রাহুল গাঁধী এবং নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
যুদ্ধক্ষেত্রে এক চিলতে জমিও ছাড়বেন না। তাই নরেন্দ্র মোদীর গড়েই প্রধানমন্ত্রীর মুখোমুখি হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন রাহুল গাঁধী।
গত কাল চারটি সভা করে গুজরাতের ভোটে ‘কার্পেট বোম্বিং’ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী। আগামিকাল সকালে ফের গুজরাতের সোমনাথ থেকে মোদী শুরু করছেন দ্বিতীয় ধাপের চারটি সভা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর গত কালের সভা খুঁটিয়ে দেখে কাল রাতেই রাহুল তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নেন, মোদীর গড়েই মুখোমুখি হবেন তিনি। সেই সূত্র ধরে আগামিকাল সোমনাথ থেকেই দু’দিনের সফর শুরু করছেন রাহুল। দুপুরে সোমনাথের মন্দির দর্শন করে তিনি সেই সব জায়গাতেও যাবেন, যেখানে মোদী ইতিমধ্যেই সভা করে এসেছেন। আগামী কাল সোমনাথ মন্দিরের কাছাকাছি একটি গ্রামে মোদীর প্রথম সভা। আর তার কাছেই একটি জনসভা করার পরিকল্পনা করেছেন হার্দিক পটেল। গুজরাত সরকার অবশ্য এখনও এই সভার অনুমতি দেয়নি।
কংগ্রেসের শীর্ষ সূত্রের দাবি, গত কাল মোদীর সভাগুলিতে বিশেষ ভিড় হয়নি। তার উপর কংগ্রেসকে নিশানা করতে গিয়ে নিজেকে ‘ভূমিপুত্র’ আর রাহুলকে কার্যত ‘বাইরের লোক’ বলে আসল প্রশ্নগুলিকেই কৌশলে এড়িয়ে গিয়েছেন মোদী। কংগ্রেস নেতারা বলছেন, মোদী তো এখন শুধু রাহুল গাঁধীকেই দুষছেন। নিজের ‘গুজরাত মডেল’ নিয়েই কোনও উচ্চবাচ্যই করছেন না। যেন গুজরাতে শাসক দল কংগ্রেস আর বিজেপি বিরোধী! কংগ্রেস নেতাদের অভিযোগ, কেন্দ্রে ও রাজ্যে বিজেপি শাসিত সরকারের বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় প্রশ্নগুলি সুকৌশলে এড়িয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। ফলে রাহুল গাঁধী গুজরাতে গিয়ে মোদীর সেই অনুচ্চারিত কথাগুলিই তুলে ধরবেন। আক্রমণ করবেন তাঁর ‘ভূমিপুত্র’ অস্ত্রকেও। গুজরাতে নানা বিষয়ে বিজেপির তৈরি করা অসন্তোষের সময়ে মোদী কেন সে রাজ্যে যাননি, প্রশ্ন ছুড়বেন তা নিয়েও।
গত কাল রাতেই রাহুল টুইট করে মোদীকে কটাক্ষ করেন। প্রধানমন্ত্রীর কপালে ভাঁজ কেন, মাথায় ঘাম কেন, ‘শাহজাদা’ (অমিত শাহের পুত্র জয়) থেকে রাফাল নিয়ে তিনি চুপ কেন— প্রশ্ন তোলেন রাহুল। বিজেপি নেতারাও ঘরোয়া কথাবার্তায় মানছেন, গুজরাতের এ বারের ভোট অন্য বারের থেকে আলাদা। লড়াই আদৌ একতরফা নয়। কারণ হল, রাহুল গাঁধীর সক্রিয়তা আর হার্দিক পটেল, জিগ্নেশ মেবাণী, অল্পেশ ঠাকোরের সঙ্গে কংগ্রেসের সমঝোতা। জাতপাতের সমীকরণও বদলে গিয়েছে সে কারণে। বিভিন্ন সমীক্ষাতেও দেখা গিয়েছে, বিজেপি লড়াইয়ে এগিয়ে থাকলেও ক্রমশই ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছে কংগ্রেস। এই অবস্থায় শেষ পর্যন্ত হাওয়া যে ধরে রাখতে পারবে, জয় তারই।
সে কারণে মোদীর পাশাপাশি রাহুলের সফরকে ঘিরে প্রতিক্রিয়া দিতে হচ্ছে অমিত শাহ থেকে মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণীকেও। মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘রাহুল গাঁধী আগেও অনেক সভা করে একই কথা বলেছেন। গুজরাতিরা তাঁকে কোনও গুরুত্বই দিচ্ছে না।’’ আর অমিত শাহ বলছেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশেও দুই ‘লড়কা’ (রাহুল-অখিলেশ) অনেক সভা করেছিলেন। তার পরেও বিজেপিরই জয় হয়েছে। রাহুল গাঁধী কী আদৌ যুব নেতা? গুজরাতে বিজেপি দেড়শো আসন পাবে। তাই ভোটের ফল ঘোষণার আগেই রাহুলকে সভাপতির পদে বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’’