কেন্দ্রকে ৫৭,১২৮ কোটি ডিভিডেন্ট দেবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া।
গত বছর ছিল ১ লক্ষ ৭৬ হাজার কোটি। এ বার তার প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ লভ্যাংশ সরকারকে দিচ্ছে দিচ্ছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই)। গভর্নর শক্তিকান্ত দাসের নেতৃত্বে শুক্রবার বৈঠকে বসে আরবিআই বোর্ড। সেই বৈঠকেই কেন্দ্রকে ৫৭ হাজার কোটি টাকা লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। করোনা সংক্রমণ ও লকডাউনের জেরে বেহাল রাজকোষে এই টাকা এলে পরিস্থিতি মোকাবিলা কিছুটা হলেও সহজ হবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আরবিআই-এর আর্থিক বছরের হিসেব হয় জুলাই থেকে জুন। এ বছর জুনে শেষ হওয়া ২০১৯-২০ অর্থবর্ষের জন্য ৫৭ হাজার ১২৮ কোটি লভ্যাংশ হিসেবে সরকারকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে আরবিআই বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে। ঋণ দেওয়া নেওয়া, আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা-সহ বিভিন্ন ঝুঁকি সামলাতে ‘কন্টিনজেন্সি রিস্ক বাফার’ হিসেবে আয়ের একটি শতাংশ রাখে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এ বছর সেই হার ৫.৫ শতাংশ ধার্য করেছে আরবিআই-এর বোর্ড।
অন্য দিকে ২০২০-২১ আর্থিক বাজেটে শীর্ষ ব্যাঙ্ক ও অন্যান্য সরকারি ব্যাঙ্কের লভ্যাংশ থেকে ৬০ হাজার কোটি টাকা ডিভিডেন্ড পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। শুধুমাত্র রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকেই প্রায় লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছে গেল সরকার। গত বছর সরকার আরবিআই-এর লভ্যাংশ হিসেবে পেয়েছিল ১ লক্ষ ৭৬ হাজার কোটি টাকা।
আরও পড়ুন: অমিত শাহের করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ, এ বার জানালেন নিজেই
অন্য দিকে করোনা সংক্রমণ ও তার মোকাবিলায় লকডাউনের জেরে চলতি আর্থিক বছরে সরকারের আয় তলানিতে এসে ঠেকেছে। ফলে ক্রমেই বাড়ছে রাজকোষের ঘাটতি। এই পরিস্থিতিতে আরবিআই-এর লভ্যাংশের এই টাকা ঘুরে দাঁড়াতে অনেকটাই সাহায্য করবে বলেই মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের উপর চাপ সৃষ্টি করে আসছিল আয়ের একটা অংশ কেন্দ্রের তহবিলে জমা দেওয়ার জন্য। তা নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন দ্বিতীয় বারের মেয়াদে গভর্নরের পদে থাকতে চাননি বলে জল্পনা ছিল। তার পর গভর্নর হন উর্জিত পটেল। সরকারের সঙ্গে টানাপড়েনের জেরে মেয়াদ শেষের আগেই তিনি ইস্তফা দেন। সেই সময় অর্থনীতিবিদদের সিংহভাগও মতামত দিয়েছিলেন, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের টাকা সরকার নিলে বিপর্যয় মোকাবিলা করা কঠিন হবে।
আরও পড়ুন: স্থিতিশীল প্রণব মুখোপাধ্যায়, সাড়া দিচ্ছেন চিকিৎসায়, জানালেন ছেলে অভিজিৎ
এর মধ্যেই আরবিআই-এর প্রাক্তন গভর্নর বিমল জালানের নেতৃত্বে ২০১৮ সালে একটি কমিটি গঠিত হয়। ওই কমিটির সুপারিশেই শেষ পর্যন্ত আরবিআই-এর লভ্যাংশ সরকারকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। যদিও কমিটির সুপারিশ ছিল, ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি ছাড়া অন্তর্বর্তীকালীন কোনও লভ্যাংশ সরকারকে দিতে পারবে না শীর্ষ ব্যাঙ্ক। এ দিন আরবিআই জানিয়েছে, সেই সুপারিশ মতোই চলতি আর্থিক বছরে করোনা মহামারিতে রাজকোষের পরিস্থিতি খারাপ হলেও অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশ সরকারকে দেওয়া হয়নি।
অন্য দিকে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে সরকারি অর্থবর্ষের মিল না থাকায় অনেক ক্ষেত্রেই নানা জটিলতা ও সমস্যা দেখা যায়। তাই এ দিনের বৈঠকে আরবিআই বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আগামী অর্থবর্ষ থেকে সরকারি এবং আরূবিআই-এর অর্থবর্ষ এক করে ফেলা হবে। অর্থাৎ এখন যে আরবিআই-এর অর্থবর্ষ ১ জুলাই থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত রয়েছে, সেটা পাল্টে ১ এপ্রিল থেকে নতুন আর্থিক বছর শুরু করা হবে।