নরেন্দ্র মোদী ও রাহুল গাঁধী।
দীর্ঘ ১৩৪ বছরের আইনি লড়াইয়ে ইতি। শনিবার অযোধ্যা বিতর্ক নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়ের পর মামলাকারী সব পক্ষ থেকে রাজনৈতিক নেতা সকলের কথাতেই উঠে এসেছে শান্তি বজায় রাখার আবেদন।
অযোধ্যা নিয়ে কী রায় দিতে পারে সুপ্রিম কোর্ট, তা নিয়ে দেশ জুড়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। এই আবহেই টুইট করে দেশবাসীকে শান্তি রক্ষার বার্তা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। শনিবার করতারপুর করিডোর উদ্বোধনে যান নরেন্দ্র মোদী। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর টুইটে প্রতিক্রিয়া দেন তিনি। লেখেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট অযোধ্যা নিয়ে রায় ঘোষণা করেছে। এই রায়কে কারও জয় বা কারও পরাজয় হিসাবে দেখা উচিত নয়। রামভক্তি হোক বা রহিমভক্তি, এই সময় আমাদের সকলের ভারত ভক্তির চেতনাকে শক্তিশালী করা উচিত। দেশবাসীর কাছে শান্তি, সম্প্রীতি ও ঐক্য বজায় রাখার জন্য আবেদন করছি।’
শীর্ষ আদালতের রায়ের পর প্রতিক্রিয়া দিয়েছিল কংগ্রেস। সাংবাদিক বৈঠক করে রায়কে স্বাগত জানান দলের মুখপাত্র রণদীপ সিং সূরজেওয়ালা। এর কিছু ক্ষণের মধ্যে টুইট করে সম্প্রীতি রক্ষার বার্তা দেন রাহুল গাঁধীও। লেখেন, সুপ্রিম কোর্ট অযোধ্যা ইস্যুতে রায় ঘোষণা করেছে। আদালতের এই সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে আমাদের সকলকে পারস্পরিক সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে। এই সময় আমাদের সকল ভারতীয়দের কাছে ভ্রাতৃত্ব, বিশ্বাস এবং ভালবাসার সময়।’
আরও পড়ুন: সুপ্রিম রায়, অযোধ্যার বিতর্কিত জমিতে রামমন্দির হবে, মসজিদ বিকল্প জায়গায়
শীর্ষ আদালত রায়ে বলেছে, অযোধ্যার বিতর্কিত জমিতে ট্রাস্টের তত্ত্বাবধানে মন্দির তৈরি হবে। বিকল্প পাঁচ একর জমি পাবে মুসলিমদের পক্ষের ‘সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড’। এই মামলারই অন্যতম পক্ষ নির্মোহী আখড়া। আখড়ার তরফে সুপ্রিম রায়কে স্বাগত জানানো হয়েছে। কিন্তু, এই রায়ে খুশি নয় সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড। তাদের আইনজীবী জাফরাইব জিলানি বলেন, ‘‘আমরা রায়কে সম্মান জানাই। কিন্তু, এতে আমরা সন্তুষ্ট নই। আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে চিন্তা ভাবনা করব।’’ তবে এ নিয়ে তাঁরা যে কোনওরকম বিক্ষোভ বা প্রতিবাদ করবেন না বলেও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন। তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন এআইএমএম প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়াইসি। এ দিন সাংবাদিক বৈঠক বৈঠক করে তিনি বলেন, ‘‘আদালত মেনে নিয়েছে যে, পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বিভাগের রিপোর্টে বলা হয়েছে ওখানে মন্দির ছিল না। রায় দেওয়ার ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট যে ১৪২ আর্টিকলের ব্যবহার করেছে তাতে আমরা সন্তুষ্ট নই। এই রায় সৌভ্রাতৃত্বের নয়।’’
আরও পড়ুন: অযোধ্যা: ৫০০ বছরের টানাপড়েন, ১৩৪ বছরের আইনি লড়াই, দেখে নিন এক ঝলকে
রায়ের পর, দেশ জুড়ে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছেন রাজনৈতিক নেতা থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সকলেই। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ বলেন, ‘‘এটা একটা ঐতিহাসিক রায়। জন সাধারণকে শান্তি বজায় রাখার আবেদন করছি।’’ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী বলেন, ‘‘প্রত্যেকের এই রায় মেনে নেওয়া উচিত এবং শান্তি বজায় রাখা উচিত।’’ প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারও। বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের রায়কে প্রত্যেকের স্বাগত জানানো উচিত। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার ক্ষেত্রে এই রায় উপযুক্ত। এর পরে এই ইস্যুতে আর বিতর্ক থাকা উচিত নয়। এটাই আমি প্রত্যেকের কাছে আবেদন করতে চাই।’’
আরও পড়ুন: অযোধ্যায় মন্দির-মসজিদ বিতর্ক
অযোধ্যা জমি বিতর্কের মধ্যস্থতাকারী হিসাবে নিযুক্ত হয়েছিলেন শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর। সুপ্রিম কোর্টের এই রায় নিয়ে এ দিন রবিশঙ্কর বলেন, ‘‘এটা একটি ঐতিহাসিক রায়, আমি রায়কে স্বাগত জানাই। এই মামলা অনেক দীর্ঘ সময় ধরে চলছিল এবং শেষ পর্যন্ত এটার পরিসমাপ্তি ঘটল। সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখা উচিত।’’