দলের হুইপ মানতে হবে ঋতব্রতকে

ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়কে সংসদে সিপিএমের নির্দেশ মেনেই চলতে হবে। দল থেকে ঋতব্রতকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তটি সিপিএমের তরফ থেকে কৌশলগত কারণেই রাজ্যসভার চেয়ারম্যানকে জানানো হবে না বলে সূত্রের খবর।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:৫১
Share:

বহিষ্কৃত হলেও সাংসদ পদ ছাড়ছেন না। কিন্তু ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়কে সংসদে সিপিএমের নির্দেশ মেনেই চলতে হবে। দল থেকে ঋতব্রতকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তটি সিপিএমের তরফ থেকে কৌশলগত কারণেই রাজ্যসভার চেয়ারম্যানকে জানানো হবে না বলে সূত্রের খবর। সে ক্ষেত্রে ঋতব্রত সংসদে সিপিএমের সদস্য হয়েই থাকবেন। এবং আইন অনুযায়ী, সংসদে পার্টির হুইপ না মানলে তাঁর সাংসদ পদ খারিজ হয়ে যাবে।

Advertisement

রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, ঠিক এই কারণেই এই মুহূর্তে ঋতব্রতর পক্ষে বিজেপি বা অন্য কোনও দলে যোগ দেওয়া মুশকিল। কারণ বিজেপিতে যোগ দিলেও তিনি রাজ্যসভায় সরকারের পক্ষে ভোট দিতে পারবেন না। সিপিএমের ‘হুইপ’ বা নির্দেশ মেনে তাঁকে সরকারের বিরুদ্ধেই ভোট দিতে হবে। কোনও বিলে বিতর্ক বা ভোটাভুটির সময় রাজনৈতিক দলগুলি এই হুইপ জারি করে। দলত্যাগ বিরোধী আইন অনুযায়ী, কেউ হুইপ না মানলে তাঁর সাংসদ পদ খারিজ হয়ে যায়।

মানবেন তিনি হুইপ? ঋতব্রতর জবাব, ‘‘আগে তো হুইপ আসুক। তখন দেখা যাবে।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: নোট-কয়েনের প্রণামী চলবে না এ মন্দিরে

বহিষ্কৃত সাংসদদেরও হুইপ মানার এই নিয়ম নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা ঝুলছে। মামলা করেছিলেন অমর সিংহ। ২০১০-এ প্রথম বার সমাজবাদী পার্টি থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর অমর-জয়াপ্রদা শীর্ষ আদালতে আর্জি জানান, বহিষ্কৃত হয়েও পার্টির হুইপ মেনে চলার নিদান সংবিধান প্রদত্ত ব্যক্তি স্বাধীনতার বিরুদ্ধে। তাঁদের ক্ষেত্রেও সপা-র তরফ থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তটি রাজযসভাকে জানানো হয়নি। গত বছর এই মামলায় সুপ্রিম কোর্ট জানায়, এখনই এ নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই। কারণ তত দিনে অমর সিংহের রাজ্যসভার মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছিল। এর পর অমর ফের সপা থেকে রাজ্যসভার সাংসদ হন এবং ফের বহিষ্কৃতও হন। নতুন করে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি। ঠিক হয়েছে, সাংবিধানিক বেঞ্চে এর শুনানি হবে।

সংবিধান বিশেষজ্ঞদের যুক্তি, নতুন ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত দলত্যাগ বিরোধী আইন নিয়ে ১৯৯৬ সালের সুপ্রিম কোর্টের রায়ই বহাল থাকবে। যে রায় বলছে, কোনও দলের নির্বাচিত বা মনোনীত সাংসদ বহিষ্কারের পরেও ওই দলেরই নিয়ন্ত্রণে থাকবেন। লোকসভার প্রাক্তন সেক্রেটারি জেনারেল পি ডি টি আচারিয়া বলেন, ‘‘হুইপ না মানলে সাংসদ পদ খারিজ হয়ে যাবে।’’

ঋতব্রতর দাবি, আপাতত তিনি কোনও দলের সঙ্গে যুক্ত না হয়েই সাংসদ থাকবেন। কিন্তু তাঁর বিজেপি-ঘনিষ্ঠতা নিয়ে জল্পনা রোজই বাড়ছে। ঋতব্রতর মন্তব্যকে হাতিয়ার করে আজই বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় কেরলের সিপিএম নেতৃত্বকে নিশানা করেছেন। কেরলে আরএসএস-সিপিএমের খুনোখুনির দায় মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের উপর চাপিয়ে ঋতব্রত বলেছিলেন, সিপিএম ক্যাডারদের জঙ্গি প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। কৈলাসের প্রশ্ন, ‘‘ঋতব্রত মানবিকতার কথা বলেছেন। অহিষ্ণুতার অভিযোগ তুলে পুরস্কার ফেরত দেওয়া বুদ্ধিজীবীরা এ বার কী বলবেন?’’ অস্বস্তিতে পড়ে সিপিএমের শীর্ষনেতাদের যুক্তি, এক দিকে ভালই হয়েছে। বহিষ্কারের পরে ঋতব্রত দলের একাংশের নেতা-কর্মীর সহানুভূতি কুড়োনোর চেষ্টা করছিলেন। এ সব মন্তব্যের পরে তা আর হবে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement