জোড়া হৃদ্পিণ্ড নিয়ে সুস্থ জীবন পেলেন ওই ব্যক্তি।
তাঁর অকেজো হৃদয়কে সচল রাখতে দিনরাত এক করে প্রাণপাত করেছিলেন চিকিৎসকেরা। নাওয়া-খাওয়া ভুলেছিলেন পরিবারের লোকজনও। তবে, জীবনের লড়াই ছাড়েননি বছর পঁয়তাল্লিশের ওই ব্যক্তি।
অবশেষে সব বাধা কাটিয়ে ‘মিরাকল’ ঘটালেন চিকিৎসকেরা। নিপুণ অস্ত্রোপচারে তাঁর অকেজো হার্টের পাশে জুড়ে দিলেন আরও একটি হার্ট। জোড়া হার্টের মেলবন্ধনে ওই ব্যক্তি ফিরে পেয়েছেন সুস্থ জীবন।
ঘটনাটা কেরলের। তবে, ওই ব্যক্তির নাম জানা যায়নি। গোটা দেশে সম্ভবত তিনিই একমাত্র ব্যক্তি, যাঁর হৃদ্পিণ্ডের সংখ্যা দুই। বুকের বাঁ দিকেরটি তাঁর নিজের, আর ডান দিকেরটি এক মহিলার। কোয়ম্বত্তূরের কোভাই মেডিক্যাল সেন্টারে এই অস্ত্রোপচারটি করেছেন কার্ডিওথোরাসিক সার্জেন প্রশান্ত বিজয়নাথ। তিনি জানিয়েছেন, ডাক্তারি পরিভাষায় বিরল এই অস্ত্রোপচারের নাম ‘হেটেরোট্রপিক ট্রান্সপ্লান্ট’। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার টানা অস্ত্রোপচারে এই প্রতিস্থাপন সম্ভব হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘ওই ব্যক্তির হৃদ্পিণ্ডের কার্যক্ষমতা ছিল মাত্র দশ শতাংশ। ফলে চাপ পড়ছিল ফুসফুসের উপর। চাপ এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে হৃদ্পিণ্ড প্রতিস্থাপন করাও সম্ভব হচ্ছিল না।’’ তাঁর মতে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ফুসফুসের চাপ স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকলে নতুন প্রতিস্থাপিত হৃদ্পিণ্ড সে ভাবে সাড়া দেয় না। কারণ, এই চাপ পেরিয়ে হৃদ্পিণ্ড স্বাভাবিক ভাবে রক্ত সরবরাহ করে উঠতেই পারে না। ফলে বিকল্প ব্যবস্থা নিতে হয় চিকিত্সকদের।
কোয়ম্বত্তূরের কোভাই মেডিকেল সেন্টারে চলছে অস্ত্রোপচার।
আর সেই বিকল্পটি হল, একই সঙ্গে হৃদ্পিণ্ড ও ফুসফুসের প্রতিস্থাপন। তাতে কাজ না হলে অন্য আর একটি পদ্ধতি হল, ‘পিগিব্যাক’। সে ক্ষেত্রে একটি সচল হৃদ্পিণ্ডকে অকেজো হৃদ্পিণ্ডটির উপর চাপিয়ে তাকে আরও কার্যক্ষম করে তোলা হয়। গোটা প্রক্রিয়াটিতে খরচ পড়ে প্রায় দু’কোটি টাকা। চিকিৎসকেরা জানান, অস্ত্রোপচারের পরেও অনেক সময় দেখা যায় নতুনটি হৃদ্পিণ্ড ঠিক ঠাক কাজ করছে না। ফলে আবার একই সমস্যার পুনরাবৃত্তি হতে থাকে। তাই ‘হেটেরোট্রপিক ট্রান্সপ্লান্ট’-এরই সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। সদ্য মস্তিষ্কের মৃত্যু হয়েছে এমন এক মহিলার হার্টের সঙ্গে ওই ব্যক্তির হার্টের বেশ কিছু মিল থাকায় দ্রুত অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বুকের ডান দিকে জায়গা তৈরি করে অকেজো হার্টের পাশেই ওই সচল হৃদ্পিণ্ডটি জুড়ে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: ‘কাপ’ই নতুন বন্ধু এ রাজ্যের মেয়েদের
ওই ব্যক্তির ক্ষেত্রে নতুন পরিবেশে নতুন হার্ট বেশ ভাল ভাবেই মানিয়ে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
কী ভাবে সম্ভব হতে পারে এই প্রক্রিয়া?
এসএসকেএম হাসপাতালের হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ বিশ্বকেশ মজুমদার জানান, এমনটা অবশ্যই সম্ভব। এই ক্ষেত্রে রোগীর হৃদ্পিণ্ডের বাঁ দিকের অংশটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিল। দাতার হৃদ্পিণ্ড পুরোটাই রোগীর শরীরে স্থাপন করলেও তার শুধুমাত্র বাঁ দিকটাই সক্রিয় করে রাখা হয়। রোগীর হৃদ্পিণ্ডের ঠিক পাশেই স্থাপন করা হয় দাতার হৃদ্পিণ্ড। যে সমস্ত রক্তবাহ রোগীর হৃদ্পিণ্ডের বাঁ দিকের সঙ্গে যুক্ত ছিল, খুব সুক্ষভাবে সেগুলিকে দাতার হৃদ্পিণ্ডের বাঁ দিকের অংশের সঙ্গে জোড়া লাগানো হয়েছে। ফলে ফুসফুস থেকে আগত অক্সিজেন-সমৃদ্ধ রক্ত দাতার হৃদ্পিণ্ডের বাঁ অংশে প্রবেশ করে এবং সেখান থেকে সারা দেহে যায়। উল্টে রোগীর হৃদ্পিণ্ডের ডান দিকের অংশ কর্মক্ষম ছিল। ফলে হৃদ্পিণ্ডের ডান দিকের অংশ যাবতীয় কাজের জন্য রোগীকে দাতার উপর নির্ভর করতে হয়নি। এই ধরনের অস্ত্রোপচার দেশে এর আগে হয়নি বলেই জানাচ্ছেন তিনি।
ছবি: সংগৃহীত।