নোট-দুর্নীতি: ধৃত রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কর্মী

যেখানে ভরসা, এ বার আঘাত এল সেখান থেকেই। নোট বাতিলের ঘোষণার পর থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বড় অঙ্কের বেআইনি লেনদেন হচ্ছে বলে খবর এসেছে। তাতে জড়িয়েছে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের নামও।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:১০
Share:

যেখানে ভরসা, এ বার আঘাত এল সেখান থেকেই।

Advertisement

নোট বাতিলের ঘোষণার পর থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বড় অঙ্কের বেআইনি লেনদেন হচ্ছে বলে খবর এসেছে। তাতে জড়িয়েছে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের নামও। কিন্তু এই প্রথম খাস রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এক কর্মীও বেআইনি লেনদেনে জড়িত বলে অভিযোগ উঠল। ওই ঘটনায় বেঙ্গালুরু থেকে কে মাইকেল নামে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এক সিনিয়র স্পেশ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্টকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। মাইকেলের গ্রেফতারের ঘটনাটি গত সপ্তাহের। সে খবর প্রকাশ্যে এসেছে আজ। দেড় কোটি টাকার পুরনো নোট বদল করার সময়ে তাঁকে ধরা হয় বলে দাবি সিবিআইয়ের। বিষয়টি নিয়ে হইচই শুরু হতেই ঘটনাটির গুরুত্ব কমিয়ে দেখানোর চেষ্টা করেছেন রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। ডেপুটি গভর্নর এস এস মুন্দ্রা এক বিবৃতিতে বলেন, তদন্তকারী সংস্থা তাঁদের জানিয়েছে, ওই ব্যক্তি জুনিয়র স্তরের কর্মী। তিনি এমন একটি ব্যাঙ্কের শাখায় উপস্থিত ছিলেন, যেখানে সন্দেহজনক লেনদেন হচ্ছিল। তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এই কর্মীর মতো কয়েক দিন ধরে স্টেট ব্যাঙ্ক, স্টেট ব্যাঙ্ক অব মাইসোর, আইসিআইসিআই, কোটাক মহীন্দ্রার মতো ব্যাঙ্কের চার কর্তাও সিবিআইয়ের নজরে পড়েছেন। সম্প্রতি অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের ৪০টি ভুয়ো অ্যাকাউন্টে ১০০ কোটি টাকা জমা পড়ার অভিযোগও উঠেছে। বেআইনি লেনদেনে এই মুহূর্তে ব্যাঙ্ক-কর্মীদের ভূমিকা তাই প্রশ্নের মুখে।

Advertisement

গত ৮ নভেম্বর থেকে দিনে দু’হাজার টাকা হাতে পেতে গোটা দেশকে এটিএমের লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে। ব্যাঙ্ক থেকে সপ্তাহে ২৪ হাজার টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও অধিকাংশ জায়গাতেই তা মিলছে না। অথচ এক দল লোক লাইনে না দাঁড়িয়েও নতুন নোটে কোটি কোটি টাকা হাতে পেয়ে যাচ্ছেন। কী ভাবে?

রাহুল গাঁধী থেকে পি চিদম্বরম— সকলেই এই প্রশ্নটা তুলছেন। তাঁদের মতে, গরিব মানুষরা লাইনে দাঁড়িয়ে বিপুল ভোগান্তির পরেও টাকা হাতে পাচ্ছেন না। অথচ পিছনের দরজা দিয়ে নতুন নোটে কোটি কোটি টাকা চলে যাচ্ছে ধনীদের কাছে। তদন্তকারী সংস্থা সূত্রের খবর, ব্যাঙ্ক-কর্মীদের একাংশের যোগসাজশেই ঘটছে এই সব ঘটনা।

