স্বস্তিতে বিজেপি শিবির। ছবি: পিটিআই।
আসন এবং ভোটের হেরফের হল। কিন্তু উত্তর-পূর্বের তিন রাজ্যে সার্বিক ভাবে রাজনৈতিক চিত্রে পরিবর্তন এল না। দুই রাজ্যে ক্ষমতা ধরে রাখতে পেরে স্বস্তিতে বিজেপি শিবির।
গত বারের চেয়ে আসন এবং প্রাপ্ত ভোটের হার কমে গেলেও একক ভাবেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ত্রিপুরায় সরকারে ফিরছে বিজেপি। জোটসঙ্গী এনডিপিপি-কে নিয়ে তারা ক্ষমতা ধরে রাখতে পারছে নাগাল্যান্ডেও। মেঘালয়ে সরকার গঠনের জায়গায় চলে গিয়েছে কনরাড সাংমার এনপিপি এবং ইউডিপি। সংখ্যার বিচারে বিজেপিকে নিয়ে বা বাইরে রেখেও সরকার গড়তে পারে তারা। কংগ্রেস নেমে গিয়েছে পাঁচ আসনে। ত্রিপুরায় খাতা খুলতে ব্যর্থ হলেও মেঘালয়ে পাঁচটি আসন জিতে নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। মেঘালয়ের মানুষকে ধন্যবাদ। কলকাতায় তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘ছ’মাস আগে আমরা সেখানে শুরু করেছিলাম, ১৫% ভোট পেয়েছি। জাতীয় দলের তকমা পেতে সাহায্য করবে। প্রধান বিরোধী হিসাবে কাজ করব।’’
ফলাফল ঘোষনার পরে বৃহস্পতিবার উত্তর-পূর্বের তিন রাজ্যেরই জনতা এবং বিজেপির নেতা-কর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। টুইটে ত্রিপুরার জন্য তাঁর বার্তা, ‘শান্তি ও স্থিতিশীলতার পক্ষে এই ভোট। রাজ্যকে বৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে বিজেপি কাজ করে যাবে। তৃণমূল স্তরে দলের নেতা-কর্মীদের যে চমকপ্রদ প্রয়াস দেখা গিয়েছে, তাতে তাঁদের জন্য আমি গর্বিত’। নাগাল্যান্ডে এনডিপিপি-বিজেপি জোটকে আরও এক বার সুযোগ দেওয়ার জন্য মানুষকে ধন্যবাদ জানিয়ে ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকারের কাজের লক্ষ্যের কথা ফের বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি, মেঘালয়ে উন্নয়নের লক্ষ্যে কঠোর পরিশ্রম চলবে বলে জানিয়েছেন। তিন রাজ্যের মানুষ এবং দলীয় কর্মীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎ প্রকাশ নড্ডাও।
তিন রাজ্যের মধ্যে বেশি উত্তেজনা ছিল ত্রিপুরা নিয়েই। গত কয়েকটি নির্বাচনে অশান্তি এবং বেনিয়মের বিস্তর অভিযোগে পরে এ বার বিধানসভা ভোট মিটেছিল শান্তিপূর্ণ ভাবে, ভোটও পড়েছিল বিপুল। পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে মানুষের ওই ভোট দেওয়ার উৎসাহ কীসের ইঙ্গিত, তা নিয়ে শাসক ও বিরোধী শিবিরের নানা দাবি ছিল। ভোট-যন্ত্র খোলার পরে এ দিন দেখা গেল, গত বারের ৩৮ থেকে কমে শাসক বিজেপি পেয়েছে ৩২টি আসন। তাদের জোটসঙ্গী আইপিএফটি-র গত বারের ৬ থেকে কমে এ বার ঝুলিতে এসেছে একটি আসন। মোট ৬০ আসনের বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য দরকার ৩১ আসন।
ত্রিপুরায় এ বার উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল বাম ও কংগ্রেসের আসন সমঝোতা। দিনের শেষে সিপিএম পেয়েছে ১১টি আসন, যা আগে ছিল ১৬। আর কংগ্রেস গত বারের শূন্য থেকে বেড়ে তিন হয়েছে। দু’বছর আগে তৈরি হওয়া দল তিপ্রা মথা ১৩টি আসন জিতে বিজেপির পরে দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হয়েছে। দিক পরিবর্তন না করলে বিধানসভায় প্রদ্যোৎ কিশোর দেববর্মার মথারই প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদা পাওয়ার কথা।
তবে তাৎপূর্যপূর্ণ ভাবে শাসক বিজেপির চেয়ে অ-বিজেপি দলগুলির প্রাপ্ত ভোটের হার বেশি ত্রিপুরায়। এখানে বিজেপি পেয়েছে ৩৯% ভোট। সঙ্গে আইপিএফটি-র ভোট যোগ হলে তা দাঁড়ায় ৪০%-এ। সিপিএমের ২৪.৬২%-সহ বামফ্রন্টের ভোট এবং কংগ্রেসের ৮.৫৬% ধরে হচ্ছে প্রায় ৩৬%। এ ছাড়াও মথা পেয়েছে প্রায় ২১% ভোট। ভোটের পরিসংখ্যান বলছে, বেশ কিছু কেন্দ্রেই বিজেপি প্রার্থীরা অল্প ব্যবধানে জিতেছেন এবং সেখানে বাম বা কংগ্রেসের সঙ্গে মথার পাওয়া ভোট এক জায়গায় এলে বিজেপিকে হারতে হত। অর্থাৎ বিরোধী ভোট বিভাজনের ফায়দা শাসক দল পেয়েছে।
এই ফলাফল সামনে রেখেই সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির দাবি, ‘‘সামান্য ব্যবধানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে বিজেপি। ভোটের আগে বিরোধী দল এবং গণতন্ত্রের উপরে যে ভাবে হামলা হয়েছিল, তার পরেও মানুষ দৃঢ়় প্রত্যয়ে ভোট দিতে গিয়েছিলেন, এটাই গণতন্ত্রের জয়। পেশিবল, প্রশাসন এবং অর্থশক্তিকে ব্যবহার করে বিজেপি সব রকম চেষ্টা করেছে গণতান্ত্রিক পরিবেশকে প্রভাবিত করার। তার মধ্যেও যে ভাবে সাধারণ মানুষ এবং বাম কর্মী-সমর্থকেরা লড়াই করেছেন, তা ভবিষ্যতে রসদ জোগাবে।’’ মানুষের পাশে থেকে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন সিপিএমের ত্রিপুরা রাজ্য নেতৃত্বও।
জয়ের পরে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা অবশ্য এ বারের শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে অভিহিত করেছেন। তাঁর মতে, উত্তর-পূর্বের দুয়ার হিসেবে ত্রিপুরার যোগাযোগ ও অন্যান্য ব্যবস্থার উন্নতির জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদী যে ভাবে সক্রিয় হয়েছেন, তারই ফল বিজেপি ভোটে পেয়েছে। সেই সঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রীর আবেদন, ‘‘এই আনন্দ যেন কারও কাছে নিরানন্দের কারণ না হয়। আমরা অহিংসায় বিশ্বাসী। সব দলের নেতা-কর্মীদের কাছে আবেদন, শান্তি বজায় রাখুন।’’