অটলবিহারী বাজপেয়ীকে দেখতে হাসপাতালে সবার প্রথমে হাজির হন রাহুল গাঁধী।
দীর্ঘদিনই অসুস্থ। আজ বুকে যন্ত্রণা হতেই সোজা এইমস। তার পরেই অটলবিহারী বাজপেয়ীকে দেখতে হাসপাতালে নামল ভিভিআইপির ঢল।
এইমস কর্তৃপক্ষ নিজেরাও বুঝতে পারেননি, এত জন বাজপেয়ীকে দেখতে চলে আসবেন। কাউকে আগে থেকে কিছু না জানিয়ে সবার প্রথমে হাজির হন রাহুল গাঁধী। তাতেই ছবিটা বদলে যায়। রাহুল গিয়েছেন জানাজানি হওয়া মাত্র কেন্দ্রীয় সরকার ঝাঁপিয়ে পড়ে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই হাসপাতালে পৌঁছন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জে পি নড্ডা, বাজপেয়ী জমানায় প্রধানমন্ত্রী দফতরের প্রতিমন্ত্রী থাকা বিজয় গয়াল। এর পর ছুটলেন অমিত শাহ আর বিজেপির শীর্ষস্থানীয় অনেক নেতা। রাতে কন্যা প্রতিভা বিষয়টি জানান লালকৃষ্ণ আডবাণীকে। বাজপেয়ীর সঙ্গী আডবাণী সঙ্গে সঙ্গেই পৌঁছন এইমসে। হাসপাতালে আসেন মুরলীমনোহর জোশীও। বাজপেয়ীর শারীরিক অবস্থা নিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হর্ষবর্ধন বলেন, ‘‘উনি ঠিক আছেন। চিন্তার কিছু নেই।’’ বিজয় গয়াল জানান, বাজপেয়ীর প্রস্রাবে সংক্রমণের চিকিৎসা হচ্ছে। তাঁর আশা, আগামিকালই বাড়ি ফিরে যেতে পারেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী।
বিজেপির এক নেতা মানলেন, রাহুল গাঁধী তড়িঘড়ি না গেলে হয়ত বিজেপি নেতাদের ঢল নামত না। এক সময় বাজপেয়ীর কিডনির সমস্যার খবর পেয়ে রাজীব গাঁধী ফোন করেছিলেন। রাজীব তখন প্রধানমন্ত্রী। বাজপেয়ীকে কিছুটা জোর করেই এক প্রতিনিধি দলের সদস্য করে নিয়ে গিয়েছিলেন আমেরিকায়। সেখানে তাঁর চিকিৎসা হয়। পরে বাজপেয়ী নিজেই জানিয়েছিলেন, ‘‘আজ যে আমি বেঁচে রয়েছি, সেটা রাজীব গাঁধীর জন্যই।’’ রাজীব-পুত্র রাহুল আজ সেই সৌজন্যই দেখালেন।
আর এতটা ক্ষিপ্রতার সঙ্গে তা দেখালেন, গোটা বিজেপি শিবিরকেই যা নাড়িয়ে দিয়েছে। এইমস সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁরা আডবাণী ছাড়া আর কেউই আসবেন বলে ভাবেননি।
হাসপাতালে: অসুস্থ অটলবিহারী বাজপেয়ীকে দেখতে এইমসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর সঙ্গে কথা বলছেন বাজপেয়ীর পালিত কন্যার স্বামী রঞ্জন ভট্টাচার্য। সোমবার নয়াদিল্লিতে। পিটিআই
দিল্লির কৃষ্ণ মেনন মার্গে বাজপেয়ীর বাড়িতে সব সময়েই চিকিৎসকরা থাকেন। আজ বুকে যন্ত্রণার পরে বাজপেয়ীর পালিতা কন্যা নমিতা ও জামাই রঞ্জন ভট্টাচার্যের সঙ্গে কথা বলে চিকিৎসকেরা এইমসে নিয়ে যাওয়ারই সিদ্ধান্ত নেন। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকেরা প্রথমে জানিয়ে ছিলেন, রুটিন চেক-আপের জন্য বাজপেয়ীকে এইমসে আনা হয়েছে। চিন্তার কিছু নেই। রণদীপ গুলেরিয়ার অধীনে তাঁর চিকিৎসা চলছে।
আরও পড়ুন: মোদীকে খোঁচা, রাহুলের অস্ত্র ম্যাক-কোক!
রাতে অবশ্য চিকিৎসকেরা জানান, শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ আর কিডনি সমস্যার জন্য বাজপেয়ীর চিকিৎসা চলছে। ডায়ালিসিস চলছে। আইসিইউ-তে রাখা হয়েছে তাঁকে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্যের উপরে নজর রাখতে আরও কয়েক দিন তাঁকে হাসপাতালেই রাখা হবে বলে এইমস সূত্রে জানানো হয়েছে। বাজপেয়ী যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, গুলেরিয়া তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ছিলেন। এর সঙ্গেই নেফ্রোলজির চিকিৎসক সৌমিত্র বাগচি, গ্যাসট্রোর প্রমোদ গর্গ, কার্ডিয়োলজির শিব চৌধুরি, মেডিসিনের নবনীত উইগ এই টিমে রয়েছেন। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে এর আগেও বেশ কয়েক বার এইমসে আনা হয়েছিল। পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হওয়ার পরে অনেক বছর ধরে ৯৩ বছরের এই প্রবীণ নেতা প্রায় শয্যাশায়ী।