প্রতীকী ছবি।
প্রায় নব্বই শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল তাঁর শরীর। গত কাল এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে করে দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে নিয়ে আসা হলেও বাঁচানো গেল না উন্নাওয়ের নির্যাতিতা সেই তরুণীকে। হাসপাতাল সূত্রে বলা হয়েছে, আজ তার ১১টা ১০ মিনিটে তিনি হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন। চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে রাত ১১টা ৪০ মিনিটে তাঁর মৃত্যু হয়।
ধর্ষকদের বিরুদ্ধে মুখ খোলায় তরুণীকে পুড়িয়ে মারার পাশাপাশি তার পরিবারকেও লাগাতার হুমকি দিচ্ছে এক অভিযুক্তের পরিবার। নির্যাতিতার এক কাকা আজ অভিযোগ করেন, ওই তরুণীর গায়ে আগুন দেওয়ার ঘটনায় ধৃত পাঁচ জনের অন্যতম শিবম ত্রিবেদীর পরিবার তাঁর দোকানে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে।
গত কাল ধর্ষণের মামলার শুনানির জন্য আদালতে যাওয়ার পথে আক্রান্ত হন বছর তেইশের ওই তরুণী। তাঁকে আদালতে যেতে প্রথমে বাধা দেয় পাঁচ জন। তাদের মধ্যে শিবম ও শুভম ত্রিবেদী তরুণীকে ধর্ষণে অভিযুক্ত। বাকিদের তরুণী চেনেন না বলে পুলিশকে জানিয়েছিলেন। হুমকিতে কান না-দেওয়ায় কাল ভোরে প্রথমে বেধড়ক মারধর করা হয় তরুণীকে। তাঁর গলায় ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়। পরে তাঁর গায়ে কেরোসিন ঢেলে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। কোনও মতে পালিয়ে পুলিশকে ফোন করেন ওই তরুণী। রাতেই তাঁকে দিল্লি নিয়ে আসা হয়।
আরও পড়ুন: পুলিশের গুলিতেই ঝাঁঝরা চার অভিযুক্ত
ঘটনাটি নিয়ে শোরগোল শুরু হওয়ায় কাল সন্ধের মধ্যেই রিপোর্ট তলব করেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। আজ ডিভিশনাল কমিশনার মুকেশ মেশরাম জানান, ঘটনার তদন্তে সিট গঠন করা হয়েছে।
প্রথম উন্নাও
২০১৭-র জুনে উন্নাওয়ের সতেরো বছরের এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গারের বিরুদ্ধে। ২০১৮-র এপ্রিলে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বাড়ির সামনে গায়ে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করেন কিশোরী। সংবাদমাধ্যমে হইচই হওয়ায় সিবিআইকে তদন্তভার দেন মুখ্যমন্ত্রী। এপ্রিলেই গ্রেফতার হন সেঙ্গার। ২০১৮-র জুলাইয়ে সেঙ্গারের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেয় সিবিআই। ২০১৯-এর জুলাইয়ে ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় নির্যাতিতার গাড়ির। মারা যান তাঁর দুই আত্মীয়া। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন নির্যাতিতা ও তাঁর আইনজীবী। বন্দি সেঙ্গারের ঘনিষ্ঠেরা তাদের ভয় দেখাচ্ছে বলে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় নির্যাতিতার পরিবার। এই সংক্রান্ত মোট পাঁচটি মামলা দিল্লির আদালতে স্থানান্তরিত করার নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি। একই সঙ্গে নির্যাতিতা, তাঁর পরিবার ও আইনজীবীকে নিরাপত্তা দেওয়ার নির্দেশও দেয় শীর্ষ আদালত।
আজ নির্যাতিতার ওই দূর সম্পর্কের কাকা পুলিশকে জানান, শিবমের বিরুদ্ধে ওই তরুণী মুখ খোলায় তাঁর পরিবারকে ফল ভুগতে হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে। উন্নাওয়ের এপি বিক্রান্ত বীরের বক্তব্য, হুমকির কথা তিনি শুনেছেন। ওই ব্যক্তিকে যথাযথ নিরাপত্তা দেওয়ার আশ্বাস দেন সুপার। হায়দরাবাদের পশু-চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত চার জনের এনকাউন্টারে মৃত্যুর খবর শুনেছে নির্যাতিতা তরুণীর পরিবার। তাঁর বাবার দাবি, ‘‘আমার মেয়ের সঙ্গে যারা এমন আচরণ করেছে, তাদেরও এমনটা হওয়া উচিত বলে মনে করি।’’
তবে তাঁর ভাইয়ের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ আজ উড়িয়ে দিয়েছেন মূল অভিযুক্ত শিবমের এক বোন। তাঁর দাবি, তাঁদের পরিবার এক ভয়ঙ্কর রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই তরুণীর বক্তব্য, তাঁর মা গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান বলেই ইচ্ছাকৃত ভাবে তাঁদের পরিবারকে নিশানা করা হচ্ছে। নির্যাতিতাকে ধর্ষণের জন্য জেল খাটতে হয়েছে শিবমকে। সেটাও ষড়যন্ত্রেরই অংশ বলে দাবি করেছেন অভিযুক্তের বোন।
গত কালও এই ঘটনা নিয়ে সরব হয়েছিলেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা। আজও তিনি বলেন, ‘‘গত ১১ মাসে শুধু উন্নাওয়েই ৯০ জনকে ধর্ষণ করা হয়েছে। সরকারকে ভাবতে হবে তারা মহিলাদের পাশে আছে, না কি অপরাধীদের।’’ প্রধানমন্ত্রীর নীরবতা নিয়েও আজ প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস।
পাঁচ অভিযুক্তকে আজ আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের ১৪ িদনের বিচারবিভাগীয় হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।