‘খাবারের ধর্ম নেই, খাবারই ধর্ম’

অনলাইনে খাবার আনানোর সংস্থা ‌জ়োম্যাটো-তে গত কাল সন্ধ্যায় খাবারের অর্ডার দিয়েছিলেন অমিত। এর পরে অ্যাপে দেখেন, তাঁর খাবার নিয়ে আসছেন মুসলিম যুবক ফৈয়াজ

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৯ ০৩:৩৬
Share:

গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।

খাবার আসবে কখন? রেস্তরাঁয় অর্ডার দেওয়ার পরে সচরাচর মনে প্রথম প্রশ্ন আসে এটাই। কিন্তু মধ্যপ্রদেশের জবলপুরের বাসিন্দা অমিত শুক্লের মনে প্রশ্ন জেগেছিল, খাবার যিনি আনবেন, সেই ‘ডেলিভারি বয়’-এর ধর্ম কী!

Advertisement

অনলাইনে খাবার আনানোর সংস্থা ‌জ়োম্যাটো-তে গত কাল সন্ধ্যায় খাবারের অর্ডার দিয়েছিলেন অমিত। এর পরে অ্যাপে দেখেন, তাঁর খাবার নিয়ে আসছেন মুসলিম যুবক ফৈয়াজ। তিনি ‘ডেলিভারি বয়’ পাল্টে দেওয়ার অনুরোধ জানান ‌জ়োম্যাটোর কাছে। অনুরোধ রাখেনি জ়োম্যাটো। উল্টে টুইট করে তারা জানিয়েছে, ‘খাবারের কোনও ধর্ম হয় না। খাবারই ধর্ম।’ ‌জ়োম্যাটো কর্তৃপক্ষের এই অবস্থান বাহবা কুড়িয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

‘@নমো_সরকার’ টুইটার হ্যান্ডল থেকে অমিত লিখেছেন, জ়োম্যাটো টাকা ফেরত না-দেওয়া সত্ত্বেও অর্ডার বাতিল করে দিয়েছেন তিনি। অ্যাপটিকেও উড়িয়ে দিয়েছেন। যদিও তাতে কান না-দিয়ে খোদ জ়োম্যাটোর প্রতিষ্ঠাতা দীপিন্দ্র গয়াল আজ টুইট করেছেন, ‘ভারতের বৈচিত্রের আদর্শে আমরা গর্বিত। আমাদের মূল্যবোধের পরিপন্থী কিছু করার বদলে ব্যবসায়িক ক্ষতি হলেও দুঃখ নেই।’ দীপিন্দ্রর এই টুইটেরও ভূয়সী প্রশংসা করেছেন নেটিজ়েনরা। জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা লিখেছেন ‘শ্রদ্ধা রইল। এই সংস্থাকে ভালবাসার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।’

Advertisement

অমিতের টুইটের ভাষা দেখে অনেকেই বলছেন, বিষয়টি উদ্বেগের। দেশে ক্রমশ বাড়ছে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা। গত কাল অমিত প্রথমে লেখেন, ‘‌জ়োম্যাটো আমার খাবার আনতে দিয়েছে এক অ-হিন্দু রাইডার (ডেলিভারি বয়)-কে। ওরা বলেছে, অন্য লোক দেওয়া যাবে না, অর্ডার বাতিল করলেও টাকা ফেরত দিতে পারবে না। আমি ওদের বলেছি, আমি যে খাবার নিতে চাই না, তা নিতে আমাকে আপনারা জোর করতে পারেন না। কাজেই বাতিল করে দিন।’

অমিতেরই পোস্ট করা স্ক্রিনশট থেকে জানা যাচ্ছে, তাঁর খাবার আনছিলেন ফৈয়াজ নামে এক যুবক। অমিত আরও লিখেছেন, ‘জ়োম্যাটো আমাদের বাধ্য করছে এমন লোকেদের থেকে খাবার নিতে, যাদের আমরা চাইছি না। কিন্তু তারা সহযোগিতা করছে না, টাকাও ফেরত দিচ্ছে না। আমি অ্যাপটা উড়িয়ে দিয়েছি। আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করছি।’ এখানেই প্রশ্ন, ভারতীয় আইনে যে অস্পৃশ্যতার সাজা হিসেবে জেল, জরিমানা অথবা একসঙ্গে দু’টোরই বন্দোবস্ত রয়েছে, আইনজীবীরা কি তা বলবেন অমিতকে? আবার একই সঙ্গে এই আশঙ্কাও ঘুরছে, এই বিতর্কের সুযোগে নিঃশব্দে সংখ্যালঘু ডেলিভারি বয়দের চাকরিতে টান পড়বে না তো? বস্তুত, প্রবল সমালোচনার মধ্যেই অভিরাল শর্মা নামে এক এক ব্যক্তি অমিতের পাশে দাঁড়িয়ে টুইট করেছেন, ‘মুসলিম ডেলিভারি বয় খাবার নিয়ে এলে অর্ডার বাতিলের মধ্যে অন্যায় কী আছে?’

যে সরকারের নামে অমিতের টুইট-অ্যাকাউন্ট, সেই মোদী সরকারের মন্ত্রী রামদাস আটওয়ালে যদিও ঘটনাটি শুনে বলেছেন, ‘‘দেশের ঐক্যের পক্ষে বিপজ্জনক।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement