সাভারকর: চাপেও রাহুল অনড়ই

কংগ্রেস শাসিত মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেসের সেবাদলের বিলি করা পুস্তিকায় সাভারকরের উল্লেখ নিয়ে বিতর্ক চলছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২০ ০২:৫৫
Share:

রাহুল গাঁধী। ছবি: এএফপি।

বিদেশ থেকে ফিরে এসে রামলীলায় সভায় রাহুল গাঁধী বলেছিলেন, ‘‘আমার নাম রাহুল সাভারকর নয়, আমার নাম রাহুল গাঁধী।’’

Advertisement

নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের বিভাজনের রাজনীতি থেকে মোড় ঘুরিয়ে অর্থনীতির বেহাল দশা, বেকারি, কৃষি সঙ্কটের মতো বিষয়ে আলোচনা ফিরিয়ে আনার মোক্ষম মঞ্চ ছিল রামলীলার সভাটি। কিন্তু সেখানেও বিনায়ক দামোদর সাভারকরের কথা তুলে রাহুল শুধু বিজেপি-সঙ্ঘের হাতেই নতুন অস্ত্র তুলে দেননি, মহারাষ্ট্রে নতুন শরিক শিবসেনার অস্বস্তিও বাড়িয়েছেন। কিন্তু কংগ্রেসের শীর্ষ সূত্র বলছে, দলের নেতাদের রাহুল জানিয়েছেন, ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নে তিনি ‘আপস’ করবেন না। শিবসেনাকেও ধর্মনিরপেক্ষতার অবস্থানে আসতে হবে জোটধর্ম পালন করে।

এরই মধ্যে, কংগ্রেস শাসিত মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেসের সেবাদলের বিলি করা পুস্তিকায় সাভারকরের উল্লেখ নিয়ে বিতর্ক চলছে। সেই পুস্তিকায় গাঁধী হত্যাকারী নাথুরাম গডসের সঙ্গে সাভারকরের ‘সমকামী’ সম্পর্কের কথা বলা হয়েছে। তবে দিল্লি থেকে এই বিতর্কে জল ঢালার বিন্দুমাত্র চেষ্টা করেনি কংগ্রেস। উল্টে সেবাদলের নেতারা দাবি করছেন, দোমিনিক লাপিয়ের ও ল্যারি কলিন্সের ‘ফ্রিডম অ্যাট মিডনাইট’ বই থেকেই এই তথ্য নেওয়া হয়েছে। কংগ্রেসের রাজ্য নেতারাও বলছেন, সাভারকর কত বার ব্রিটিশদের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন, তা সকলের জানা। বিজেপি-সঙ্ঘ ইতিহাসকে বিকৃত করতে চাইছে বলে প্রকৃত তথ্য সামনে আনে না। যোগী আদিত্যনাথের গেরুয়া বসনে হিংসা, বদলার ভাবনা সাজে না—ক’দিন আগে মন্তব্য করেছিলেন প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরাও।

Advertisement

কিন্তু প্রশ্ন উঠছে কংগ্রেসের মধ্যে থেকেই। বার বার মোদী-শাহের ধর্মের ফাঁদে পা দিয়ে কী ফায়দা তুলতে চাইছেন কংগ্রেসের নেতৃত্ব? মানুষের সমস্যা নিয়ে সরব হওয়ার সুযোগ পেয়েও কেন হাতছাড়া করছেন? যার ফলে অমিত শাহ জোধপুরের জনসভায় ‘কংগ্রেসের মুখিয়া রাহুল গাঁধী’কে নিশানা করে বলছেন, ‘‘লজ্জা হওয়া উচিত কংগ্রেসের। ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির জন্য বীর সাভারকরের মতো মহান ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে এমন বলছে।’’ আরএসএসের জে নন্দকুমার বলছেন, ‘‘খোদ গাঁধী সাভারকরকে উচ্চস্থানে রাখতেন, রাহুল গাঁধী নীচু স্তরে যাচ্ছেন।’’ উমা ভারতী বলছেন, ‘‘কংগ্রেস মনোরোগ বিশেষজ্ঞকে দেখাক।’’ অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভার সভাপতি স্বামী চক্রপাণি বলছেন, ‘‘আমরা তো শুনেছি রাহুল গাঁধীও সমকামী।’’

এ সবের মধ্যে শিবসেনার কী ভূমিকা? বিজেপির পাশাপাশি যারা এত দিন সাভারকরকে ‘ভারতরত্ন’ দেওয়ার দাবি তুলত!

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী বলছেন, ‘‘গেরুয়া এখন সেনার ভেক, আসলে কংগ্রেসের রং লেগেছে তাদের গায়ে।’’ সাভারকরের নাতি রঞ্জিতও বলছেন, ‘‘আমি মামলা করছি, উদ্ধব ঠাকরেও করুন।’’ রামলীলায় রাহুলের মন্তব্যের পর তেড়েফুঁড়ে শিবসেনার সঞ্জয় রাউত বলেছিলেন, ‘‘সাভারকর ভগবান। কেউ যেন অপমান না করেন।’’ কংগ্রেসের অনড় অবস্থানের পর আজ সেই সঞ্জয় বলেন: ‘‘সাভারকর মহান ছিলেন, থাকবেন। একটি অংশ বিরুদ্ধে বলছেন, এটি তাদেরই নোংরা মনের পরিচয়।’’

রাতে অবশ্য আরএসএস জানায়: ‘ফ্রিডম অ্যাট মিডনাইট’ বইয়ে সমকামিতা নিয়ে ভুল তথ্য ছিল। সাভারকরের ছেলের করা মামলায় লেখক ও প্রকাশক আদালতের বাইরে ক্ষমা চেয়ে নেন। পরের সংস্করণে ভুল শুধরে নেওয়া হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement