গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
নোট বাতিলের বিরুদ্ধে ছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। আর্থিক বৃদ্ধির উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে সতর্কও করেছিলেন শীর্ষ ব্যাঙ্কের কর্মকর্তারা। কিন্তু সে সব না শুনে রাতারাতি ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট বাতিলের ঘোষণা করে দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তথ্য জানার অধিকার (আরটিআই) আইনে এক ব্যক্তির প্রশ্নের উত্তরে খোদ রিজার্ভ ব্যাঙ্কই এ কথা জানিয়েছে। এমনকি, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পরিচালন সমিতির অনুমোদন ছাড়াই ২০১৬-র ৮ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী নোট বাতিলের ঘোষণা করে দেন বলেও জানিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
আরটিআই-এর সূত্রেই জানা গিয়েছে, মোদীর নোট বাতিলের ঘোষণার দিন আড়াই ঘণ্টা আগেই বৈঠকে বসেছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পরিচালন বোর্ড। নোট বাতিলে সরকারকে অনুমোদন দেওয়া হবে কি না, তা নিয়েই ওই বৈঠকে আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু সেই বৈঠকের সিদ্ধান্ত সরকারকে জানানোর আগে এবং অনুমোদনের অপেক্ষা না করেই নোট বাতিলের ঘোষণা করে দেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। ১০০০ এবং ৫০০ টাকার নোট বাতিলের জেরে বাজার থেকে প্রায় ৮৬ শতাংশ নগদ বাতিল হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ সপ্তাহ পর ১৬ ডিসেম্বর নোট বাতিলের অনুমতি দিতে বাধ্য হয় আরবিআই।
সরকারের যুক্তি ছিল, বাজারে প্রচুর কালো টাকা জমেছে। নোট বাতিল করলে সেই টাকা আর ব্যাঙ্কে ফেরত আসবে না। অর্থাৎ কালো টাকা বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু আরবিআই যুক্তি দিয়েছিল, কালো টাকার খুব সামান্য পরিমাণ নগদে জমিয়ে রাখা হয়। বরং সিংহভাগই জমানো হয় সম্পদে— অর্থাৎ সোনা, জমি-বাড়ি বা অন্য কোনও উপায়ে। ফলে নোট বাতিল করলে কালো টাকার উপর তার প্রভাব খুব সামান্যই পড়বে। আরটিআই সূত্রে খবর, সরকার এই যুক্তি কানেই তোলেনি। এত কিছু না ভেবেই ঘোষণা করেছে নোট বাতিলের।
লোকসভা ভোটের ইতিহাস, আপনি কতটা ওয়াকিবহাল?
আরও পড়ুন: পশ্চিমবঙ্গে ৭ দফায় নির্বাচন, দেখে নিন কবে-কোথায় ভোট
এর পাশাপাশি ছিল বিপদের আশঙ্কা। সেটা কী রকম? আরটিআই-এর উত্তরে রিজার্ভ মিনিট্স (কোনও বৈঠকের প্রতি মুহূর্তের ঘটনাক্রম) থেকে জানা যাচ্ছে, নোট বাতিলের কুফল সম্পর্কেও কেন্দ্রকে সতর্ক করেছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। অর্থনীতি, মূদ্রাস্ফীতি, আর্থিক বৃদ্ধির উপর স্বল্পমেয়াদি ভিত্তিতে বড় ধাক্কা আসবে বলে সতর্ক করেছিলেন শীর্ষ ব্যাঙ্কের কর্তারা।
আরও পড়ুন: কাল প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন মমতা, বিজেপির ঘোষণা দফায় দফায়, বাম-কং সমঝোতা এখনও ঝুলে
অর্থাৎ, এই আরটিআই-এর পর কার্যত নিশ্চিত যে, নোট বাতিলের ক্ষেত্রে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কোনও কথাই শোনেনি নরেন্দ্র মোদীর সরকার। একতরফা ভাবে নোট বাতিলের ঘোষণা করেছিলেন মোদী। কালো টাকা মজুতদারদের জব্দ করতে যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, তা প্রায় কোনও কাজেই আসেনি। পরবর্তীকালে তার প্রমাণ মেলে রাতারাতি অচল করে দেওয়া ১০০০ এবং ৫০০ টাকার নোটের ৯৯ শতাংশেরও বেশি রিজার্ভ ব্যাঙ্কে ফিরে আসায়।
(ভারতের রাজনীতি, ভারতের অর্থনীতি- সব গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)