ফাইল চিত্র।
ব্যবসায়িক স্বার্থে পেশাদার ট্যুর অপারেটরদের ট্রেন ভাড়া দেবে রেল। এই প্রকল্পের পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছে ‘ভারত গৌরব’। তবে এই ‘গৌরবজনক’ প্রকল্পে রেলের অব্যবহৃত ‘আইসিএফ’ গোত্রের কামরাগুলিকেই ভাড়ায় দেওয়া হবে। শনিবার একটি সাংবাদিক বৈঠকে এ কথা জানানোর পাশাপাশি পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার অরুণ অরোরার সংযোজন, প্রয়োজনে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে রেলের ‘এলএইচবি’ গোত্রের ট্রেনও ভাড়া নিতে পারেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। তবে অতিরিক্ত টাকা দিতে ব্যবসায়ীরা আদৌ রাজি হবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে।
২০১৭ সাল থেকে ‘আইসিএফ’ গোত্রের কামরার উৎপাদন বন্ধ হয়েছে। রেল ট্রেনে ধাপে-ধাপে ‘এলএইচবি’ গোত্রের কামরা লাগিয়েছে। কিন্তু পুরনো আইসিএফ কামরার মেয়াদ ফুরোয়নি। সেগুলি ব্যবহার না-করা হলেও কেটে বা ভেঙে ফেলার মতো পরিস্থিতি নেই। রেল সূত্রের খবর, সেই উদ্বৃত্ত কামরাগুলিকেই ভাড়া দিয়ে ব্যবসায়িক কাজে লাগাতে চাইছেন কর্তৃপক্ষ।
নির্দিষ্ট পর্যটন সার্কিটে ট্রেন ভাড়া নিয়ে চালানোর ক্ষেত্রে এত দিন সরকারি সংস্থা ইন্ডিয়ান রেলওয়ে কেটারিং অ্যান্ড ট্যুরিজম কর্পোরেশনের (আইআরসিটিসি) একচেটিয়া আধিপত্য ছিল। হালফিলের তেজস, রামায়ণ এক্সপ্রেস তারই উদাহরণ। অতীতে বৌদ্ধ তীর্থস্থানগুলিকে যুক্ত করে বুদ্ধিস্ট সার্কিট, সুফি তীর্থকেন্দ্রকে যুক্ত করে সুফি সার্কিটেও ট্রেন চালিয়েছে আইআরসিটিসি। কিন্তু রেল মন্ত্রক মনে করছে, একা আইআরসিটিসি পর্যটন ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক সম্ভাবনার পুরো সদ্ব্যবহার করতে পারছে না। তাই বেসরকারি ট্যুর অপারেটরদের হাতে ট্রেন তুলে দিয়ে তাই নতুন আয়ের দরজা খুলতে চায় রেল। এ জন্য পর্যটন সংস্থাকে রুট বাছাই, এসি, নন-এসি, স্লিপারের মতো কোচ পছন্দসই সংখ্যায় বাছাই করার সুযোগ ছাড়াও ট্রেনের অন্দর ও বাইরের সজ্জা নির্বাচনের অধিকারও দেওয়া হচ্ছে।
রেল আধিকারিকদের একাংশের ব্যাখ্যা, বছরের বিভিন্ন সময়ে দূরপাল্লার এক্সপ্রেস ট্রেনে বহু পর্যটক বিভিন্ন রুটে সফর করেন। এ ক্ষেত্রে শুধু মাত্র পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে বিশেষ ট্রেন চালানো হলে তা আকর্ষণীয় হতে পারে। এ জন্য ভ্রমণসূচি নির্ধারণের অধিকার এবং ট্রেন ভাড়া নেওয়া পর্যটন সংস্থার হাতে থাকবে। এক লক্ষ টাকার রেজিস্ট্রেশন ফি এবং ট্রেনপিছু ১ কোটি টাকা সিকিয়োরিটি ডিপোজ়িট রেখে ট্রেন মিলবে। এ ছাড়া, ট্রেন না চললে তার জন্য স্টেবলিং চার্জ এবং ট্রেন চলার সময় হলেজ চার্জ গুনতে হবে বেসরকারি সংস্থাকে। সফরসূচি চূড়ান্ত হওয়ার অন্তত এক মাস আগে রেলকে জানাতে হবে। তার ভিত্তিতে ওই ট্রেন কোন সময়ে কী ভাবে যাবে তার পরিকল্পনা করবে রেল।
অনেকে বলছেন, ব্যস্ত রুটে যেখানে এমনিতেই ট্রেনের সংখ্যা বেশি, সেখানে বেসরকারি ট্রেনকে জায়গা ছেড়ে দিতে গিয়ে নিয়মিত ট্রেনের চলাচল ব্যাহত হবে না তো ? রেল কর্তাদের দাবি, প্রথম সারির নিয়মিত ট্রেনের চলাচল ব্যাহত না করেই ওই সময়সূচি নির্ধারণ করা হবে। পাশাপাশি নির্দিষ্ট রুটে পর্যটন মরসুমে বেসরকারি ট্রেন চললে যাত্রীরা প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে পছন্দসই পরিষেবা পাবেন। ওই সব ব্যস্ত রুটে প্রায়ই যাত্রীদের চাহিদা মেটাতে রেলকে বিশেষ ট্রেন চালাতে হয়। কিন্তু, যথেষ্ট প্রচার ও আগাম পরিকল্পনার অভাবে সব ক্ষেত্রে ওই উদ্যোগে সাফল্য আসে না। তুলনায় বেসরকারি ট্রেনে যাত্রী পরিষেবা উন্নত হবে বলে মত রেলের একাংশের।