Bangalore

Karnataka: মুসলিম ব্যবসায়ীর থেকে কলা কেনা হচ্ছে! উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের রোষে অনন্তপদ্মনাভ মন্দির

সম্প্রতি চাউর করা হয় যে, কলা সরবরাহকারী এক জন মুসলিম ব্যবসায়ী। এই নিয়ে প্রতিবাদে নামে কয়েকটি উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০২২ ০৭:১৬
Share:

প্রতীকী ছবি।

হিন্দু মন্দিরের জন্য মুসলিম ব্যবসায়ীর থেকে কেন কলা কেনা হচ্ছে, তাই নিয়ে আসরে নামল উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা! কর্নাটকের মেঙ্গালুরুর উপকণ্ঠে অনন্তপদ্মনাভ মন্দিরের ঘটনা। কলা সরবরাহ নিয়ে এই বিতর্কে কার্যত চাপে পড়ে মন্দির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, চলতি মাসে চুক্তি শেষ হলেই এই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে!

Advertisement

গত বছর মন্দির কর্তৃপক্ষ কলা সরবরাহের জন্য ব্যবসায়ীদের থেকে আবেদনপত্র আহ্বান করেছিলেন। সেই সূত্রেই ১ জুলাই ২০২১ থেকে ৩০ জুন ২০২২ পর্যন্ত কলা সরবরাহের দায়িত্ব দেওয়া হয় ওই ব্যবসায়ীকে।

সম্প্রতি চাউর করা হয় যে, কলা সরবরাহকারী এক জন মুসলিম ব্যবসায়ী। এই নিয়ে প্রতিবাদে নামে কয়েকটি উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন।

Advertisement

মন্দির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, কলা সরবরাহের জন্য ব্যবসায়ীদের কাছে আবেদনপত্রের আহ্বান জানানো হয়েছিল। চার ব্যবসায়ী আবেদন করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে ওই মুসলিম ব্যবসায়ীই সব চেয়ে কম দামে কলা সরবরাহের আশ্বাস দেন। নিয়ম অনুযায়ীই গত বছর ওই ব্যবসায়ীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

তবে সম্প্রতি ওই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে প্রতিবাদ জানায় কয়েকটি উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। মন্দিরের এগ্‌জ়িকিউটিভ অফিসার জগদীশ জানিয়েছেন, আগামী ৩০ জুন ওই ব্যবসায়ীর সঙ্গে চুক্তি শেষ হবে। তার পরেই এই বিষয়টির সমাধান করা হবে। মন্দির কর্তৃপক্ষের আশ্বাস পেয়ে আপাতত প্রতিবাদ-বিক্ষোভ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওই সংগঠনগুলি।

তবে এই প্রতিবাদ-বিক্ষোভের পিছনে রাজনৈতিক ইন্ধন রয়েছে কি না, সেই নিয়েও শুরু হয়েছে আলোচনা। বিরোধীদের বক্তব্য, আগামী বছর কর্নাটকে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে ধর্মীয় বিভাজনের মাধ্যমে মেরুকরণের উদ্দেশ্যেই কলা সরবরাহ নিয়ে হইচই করা হচ্ছে। তাঁদের বক্তব্য, প্রায় এক বছর ধরে ওই মন্দিরে কলা সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছেন ওই মুসলিম ব্যবসায়ী। ঠিক চুক্তি শেষের সময়েই কেন এ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হচ্ছে? এর পাশাপাশি অনেকের বক্তব্য, মন্দির কর্তৃপক্ষ যেখানে আপত্তি করছেন না, সেখানে কয়েকটি সংগঠন কেন আপত্তি জানিয়ে এত নড়েচড়ে বসল? এমন হলে ভিন্ ধর্মের ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে সমস্ত জিনিস ব্যবহার করা প্রয়োজন। তা করা কি আদৌ সম্ভব? সেই ক্ষেত্রে শুধু ব্যবসায়ীর ধর্ম নয়, কী ভাবে পুজোপাঠ এবং মন্দিরের প্রয়োজনীয় অন্যান্য সরঞ্জাম আনা হচ্ছে, তাতে ভিন্ ধর্মের কেউ জড়িত কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা উচিত। তেমনটা কি আদৌ সম্ভব? প্রশ্ন সাধারণ নাগরিকদের একাংশের।

এর পাশাপাশিই অনেকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন, উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা ভোটের সময়ে শিক্ষাঙ্গনে হিজাব পরায় নিষেধাজ্ঞা নিয়ে যে তুমুল বিতর্ক তৈরি হয়েছিল, ভোট মিটতেই থিতিয়ে গিয়েছে সেই বিতর্কও। তেমন ভাবেই মন্দিরে কলা সরবরাহ নিয়ে বিতর্কেও কোনও রাজনৈতিক যোগসূত্র আছে কি না, উঠছে প্রশ্ন। বিরোধীদের অভিযোগ, এই কর্নাটকেই দুর্নীতি আকাশছোঁয়া। কংগ্রেস নেতারা বলছেন, রাজ্য সরকারের এক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ৪০ শতাংশ কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ ওঠার পরে সেই ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়। অথচ তাঁর যথাযথ তদন্ত হয়নি। অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করে না রাজ্য সরকার। প্রধানমন্ত্রীর সফরের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ৬ কোটি টাকার রাস্তা খারাপ হয়ে গেলেও তা নিয়ে কারও ভ্রূক্ষেপ নেই। অথচ মন্দিরে কলা বিক্রি নিয়ে প্রতিবাদ করা হচ্ছে। কংগ্রেস নেতারা এই বিতর্কের ঘটনায় সরাসরি সরকারি মদতের অভিযোগ তুলেছেন। তাঁদের বক্তব্য, উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা সরকারি মদত পাচ্ছে বলেই মাথাচাড়া দিচ্ছে। মূলত মেরুকরণের লক্ষ্যেই উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের মদত দেওয়া হচ্ছে। এর পাশাপাশি অগ্নিপথের মতো প্রকল্পের প্রতিবাদে যখন দেশ উত্তাল, মূল্যবৃদ্ধির জেরে নাকাল সাধারণ নাগরিক সেই সময়ে ইচ্ছাকৃত ভাবেই উন্নয়নের বিষয়টিকে এড়িয়ে যেতে ধর্মীয় বিতর্ককে মদত দেওয়া হচ্ছে।

সম্প্রতি কর্নাটকের উদুপি, দক্ষিণ কন্নড় এবং শিবমোগার বেশ কিছু জায়গায় মন্দিরের বাইরে পোস্টারে লেখা ছিল, হিন্দু উৎসবের সময়ে মন্দিরের বাইরের মেলায় দোকান মুসলিমরা দোকান দিতে পারবেন না। মন্দিরে মুসলিম ব্যবসায়ীর কলা বিক্রি নিয়ে বিতর্কে অনেকেই মনে করিয়ে দিয়েছেন সেই ঘটনার কথাও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement