আদালতের পথে ধর্ষিতাকে হত্যার চেষ্টা উন্নাওয়ে, ৯০ শতাংশ অগ্নিদগ্ধ তরুণী

আজ সকালে ধর্ষণের মামলার শুনানির জন্য রায়বরেলীর আদালতে যাচ্ছিলেন ওই তরুণী।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

উন্নাও শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:০১
Share:

উন্নাওয়ের নির্যাতিতাকে লখনউ থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দিল্লি। পিটিআই

আবার উন্নাও। আবারও এক ধর্ষিতাকে হত্যার চেষ্টা। গত সপ্তাহে হায়দরাবাদে তরুণী পশু- চিকিৎসককে গণধর্ষণ করে খুনের পরে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় গোটা দেশ যখন উত্তাল, তখন উত্তরপ্রদেশের উন্নাওয়ে এক ধর্ষিতা তরুণীকে মারধর করে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল পাঁচ জনের বিরুদ্ধে। দগ্ধ শরীরে এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন বছর তেইশের ওই তরুণী। এই উন্নাওয়েই ২০১৭ সালে বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গারের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনেছিল এক নাবালিকা।

Advertisement

আজ সকালে ধর্ষণের মামলার শুনানির জন্য রায়বরেলীর আদালতে যাচ্ছিলেন ওই তরুণী। আগুন লাগানোয় অভিযুক্তদের মধ্যে দু’জনের বিরুদ্ধে তিনি ধর্ষণের অভিযোগে এফআইআর করেছিলেন। আজকের ঘটনার এক ঘণ্টার মধ্যে পাঁচ জনকেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। প্রত্যেকে বাড়িতেই ছিল। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরেই কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা টুইটারে যোগী সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন। ডিজিপি-র ইস্তফার দাবি তুলেছে সমাজবাদী পার্টি। ঘটনার রিপোর্ট চেয়েছে জাতীয় মহিলা কমিশন। উন্নাওয়ের আঁচে উত্তাল হয়েছে রাজ্যসভা। প্রায় আধ ঘণ্টা মুলতুবি ছিল অধিবেশন।

লখনউয়ের শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি হাসপাতালের সুপার আশুতোষ দুবে আজ দুপুরের দিকে জানিয়েছিলেন, ওই তরুণীর শরীরের ৯০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছে। তবে তাঁরা সব ধরনের চেষ্টা চালাচ্ছেন। সন্ধেয় তরুণীকে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে করে দিল্লি নিয়ে যাওয়া হয়। গ্রিন করিডর গড়ে ১৩ মিনিটের মধ্যে ১৮ কিলোমিটার রাস্তা পেরিয়ে তাঁকে সফদরজঙ্গ হাসপাতালে পৌঁছে দেয় পুলিশ। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ঘটনার কথা জেনেই ওই তরুণীর চিকিৎসায় যাবতীয় সহযোগিতার আশ্বাস দেন। দোষীদের যাতে দ্রুত শাস্তি হয়, পুলিশকে সেই ব্যবস্থা নিতে নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। সন্ধের মধ্যে গোটা ঘটনার রিপোর্ট তলব করেন যোগী।

Advertisement

আরও পড়ুন: নাগরিকত্ব বিলে ‘ছাড়’, সংশয়ে লক্ষ লক্ষ বাঙালি

আজ ঠিক কী হয়েছিল, মহকুমা বিচারক দয়াশঙ্কর পাঠকের কাছে দেওয়া বয়ানে তা জানিয়েছেন তরুণী। ঘটনার সময়ে তিনি একাই ছিলেন বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে। বিচারককে তরুণী জানান, আদালতের শুনানির জন্য আজ সকালে হিন্দু ভাতান খেরা গ্রামের বাড়ি থেকে তিনি রওনা হন। রাস্তাতেই তাঁকে আটকায় হরিশঙ্কর ত্রিবেদী, রামকিশোর ত্রিবেদী, উমেশ বাজপেয়ী, শিবম ত্রিবেদী এবং শুভম ত্রিবেদী। প্রথমে ওই পাঁচ জন তাঁকে বেধড়ক মারধর করে, তার পরে গায়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জ্বলন্ত অবস্থায় প্রায় এক কিলোমিটার দৌড়ন ওই তরুণী। অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী রবীন্দ্র বলেন, ‘‘জ্বলতে জ্বলতে ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে এগিয়ে আসছিলেন ওই তরুণী। দেখে প্রথমে ভয় পেয়ে লাঠি খুঁজছিলাম। দ্রুত ভুল ভাঙে।’’

কী ভাবে তরুণীকে উদ্ধার করা হল, তা স্পষ্ট নয়। তবে রবীন্দ্র জানাচ্ছেন, মেয়েটির মুখ থেকেই তাঁরা পুরো বৃত্তান্ত শোনেন। ১১২ হেল্পলাইনে ফোন করা হলে ওই তরুণীই পুলিশের সঙ্গে কথা বলেন। পুলিশ তাঁকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায়। সেখান থেকে জেলা হাসপাতাল, তার পরে লখনউ।

আরও পড়ুন: এনআরসির অডিট রিপোর্টের অংশ ফাঁস

শিবম আর শুভমের বিরুদ্ধেই গত মার্চে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেছিলেন ওই তরুণী। তাঁর অভিযোগ ছিল, গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে তাঁকে ধর্ষণ করেছিল ওই দু’জন। কিন্তু পুলিশ অভিযোগ নেয় মাস তিনেক পরে। দু’জনের মধ্যে এক জনের সঙ্গে ওই তরুণীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। কার সঙ্গে, জানা যায়নি। তবে সেই ‘প্রেমিক’ বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মেয়েটির সঙ্গে বেশ কয়েক বার সহবাস করে। তার পরে বন্ধুর সঙ্গে মিলে তাঁকে ধর্ষণও করে। একটি সূত্রের দাবি, এক অভিযুক্তের সঙ্গে বাড়ির অমতে বিয়েও হয় তরুণীর। পরে দুই পরিবারের ঝামেলায় তরুণী নিজের বাড়িতে ফিরে যান। অভিযুক্তেরা পরে গ্রেফতার হয়। এক জন দশ দিন আগে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছিল। পুলিশের খাতায় অন্য জন ছিল পলাতক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement