সৃষ্টি: মনোরোগীদের তৈরি করা প্রদীপ ও মোমবাতি। —নিজস্ব চিত্র।
ছোট্ট একফালি ঘরের বারান্দায় বসে এক মনে প্রদীপে রং করে যাচ্ছিলেন নানা বয়সের কিছু মহিলা। পাশেই কয়েক জন আবার নানা ছাঁচের, নানা রঙের নকশা করা মোমবাতি তৈরিতে ব্যস্ত।
রাঁচীর কাঁকের ‘ডেভিস ইনস্টিটিউট অব নিউরোসাইক্রি’-র বাসিন্দা ওঁরা। গত বছর দীপাবলিতেই উদ্যোগটা নেওয়া হয়েছিল হাসপাতালের পক্ষ থেকে। নিজেদের তৈরি করা শৌখিন মোমবাতি আর প্রদীপের আলোয় বাড়ি সাজিয়েছিলেন ওঁরা। এ বার তাঁদের তৈরি করা প্রদীপ-মোমবাতিতে সাজবে আরও বহু মানুষের বাড়ি। শুধু তা-ই নয়, তাঁদের তৈরি মোমবাতি ও প্রদীপ বিক্রি করা হচ্ছে বাজারে। কিনছেন সাধারণ মানুষ। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঠিক করেছেন, আবাসিকদের প্রত্যেকের বাড়িতেই দীপাবলির আগে পাঠানো হবে কিছু প্রদীপ, মোমবাতি। দীপাবলির রাতে ওঁদের উজ্জ্বল উপস্থিতির জানান দেবে ওই আলোই।
আরও পড়ুন:গ্রামে মন দিন মোদী, চায় সঙ্ঘ
তীব্র অবসাদ নিয়ে মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন ডাল্টনগঞ্জের মধ্যবয়স্কা এক মহিলা চিকিৎসক। কেউই জানতেন না যে তাঁর মনে লুকিয়ে আছেন এক চিত্রকরও। মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার পর থেকে এখানে ভর্তি রাঁচীর প্রাথমিক স্কুলের এক শিক্ষিকা। কেউই জানতেন না তাঁর হাতের জাদু। নিমেষে তৈরি করে ফেলছেন অসাধারণ সব ডিজাইনার মোমবাতি।
সংস্থার ডিরেক্টর হেসেল ডেভিস বলেন, ‘‘ডালটনগঞ্জের ওই চিকিৎসক নিপুণ দক্ষতায় প্রদীপের গায়ে ফুটিয়ে তুলছেন নানা নকশা। ওদের শিখিয়ে-পড়িয়ে নেওয়ার জন্য এক জন প্রশিক্ষক রয়েছেন ঠিকই, কিন্তু ওঁরা তাঁকেও ছাপিয়ে যাচ্ছেন।’’
সামনেই দীপাবলি, ব্যস্ততা তাই তুঙ্গে। ডাল্টনগঞ্জের ওই চিকিৎসক এখন অনেকটাই সুস্থ। তবে এ বছরও দীপাবলিটা এখানেই কাটাতে হবে। তাঁর কথায়, ‘‘ছোটবেলায় খুব আঁকতে ভালবাসতাম। কিন্তু পরে পড়াশোনার চাপে, কাজের চাপে সব ভুলে গিয়েছিলাম। এখন প্রদীপে রং করতে গিয়ে দেখছি, আসলে কিছুই ভুলিনি। সব মনে আছে।’’ সেই মনের আলোতেই উজ্জ্বল হয়ে উঠবে দীপাবলির রাত।