দল ঢেলে সাজা শুরু রাহুলের

দলের বর্ষীয়ান নেতাদের উষ্মা মেটাতে সনিয়া গাঁধী যখন আসরে নেমেছেন, সেই সময় তলে তলে দলের সাংগঠন ঢেলে সাজার কাজটি শুরু করে দিলেন রাহুল গাঁধী।

Advertisement

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৬ ০৩:১৪
Share:

দলের বর্ষীয়ান নেতাদের উষ্মা মেটাতে সনিয়া গাঁধী যখন আসরে নেমেছেন, সেই সময় তলে তলে দলের সাংগঠন ঢেলে সাজার কাজটি শুরু করে দিলেন রাহুল গাঁধী।

Advertisement

সদ্য হওয়া বিধানসভা নির্বাচনে ভাল ফল না-হলেও উত্তরপ্রদেশের ভোটের আগে রাহুলকে সভাপতি করা নিয়ে প্রবল চাপ রয়েছে। একই সঙ্গে প্রবীণদের সরিয়ে নবীনদের নিয়ে একটি নতুন ঝাঁ-চকচকে টিম গঠনের পরামর্শ দিচ্ছেন অনেকে। তবে রাহুল গাঁধীকে কবে সভাপতি করা হবে, তা নিয়ে দলের কোনও নেতাই স্পষ্ট কিছু বলতে পারছেন না। তবে প্রায় সব নেতাই একবাক্যে বলছেন— এই মুহূর্তে রাহুলই কার্যত সভাপতি। শুধু আনুষ্ঠানিক ঘোষণাটুকুর অপেক্ষা। সেই ঘোষণার আগে রাহুল সংগঠনে রদবদলের ক্ষেত্রটিও প্রস্তুত করে ফেলতে চাইছেন। কী ভাবে?

কংগ্রেসের শীর্ষ সূত্রের মতে, একটি নতুন পরামর্শদাতা কমিটি গঠনই তার প্রথম প্রমাণ। ইউপিএ জমানায় জাতীয় পরামর্শদাতা পর্ষদ গড়ে সনিয়া গাঁধীকে ক্যাবিনেট মন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। এ বারেও বিভিন্ন বিষয়ে দলের অবস্থান নির্ধারণ করতে এই কমিটি গড়ার কথা ভাবা হচ্ছে। কিন্তু ফারাক একটাই।
সেখানে সনিয়া ছাড়া বাকিরা ছিলেন বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞ। আর রাহুলের নতুন কমিটিতে থাকবেন কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যরাই। তাঁরাই কথা বলবেন বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে।

Advertisement

কংগ্রেসের এক নেতার বক্তব্য, যদি এই ভাবনাটি শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়, তা হলে ভবিষ্যতে এই পরামর্শদাতা কমিটিতেই হয়তো দলের প্রবীণদের ঠাঁই হতে চলেছে। সে ক্ষেত্রে নবীনদের নিয়ে রাহুল নিজের টিম গড়তে পারবেন। সে ক্ষেত্রে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, দীপেন্দ্র হুডা, অশোক তানওয়ার, জয়রাম রমেশ, সুস্মিতা দেব, আর পি এন সিংহ, প্রিয়া দত্ত, গৌরব গগৈ, শৈলজা, কে সি বেণুগোপাল, মিলিন্দ দেওরা, জিতিন প্রসাদ, কে রাজুর মতো নবীন মুখরা সে ক্ষেত্রে রাহুলের টিমে গুরুত্বপূর্ণ স্থান পেতে পারেন।

দ্বিতীয়ত, শুধু কেন্দ্রীয় নীতি নির্ধারক কমিটিতেই নয়, রাজ্য স্তরেও সংগঠনকে ঢেলে সাজা নিয়ে কৌশল রচনা
করছেন রাহুল গাঁধী। কংগ্রেস সহ-সভাপতির ঘনিষ্ঠ এক নেতা আজ বলেন, ‘‘বিশেষ করে জেলা সভাপতির পদটি আরও ওজনদার করতে চাইছেন রাহুল। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, জেলায় জেলায় আসল প্রভাবশালী নেতা নিজের ‘ডামি’ ব্যক্তিকে জেলা সভাপতি পদে বসিয়ে রাখেন।’’ তিনি জানান, রাহুল স্পষ্ট নির্দেশ দিচ্ছেন— যিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন, যাঁর প্রভাব আছে, এমন ব্যক্তিকেই জেলা সভাপতি পদে বসাতে হবে। ভবিষ্যতে স্থানীয় নির্বাচনের কোনও প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ দিল্লি করবে না।

তৃতীয়ত, কেন্দ্রে মোদী সরকার আসার পর থেকে এক এক করে রাজ্য কংগ্রেসের থেকে হাতছাড়া হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে রাহুলের নির্দেশ, কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের ডেকে সম্মেলন করে তাঁদের সাফল্য মেলে ধরা। অতীতে বিরোধী দলে থাকার সময় বিজেপি ঠিক এই কাজটিই করত। দিল্লিতে বিজেপি শাসিত মুখ্যমন্ত্রীদের ডেকে ‘সুশাসন’ তুলে ধরা হতো। পরে নরেন্দ্র মোদী সেই নজির তুলেই মনমোহন সিংহ সরকারের তুলোধনা করতেন। রাহুল চাইছেন, এ বারে কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলির কয়েকটি দৃষ্টান্তকারী প্রকল্প তুলে ধরে মোদী সরকারের ব্যর্থতাকে বড় করে দেখানো হবে। অন্য রাজ্যকেও সেটি অনুসরণ করতে বলা হবে।

কংগ্রেসের এক নেতার মতে, ‘‘দলের কাঠামো বদলের কাজ ইতিমধ্যেই তলে তলে শুরু করে দিয়েছেন রাহুল গাঁধী। তার পর তাঁকে কবে সভাপতি করা হবে, সেটি সভানেত্রীর সিদ্ধান্ত।’’ বিজেপির রাজীবপ্রতাপ রুডির অবশ্য কটাক্ষ, ‘‘রাহুল গাঁধী কবে সভাপতি হবেন, তার জন্য আমরাও অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রয়েছি। কংগ্রেসের কাছে কি না জানি না, রাহুলের উত্থান অন্তত বিজেপির কাছে সুখবর।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement