রাহুল গাঁধী আবার আটক, চাপে পড়ছে বিজেপি

প্রাক্তন সেনা-জওয়ান রামকিশন গ্রেবালের আত্মহত্যার ঘটনায় বিপুল চাপে পড়ে গিয়েছে নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি। চাপের কারণ একটা যদি হয় সেনার অন্দরে মোদী সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অসন্তোষ, অন্যটা তা হলে প্রায় সব বিরোধী দলের একজোট হয়ে সুর চড়ানো।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৬
Share:

আত্মঘাতী জওয়ানের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে তাঁর গ্রামে রাহুল গাঁধী। হরিয়ানার ভিওয়ানিতে। ছবি: পিটিআই।

প্রাক্তন সেনা-জওয়ান রামকিশন গ্রেবালের আত্মহত্যার ঘটনায় বিপুল চাপে পড়ে গিয়েছে নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি।

Advertisement

চাপের কারণ একটা যদি হয় সেনার অন্দরে মোদী সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অসন্তোষ, অন্যটা তা হলে প্রায় সব বিরোধী দলের একজোট হয়ে সুর চড়ানো। এই চাপ সামাল দিতে গিয়ে সেনাদের যে কোনও প্রসঙ্গে মোদী সরকারের হয়ে বরাবর যিনি মুখ খোলেন, সেই প্রাক্তন সেনাপ্রধান তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভি কে সিংহ যা বলেছেন, তাতে সমস্যা বেড়েছে। বিড়ম্বনা আরও বাড়িয়েছে সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে থাকা দিল্লি পুলিশের কিছু কাজকর্ম।

বৃহস্পতিবারই যেমন। দীপাবলির একটি অনুষ্ঠান সেরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাড়ি ফিরবেন বলে বেশ কিছুক্ষণ রাস্তা বন্ধ রইল। আর তার জেরে মধ্য দিল্লির যানজটে আটকে যন্তর-মন্তরে প্রয়াত সেনা জওয়ানকে নিয়ে এক অনুষ্ঠানে দেরিতে পৌঁছলেন রাহুল গাঁধী। এবং সেখানে পৌঁছে তিনি ফের আটক হলেন দিল্লি পুলিশের হাতে। গত দু’দিনে এই নিয়ে তৃতীয় বার!

Advertisement

রাহুলের এই আটক হওয়া নিয়ে ক্ষিপ্ত কংগ্রেস যখন তাঁকে ‘অপহরণ’ করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে শোরগোল ফেলে দিয়েছে, তখন তাতে ইন্ধন দিল বিজেপিরই জোট শরিক শিবসেনা! যাদের সাফ বক্তব্য, রাহুলকে যে ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে তা লজ্জাজনক। দিল্লি পুলিশ অবশ্য এ সব সমালোচনায় কান দেয়নি। ঘণ্টা দুয়েক পরে রাহুলকে মুক্তি দিয়েছে তারা। কিন্তু ততক্ষণে কংগ্রেস অক্সিজেন পেয়ে গিয়েছে।

মোদী সরকারের হয়ে মুখ খুলে প্রাক্তন সেনা প্রধান ও মন্ত্রী ভি কে সিংহ গতকাল আত্মঘাতী জওয়ানের মানসিক অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। আজ আত্মঘাতী জওয়ানের সঙ্গে কংগ্রেসের যোগসাজশের অভিযোগ এনে তিনি বলেন, ‘‘ওই জওয়ান কংগ্রেসের সরপঞ্চ ছিলেন। কংগ্রেসের টিকিটেই তিনি লড়েছিলেন।’’ এ নিয়ে বিরোধীরা হইহই করে উঠতে না উঠতে হরিয়ানার বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টার এক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, ‘‘যাঁরা সীমান্তে প্রাণ দেন, তাঁরা শহিদ। যাঁরা আত্মহত্যা করেন, তাঁরা নন!’’ তাঁর এই মন্তব্য নিয়েও তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। আত্মঘাতী জওয়ানের পুত্র ক্ষোভের সঙ্গে বলেছেন, ‘‘আমার বাবা কোনও রাজনীতির লোক ছিলেন না। আর তিনি প্রাণ দিয়েছেন নিজের সহকর্মীদের জন্য।’’

এ সবের আগে এ দিন সকালেই হরিয়ানার ভিওয়ানিতে আত্মঘাতী জওয়ানের অন্ত্যেষ্টি উপলক্ষে তাঁর বাড়িতে পৌঁছন রাহুল। তার কিছু পরে অরবিন্দ কেজরীবাল। তাঁদের আগেই সেখানে পৌঁছে গিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও ব্রায়েন।

আসলে রামকিশনের আত্মহত্যা ব্যাপক প্যাঁচে ফেলে দিয়েছে বিজেপিকে। ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-এর সাফল্য নিয়ে মোদীর দল হইহই করে উত্তরপ্রদেশে ভোটের আগে হাওয়া তুলেছিল। প্রাক্তন জওয়ানের আত্মহত্যা সেই হাওয়া কেড়ে নিয়েছে। যে কারণে আজ অশোক রোডে দীপাবলি উৎসবে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েও সেনা-আত্মহত্যা নিয়ে টুঁ শব্দ করেননি মোদী। তাঁর সেনাপতি অমিত শাহ প্রকাশ্যে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ নিয়ে হাওয়া গরম করলেও ঘনিষ্ঠ মহলে কবুল করেছেন, গত কাল দিল্লি পুলিশ যে ভাবে আত্মঘাতী সেনার পরিবারকে হেনস্থা করেছে, তা ভুল।

আর সরাসরি মোদী সরকারের অধীনে থাকা দিল্লি পুলিশের এই ‘ভুল’কেই হাতিয়ার করছে কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি। এই কারণেই এ দিন সন্ধ্যায় যন্তর-মন্তরে কোনও রকমে পৌঁছে ধর্নায় বসার পরে বিষয়টি নিয়ে ইন্ডিয়া গেট পর্যন্ত যাত্রা করতে চেয়েছিলেন রাহুল। তখনই পুলিশ তাঁকে ফের আটক করে প্রথমে ফিরোজ শাহ রোডের একটি বাড়িতে ও পরে তুঘলক রোড থানায় নিয়ে যায়।

রাজনীতির ঘোলা জলে মাছ ধরতে তৎপর তৃণমূলও। এখন জয়ললিতা অসুস্থ। অখিলেশ-মুলায়ম ব্যস্ত কোন্দলে। এই অবস্থায় সংসদে মোদী-বিরোধী রাজনীতি জিইয়ে রাখাই তৃণমূলের লক্ষ্য। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে আজ ডেরেক ভিওয়ানি পৌঁছন আত্মঘাতী জওয়ানের অন্ত্যেষ্টিতে যোগ দিতে। ডেরেক বলেন, ‘‘কেন একজন সেনার পরিবারকে দিল্লি পুলিশ এ ভাবে হেনস্থা করল, বিজেপি সরকারকে এর জবাব দিতে হবে সংসদে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement