের নামে বদলে দেওয়া হবে।’’