তদন্তকারী অফিসাররা জেনেছেন, কালো টাকা সাদা করার এই ‘খেলায়’ বিভিন্ন ব্যাঙ্কের কর্মী ও ম্যানেজারদের একাংশ জড়িত। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আয়কর দফতর, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট, সিবিআইয়ের মতো তদন্তকারী সংস্থাগুলি এখন হানা দিচ্ছে বিভিন্ন ডেরায়। ধরপাকড়ে যে সব তথ্য তাদের হাতে উঠে আসছে, তাতে দেখা যাচ্ছে বেশ কিছু ব্যাঙ্কে চলছে বেআইনি লেনদেন। আর তাই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আজ দেশের সব ব্যাঙ্ককে নির্দেশ দিয়েছে, ৮ নভেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সব লেনদেন এবং টাকার সিন্দুকের সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষিত রাখতে।

নোট নামা

• ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুরনো পাঁচশো ও হাজারের নোট ফিরেছে ১২ লক্ষ ৪৪ হাজার কোটি টাকার

• নোট ইস্যু হয়েছে ৪ লক্ষ ৬১ হাজার কোটির

• নতুন ছাড়া পাঁচশো ও দু’হাজারের নোেটর সংখ্যা ১৭০ কোটি

• ৮ নভেম্বর-৩০ ডিসেম্বর ব্যাঙ্কগুলির শাখা ও কারেন্সি চেস্টে যাবতীয় লেনদেনের সিসিটিভি রেকর্ডিং

* তথ্যসূত্র: রিজার্ভ ব্যাঙ্ক

কী ভাবে চলছে বেআইনি কারবার? তদন্তকারী অফিসারদেরবক্তব্য, নোট বাতিলের এক মাসের বেশি সময় কেটে যাওয়ায় এখন নতুন নোটেও টাকা জমা করছেন অনেকে। অথচ অনেক ক্ষেত্রে নতুন নোটে টাকা জমা করার পরেও ব্যাঙ্ক তা খাতায় তুলছে পুরনো নোট হিসেবে। কিছু ব্যাঙ্ক কর্মীর যোগসাজশেই তা করা হচ্ছে। এর পরে কালো টাকার কারবারিদের সঙ্গে বন্দোবস্ত করে পুরনো নোট বদলে দেওয়া হচ্ছে সেই নতুন নোট। সে জন্য মোটা কমিশন নিচ্ছেন ব্যাঙ্ক কর্মীদের একাংশ।

কারেন্ট অ্যাকাউন্ট থেকে সপ্তাহে তোলা যাচ্ছে ৫০ হাজার পর্যন্ত। সেই সুযোগ নিয়ে টাকা সাদা করতে দেদার কারেন্ট অ্যাকাউন্টও খোলা হচ্ছে। অথচ এমনটা যাতে না ঘটে তার জন্য সরকারি নির্দেশে বলা হয়েছিল, কারেন্ট অ্যাকাউন্ট হতে হবে ৮ নভেম্বর থেকে অন্তত তিন মাস পুরনো। তা হলে কি দিন পিছিয়ে ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খোলা হচ্ছে, উঠছে সেই প্রশ্ন। তদন্তকারীরা বলছেন, কিছু ব্যাঙ্ক কর্মীর ‘বদান্যতায়’ নিয়মের তোয়াক্কাই করা হচ্ছে না। যাঁর কাছে যত কালো টাকা, সেই অনুপাতে তাঁকে অ্যাকাউন্ট খুলে দিতে সাহায্য করা হচ্ছে। লাগছে শুধু পরিচয়পত্র। লখনউয়ে এক ব্যাঙ্কে ৭২ জনের নামে এমন ভুয়ো অ্যাকাউন্ট মিলেছে। পঞ্জাবে দেড়শো শ্রমিকের পরিচয়পত্র ব্যবহার করা হয়েছে এই কাজে।

মোদী সরকার বুঝছে, এই চক্রের জেরে প্রধানমন্ত্রীর ‘গরিবের মসিহা’ হয়ে ওঠার চেষ্টাও ধাক্কা খাচ্ছে। আজ অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি তাই বলেন, ‘‘কিছু লোক এর অপব্যবহার করছে। দালাল দিয়ে পুরনো অবস্থা ফেরানোর চেষ্টা হচ্ছে। কিছু ব্যাঙ্ককর্মী এতে যুক্ত। তবে তদন্তকারী সংস্থা সতর্ক। সকলকে ধরা হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement