প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা। —ফাইল চিত্র।
ম্যাট্রিকে উনিশটি বার ঘায়েল হয়ে থেমে গিয়েছিল গঙ্গারাম। কবিতার গঙ্গারামের চেয়ে বাস্তবের কে পদ্মরাজনের অধ্যবসায় ঢের বেশি! এখনও পর্যন্ত ২৪৪ বার ঘায়েল হয়েও তিনি থামছেন না!
তামিলনাড়ুর কোয়ম্বত্তূরের কাছে মেত্তুরে গাড়ির টায়ার-টিউব সারাই করার দোকান চালান পদ্মরাজন। হোমিয়োপ্যাথি পড়ে অল্প বয়সে রোগী দেখতেন। পসার জমেনি। টায়ারের দোকান চালিয়েই এখন দিন চলে। তবে পেশা বদলালেও নেশা বদলায়নি! দেশের কোথাও নামী-দামী ব্যক্তিত্বেরা প্রার্থী হলে পদ্মরাজন সেখানে গিয়ে ভোটে দাঁড়ান। ভোট পান না। কিন্তু আনন্দ পান। কেরলের ওয়েনাড়ের জেলা সদর কালপেট্টা রবিবার থেকে আপাতত তাঁর ঠিকানা। ওয়েনাড় লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরার বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী তিনি। আগে প্রিয়ঙ্কার দাদা রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধেও প্রার্থী হয়েছিলেন ৬৫ বছরের এই ভোট-পাগল মানুষটি।
পদ্মরাজনের এই ভোটে দাঁড়ানোর শখের সূচনা চার দশক আগে। শুরু হয়েছিল ১৯৮৮ সালে। প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পি ভি নরসিংহ রাও, অটলবিহারী বাজপেয়ী থেকে শুরু করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তথা গুজরাতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, তামিলনাড়ুর প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা— সকলের বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়ানো হয়ে গিয়েছে। নরসিংহ রাওয়ের যে বার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের স্বপ্ন দেখছিলেন অন্ধ্রপ্রদেশের কংগ্রেস কর্মীরা, সে বার ওই ভাবনায় জল ঢালতে হাজির হয়ে গিয়েছিলেন পদ্মরাজন। মনোনয়ন পত্র গৃহীত হওয়ার পরে তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে কয়েক দিন পরে জঙ্গলে ছেড়ে দিয়েছিলেন কংগ্রেস কর্মীরা! ‘‘তবু আমি ৫০০ ভোট পেয়েছিলাম! আমার আর কী চাই!’’ সানন্দেই বলেন পদ্মরাজন। তাঁর পরিচিত জনেরা তামিলে তাঁর নাম দিয়েছেন ‘তারতাল মান্নান’। যার অর্থ ‘নির্বাচনের রাজা’!
পেশায় সামান্য, ‘ভোটের রাজা’ তাঁর শখ মেটাতে গিয়ে এখনও পর্যন্ত গচ্চা দিয়েছেন বিপুল টাকা! বিধানসভা, লোকসভা মিলে ২৪৪ বার ভোটে লড়েছেন এবং প্রতি বারই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। এখন বিধানসভা নির্বাচনে ১০ হাজার এবং লোকসভা নির্বাচনে ২৫ হাজার টাকা জামানত হিসেবে জমা রাখতে হয় প্রার্থী হলে। পদ্মরাজনের দাবি, ‘‘জামানতের টাকা এবং কাগজপত্র তৈরি, প্রচার-সহ নানা জিনিস মিলিয়ে এত দিনে কোটিখানেক টাকা হয়তো খরচ হয়ে গিয়েছে। অনেকে পাগল বলে, কেউ বলে জোকার! কিন্তু ভোটে লড়া তো অধিকার! আমাদের মতো লোকজন নানা কেন্দ্রে গিয়ে প্রার্থী হত বলেই নির্বাচনের আইন বদলে এখন আর একসঙ্গে দু’টো কেন্দ্রের বেশি লড়া যায় না।’’
ওয়েনাড়ের কংগ্রেস কর্মী আপ্পাচান বলছেন, ‘‘একটা নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে শূন্য ভোট পেয়েছিলেন! ভোটে এসে প্রার্থী হয়ে যান, লোকজনের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে কথা বলেন। এটাই ওঁর প্রচার। সব চেয়ে বেশি বার প্রতিন্দ্বন্দ্বিতা করার জন্য এখন রেকর্ড বইয়ে নাম উঠে গিয়েছে। এই নেশার পাগলামি উনি চালিয়ে যাচ্ছেন!’’ পদ্মরাজনের কথায়, ‘‘মানুষের কাছে যাই, সুখ-দুঃখের গল্প ভাগ করে নিই। এটাই প্রাপ্তি। ভোট দিলে দিল, না-দিলে দিল না! আমার বন্ধুদেরও দেখেছি ভোট ‘নষ্ট’ করতে চায় না।’’
এই নেশা কত দিন তাড়িয়ে বেড়াবে? কেরলের কান্নুরে পায়ান্নুরের আদি বাসিন্দা ছিলেন যাঁর দাদু, সবরীমালার ‘আয়াপ্পা স্বামী’র ভক্ত সেই ‘তারতাল মান্নান’ মনে করেন, ‘‘মৃত্যুর পরে কিছু তো সঙ্গে যাবে না। এই ভোটের জীবন বেশ লাগে। যত দিন আছে, আনন্দ পেয়ে বাঁচতে চাই!’’