ধৃত ধর্মগুরুর আশ্রম থেকে উদ্ধার হয়েছে বোমা। তাই হিসারের বারওয়ালার সেই বিলাসবহুল আশ্রমের সঙ্গে মাওবাদী যোগ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানাল হরিয়ানা পুলিশ।
গত কালই রামপালের বিশাল আশ্রমে তল্লাশি চালিয়ে প্রচুর অস্ত্রের সন্ধান মিলেছিল। সেই সঙ্গেই উদ্ধার হয় অ্যাসিড সিরিঞ্জ আর বোমা। হরিয়ানা পুলিশের এক কর্তা আজ জানিয়েছেন, আপাতত আশ্রমের ভক্ত, রামপালের সহকারী ও নিরাপত্তারক্ষী মিলিয়ে প্রায় ৮৬৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। যাঁদের মধ্যে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়ের মতো রাজ্যের বাসিন্দাও রয়েছেন। পুলিশের বক্তব্য, যে হেতু ওই আশ্রম থেকে বোমা আর বোমা তৈরির সরঞ্জাম মিলেছে, তাই সেগুলি কারা তৈরি করত, সে বিষয়েও খোঁজ-খবর নেওয়া শুরু হয়েছে। ধৃতদের মধ্যে কেউ মাওবাদী কি না, তা জানারও চেষ্টা চলছে। আইজি অনিল কুমার রাও জানিয়েছেন, আশ্রম থেকে উদ্ধার হওয়া হাত বোমাগুলি যারা বানাত, তারা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মাওবাদীও হতে পারে। তদন্তের স্বার্থে ছত্তীসগঢ় পুলিশের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে এমন কিছু মাওবাদীর ছবি চাওয়া হয়েছে, যারা বোমা তৈরি করতে জানে।
বিলাসবহুল ওই আশ্রম তল্লাশি করার সময় একটি শৌচাগার থেকে এক অচৈতন্য মহিলাকেও পুলিশ উদ্ধার করেছে বলে জানা গিয়েছে। মহিলার নাম বিজলেশ। বাড়ি মধ্যপ্রদেশের অশোকনগর গ্রামে। তিনি কী ভাবে জ্ঞান হারিয়েছিলেন, তা এখনও পুলিশের কাছে স্পষ্ট নয়। তাঁকে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আশ্রমের মহিলাদের উপর কোনও অত্যাচার চলত কি না, তা জানার জন্য ইতিমধ্যেই রামপালের ঘনিষ্ঠ চার মহিলা ভক্তকে আটক করা হয়েছে। তবে জেরায় তাঁরা কিছু জানিয়েছেন কি না, তা নিয়ে অবশ্য মুখ খুলতে নারাজ পুলিশ।
আশ্রমের ভিতরে আরও তিন ভক্ত লুকিয়ে ছিলেন বলে জানিয়েছে সিট। আজ তাঁদের উদ্ধার করা হয়। এঁরা হলেন লক্ষ্মণ দাস, মহেশ কুমার ও অজয় দাস। প্রথম দু’জন মধ্যপ্রদেশ এবং তৃতীয় জন বিহারের বাসিন্দা। শুধু ওই তিন জনই নয়, আজ আশ্রম থেকে উদ্ধার হয়েছে রামপালের একটি বুলেটপ্রুফ গাড়িও। সেই সঙ্গেই মিলেছে আরও একটি গাড়ি, একটি তেলের ট্যাঙ্কার এবং দু’টি ট্র্যাক্টর। আশ্রমের দু’টি জলের ট্যাঙ্কও খালি করে তল্লাশি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তল্লাশির কাজ কি তবে শেষ? পুলিশ জানাচ্ছে, এত বড় আশ্রম চত্বরে এখনও কেউ লুকিয়ে থাকতে পারে। কোনও গোপন ঘরে লুকনো থাকতে পারে অস্ত্রও। তাই নিশ্চিত করে কিছুই বলা যাচ্ছে না। প্রয়োজনে ফের ওই আশ্রমে হানা দিতে পারে সিট।
রামপালের শোয়ার ঘর থেকে গর্ভ নির্ণায়ক সরঞ্জাম মেলার বিষয়টিও ভাবাচ্ছে পুলিশকে। পুলিশের এক মুখপাত্র সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, রামপালের ঘরের খাটের নীচের এক গোপন চেম্বার থেকে গর্ভ নির্ণায়ক সরঞ্জামের বেশ কয়েকটি পাতা পাওয়া গিয়েছে। আশ্রমে ওই সরঞ্জামের প্রয়োজন কেন পড়ল তা নিয়ে ধোঁয়াশায় পুলিশও। আর এর থেকেই পুলিশ মনে করছে, গত মঙ্গলবার আশ্রম থেকে বেরিয়ে যে সব মহিলা ধর্ষণের অভিযোগ এনেছিলেন, তাঁদের বক্তব্যে সত্যতা রয়েছে। ধর্মগুরুর নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষীরাই আশ্রমের মহিলা ভক্তদের ধর্ষণ করত বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে। পুলিশ তা-ও খতিয়ে দেখছে।