National News

লক্ষ্য আইএএস, ক্যানসারকে হারিয়ে সোনার পদক এই দৃষ্টিহীন মেয়ের

সম্পূর্ণ দৃষ্টি কাকে বলে তা জানলই না মেয়েটা। সেই মেয়েই যে একদিন বড় হবে, ক্যানসারের ‘সৌজন্যে’ আরও একটা চোখ হারাবে, যুদ্ধ করতে করতে ফিরবে লড়াইয়ে, প্রথম হবে স্নাতক পরীক্ষায়, না দেখতে পাক- তবু অনুভব করবে বাবা-মায়ের তৃপ্ত হাসি মুখগুলো… কে ভেবেছিল এতটা?

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৭ ১৩:০৯
Share:

পুরস্কারের মঞ্চে ভক্তি ঘাটলে।

বয়স তখন মাত্র ছয় মাস। কিন্তু শিশুর কোমলতাকে যে রেয়াত করে না মারণ রোগ। ওই বয়সেই ক্যানসারে নষ্ট হল ডান চোখ। কী-ই বা বোঝে ওই একরত্তি মেয়ে? জ্ঞান হওয়ার আগেই তো অর্ধেক আকাশটা অন্ধকার। সম্পূর্ণ দৃষ্টি কাকে বলে তা জানলই না মেয়েটা। সেই মেয়েই যে একদিন বড় হবে, ক্যানসারের ‘সৌজন্যে’ আরও একটা চোখ হারাবে, যুদ্ধ করতে করতে ফিরবে লড়াইয়ে, প্রথম হবে স্নাতক পরীক্ষায়, না দেখতে পাক- তবু অনুভব করবে বাবা-মায়ের তৃপ্ত হাসি মুখগুলো… কে ভেবেছিল এতটা?

Advertisement

নাগপুরের ছোট্ট গ্রাম কাটোলের ভক্তি ঘাটলে। ছয় মাস যখন বয়স, ডাক্তাররা জানালেন, তার ডান চোখে রেটিনোব্লাস্টোমা। কোনও ভাবেই বাঁচবে না সেই চোখের দৃষ্টি। অতএব বাদই গেল চোখটা। একটা চোখে যখন সাত বছর ধরে জীবনটা প্রায় গুছিয়ে নিয়েছে ভক্তি, তখনই আরও একটা আঘাত। আবারও ক্যানসার। এ বার বাঁ চোখে। বাবা রমেশ ঘাটলে আর মা সুষমা, আবারও দিশেহারা ছোট্ট মেয়েটাকে নিয়ে। চেন্নাই থেকে হায়দরাবাদ, চলল ছোটাছুটি। একটা, দু’টো নয়, ২৫টা কেমোথেরাপির যন্ত্রণা। তবু হাজার চেষ্টাতেও ধরে রাখা গেল না একমাত্র চোখটিকে। নিকষ অন্ধকারেই ডুবে গেল ভক্তির পৃথিবীটা।

আরও পড়ুন: স্বপ্ন সফলে দিনে পিএইচডি আর রাতে স্বামীর সঙ্গে পরোটার দোকান চালান স্নেহা

Advertisement

অবসাদ আর অবসাদ। গোটা জগতটাকেই শত্রু ভাবতে শুরু করল ভক্তি। ওষুধ খেত না, ডাক্তার দেখাত না, পড়াশোনা ছেড়েই দিয়েছিল এক প্রকার। মনে হত, পালিয়ে যাওয়া যায় না? এর পর জীবনই এক দিন বাঁচার নতুন মন্ত্র দিল। ভক্তিকে যোগ অভ্যাস মণ্ডলে ভর্তি করে দিলেন রমেশ-সুষমা। অন্ধকার পৃথিবীটাতে হঠাৎ যেন এল এক চিলতে আলো। যোগ আর মেডিটেশনের হাত ধরে মূল স্রোতে ফিরল ভক্তি।

আর পিছনে ফিরে তাকায়নি সেই মেয়ে। একুশ বছরের সদ্য তরুণী আজ বলছে, ‘‘পরিবারকে গর্বিত করতে পেরে আমি খুব খুশি।’’

বন্ধুর সঙ্গে ভক্তি (ডানদিক)। ছবি: ফেসবুকের সৌজন্যে

সদ্যই নাগপুর ইউনিভার্সিটি থেকে রাষ্ট্র বিজ্ঞানে প্রথম বর্ষে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন ভক্তি। পেয়েছেন সোনার মেডেলও। কলেজের কনভোকেশন অনুষ্ঠানে তাঁর উজ্জ্বল মুখে ফেলে আসা দিনের গল্প- ‘‘খুব খুব কঠিন ছিল দিনগুলো। নিজেকে অসম্পূর্ণ মনে হত। কিন্তু স্বপ্ন দেখাটা বন্ধ হতে দিইনি। জীবনটা যেমন, তেমন ভাবেই খুব সুন্দর।’’

সাফল্যের বেশিরভাগটাই অবশ্য স্কুলের শিক্ষিকা জিদনাসা কুবদেকে উৎসর্গ করেছেন ভক্তি। জিদনাসা নিজেও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। হাতে ধরিয়ে ভক্তিকে ব্রেইল শেখানো থেকে শুরু কম্পিউটারে প্রশিক্ষণ দেওয়া, সমস্ত কাজেই উৎসাহ দিয়েছেন জিদনাসা।

একদিন ব্রেইল শিখতে ভাল লাগত না ভক্তির। আজ নিজের মেল থেকে সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডলিং, কম্পিউটারে পরীক্ষা দেওয়া- সবেতেই তুখোড় ভক্তি। দশম শ্রেণির পরীক্ষার সময় সহায়ক নিয়েছিল সে। এই পরীক্ষাতে ৯৪ শতাংশ নম্বরও পেয়েছিল। বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের মধ্যে প্রথম হয়েছিল সে। দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় ফের চোখে পড়ার মতো নম্বর। ৮৮ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাশ করে ভক্তি।

রোজই স্বপ্ন দেখে নিজের মতো করে। আলো না থাকলেও প্রাণ আছে সে স্বপ্নে। আছে ভরপুর জীবনীশক্তিও। একান্নবর্তী পরিবার তাঁর কাছে আশীর্বাদ, এটাই মনে করেন ভক্তি ঘাটলে। বড় হয়ে কোন পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে নিজের স্বপ্নকে? ভক্তি জানাল, সে আইএএস অফিসার হতে চায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement