Rahul Gandhi

লাদাখেই চিন নিয়ে রাহুলের তোপে মোদী

রাহুল স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশে নিয়ে বলেছেন, “স্থানীয় বাসিন্দারাই বলছেন, তাঁদের পশুচারণের জমি চিনা সেনার দখলে চলে গিয়েছে। সেটা নিয়ে ওঁরা খুবই উদ্বিগ্ন।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০২৩ ০৬:৫৬
Share:

প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর ৭৯তম জন্মদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য পুত্র রাহুল গান্ধীর। ছবি: পিটিআই।

আগামী লোকসভা ভোটে নরেন্দ্র মোদীর দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদ নিয়ে ঢাক পেটানোর জবাবে তিনি যে মোদী জমানায় লাদাখে চিনের জমি দখলের অভিযোগ তুলতে চাইছেন, তা আজ রাহুল গান্ধী স্পষ্ট করে দিলেন। যে লাদাখে চিনের সেনা ভারতের জমিতে ঢুকে বসে রয়েছে বলে কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের অভিযোগ, সেই লাদাখে দাঁড়িয়েই আজ রাহুল গান্ধী নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করলেন। তাঁর দাবি, ভারতীয় ভূখণ্ড চিনের দখলে চলে যায়নি বলে প্রধানমন্ত্রী যে দাবি করেছেন, তা মিথ্যা। যে প্যাংগং হ্রদের একাংশে চিনের সেনা ভারতীয় সেনার দখলে থাকা এলাকায় ঢুকে পড়েছিল, সেই প্যাংগং হ্রদের পাশেই আজ রাজীব গান্ধীর জন্মদিনে তাঁর ছবিতে পুষ্পার্ঘ্য দেন রাহুল। সেই সঙ্গে মোদী সরকারকে তীব্র আক্রমণ করে রাহুল আজ বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বলছেন, ভারতের এক ইঞ্চিও জমি চিনের দখলে নেই। এটা একেবারেই সত্য নয়, এখানে যে কাউকে প্রশ্ন করলেই সেটা জানা যাবে।”তিন বছর আগে গলওয়ানে ভারত ও চিনের সেনার মধ্যে সংঘর্ষের পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সর্বদলীয় বৈঠকে বলেছিলেন, কেউ ভারতের জমিতে ঢুকে আসেনি। কেউ ভারতের জমিতে ঢুকে বসে নেই। ভারতের সেনার কোনও চৌকিও কারও দখলেই নেই। এই বিবৃতির পরেই প্রশ্ন উঠেছিল, মোদী কি এ কথা বলে চিনের সুবিধা করে দিলেন? চিনের সেনা ভারতের জমিতে না ঢুকলে ভারতীয় সেনার সঙ্গে সংঘর্ষ হল কোথায়? গত তিন বছরে ১৯ বার ভারত-চিনের সেনার বৈঠক হলেও সেই বিবাদ মেটানো যায়নি। গত সপ্তাহেও বৈঠক ব্যর্থ হয়েছে।

Advertisement

আজ রাহুল লাদাখে দাঁড়িয়ে ফের এ নিয়ে প্রশ্ন তোলায় বিজেপি অভিযোগ তুলেছে, রাহুলের কথা শুনে মনে হচ্ছে তিনি চিনের প্রচারযন্ত্রের মতো করে কথা বলছেন! উল্টো দিকে রাহুল স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশে নিয়ে বলেছেন, “স্থানীয় বাসিন্দারাই বলছেন, তাঁদের পশুচারণের জমি চিনা সেনার দখলে চলে গিয়েছে। সেটা নিয়ে ওঁরা খুবই উদ্বিগ্ন।’’ লাদাখের অভ্যন্তরীণ সমস্যার কথাও তিনি তুলেছেন। যে ভাবে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের পরে লাদাখও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত হয়েছে, তা নিয়ে বাসিন্দাদের ক্ষোভ রয়েছে বলে তাঁর দাবি। ‘‘এখানকার মানুষ বলছেন, তাঁরা চান জনপ্রতিনিধি,’’ বলেছেন রাহুল।

রাহুলের কথার প্রতিবাদ করে বিজেপি সাংসদ রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, ‘‘রাহুল গান্ধী, আপনি গলওয়ানে আমাদের সেনাদের সাহস আর আত্মত্যাগ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন! কেন আপনি ভারতকে অসম্মান করছেন? কেন আপনি চিনের প্রচারযন্ত্রের ভূমিকা পালন করছেন? আর যাই করুন, ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর মনোবল ভাঙার চেষ্টা করবেন না। কংগ্রেস তো বালাকোট আর উরি অভিযানের প্রমাণ চেয়েছিল! ওদের কাছে আর কীই বা আশা করব?’’ ভারত-বিরোধী কথা বলা রাহুলের স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করে রবিশঙ্করের তোপ— ‘‘জিজ্ঞেস করতে চাই, ১৯৬২-র যুদ্ধের আগে-পরে চিন কতখানি ভূখণ্ড দখল করেছিল, ওঁর মনে আছে কি?’’ প্রায় একই সুরে আক্রমণ শানিয়েছেন বিজেপি সাংসদ, কংগ্রেস-প্রাক্তনী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াও। তিনিও টেনে এনেছেন নেহরু-প্রসঙ্গ। সিন্ধিয়ার প্রশ্ন, ‘‘যে কংগ্রেস এক সময় ‘হিন্দি-চিনি ভাই ভাই’ স্লোগান তুলেছিল আর ৪৫ হাজার বর্গ কিলোমিটার জমি চিনকে ছিনিয়ে নিতে দিয়েছিল, তারা আগে নিজেদের দিকে তাকাক।’’ অন্য দিকে রাহুলের পাশে দাঁড়িয়ে উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনার নেতা সঞ্জয় রাউতের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী বাস্তবকে অস্বীকার করছেন।

Advertisement

এই সপ্তাহেই ব্রিকস সম্মেলনে দেখা হবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর। গত সপ্তাহে লাদাখের বিবাদ মেটাতে ভারত-চিনের সেনাকর্তাদের ১৯তম বৈঠকেও চিন ডেপসাং ও ডেমচক দু’টি এলাকা থেকে নিজেদের সেনা সরাতে রাজি হয়নি। তিন বছর আগে আচমকাই গলওয়ান উপত্যকায় ভারতীয় এলাকায় চিনের সেনা ঢুকে আসার পর থেকেই সেনা প্রত্যাহার নিয়ে আলোচনা চলছে। ডেপসাং এলাকায় চিন সেনাদের উপস্থিতির ফলে ওই এলাকায় নজরদারি চালাতে পারছে না ভারত। ফলে দৌলত বেগ ওল্ডি এয়ার স্ট্রিপ অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ডেমচকেও রণকৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চিন সেনা ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে।

কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের মন্তব্য, নরেন্দ্র মোদী আসলে নিজের ভাবমূর্তি নিয়ে বেশি চিন্তিত। তাই চিনকে ‘ক্লিনচিট’ দিচ্ছেন। কংগ্রেস শিবিরের বক্তব্য, রাহুল প্যাংগং হ্রদে গেলে মোদী কেন যেতে পারেন না?আজ রাহুল প্যাংগং-এর পাশে প্রয়াত পিতার স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘‘ভারতজোড়ো যাত্রার সময়েই আমার এখানে আসার কথা ছিল। তখন হয়নি। ঠিক করেই রেখেছিলাম, পরে আসব। নুব্রা উপত্যকা আর কার্গিলেও আমি যাব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement