কেরলের চাপ ওড়াতেই জোরালো জোটের গন্ধ

রাজ্যটা কেরল হলেও গত কাল নেহাত বুড়ি ছোঁয়া ভাবেই বামেদের সমালোচনা করেছিলেন রাহুল গাঁধী। তা দেখে আজ তাঁর উপরে চাপ বাড়িয়েছিলেন রাজ্যের কংগ্রেস নেতারা। কিন্তু সেই চাপ উপেক্ষা করেই কেরল সফরের শেষ দিনেও বামেদের সম্পর্কে কার্যত নীরব রইলেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি। উল্টে যা বললেন, তাতে আরও জোরদার হল বাংলায় বামেদের সঙ্গে কংগ্রেসের জোটের সম্ভাবনা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:৫৩
Share:

বুধবার তিরুঅনন্তপুরমে। — পিটিআই

রাজ্যটা কেরল হলেও গত কাল নেহাত বুড়ি ছোঁয়া ভাবেই বামেদের সমালোচনা করেছিলেন রাহুল গাঁধী। তা দেখে আজ তাঁর উপরে চাপ বাড়িয়েছিলেন রাজ্যের কংগ্রেস নেতারা। কিন্তু সেই চাপ উপেক্ষা করেই কেরল সফরের শেষ দিনেও বামেদের সম্পর্কে কার্যত নীরব রইলেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি। উল্টে যা বললেন, তাতে আরও জোরদার হল বাংলায় বামেদের সঙ্গে কংগ্রেসের জোটের সম্ভাবনা।

Advertisement

বামেদের হাত ধরার ব্যাপারে কেরলের কংগ্রেস নেতাদের যে আপত্তি আছে সেটা গত ১ ফেব্রুয়ারি অধীর চৌধুরীদের সঙ্গে বৈঠকেই স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন রাহুল। একই সঙ্গে এ-ও বলেছিলেন, অন্য রাজ্যের কী বাধ্যবাধকতা, তা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের নেতাদের মাথা ঘামানোর দরকার নেই। সেই বৈঠকে হাজির প্রদেশ কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নানের কথায়, ‘‘রাহুল গাঁধী আমাদের বলেন, এক একটি রাজ্যের রাজনৈতিক গতিশীলতা এক এক রকম। জাতীয় রাজনীতির জন্য বা কোনও একটি রাজ্যের জন্য অন্য রাজ্যকে আপস করতে বলব না।’’ সে দিন রাহুলের সঙ্গে কথা বলে জোটের ব্যাপারে আশাবাদী হয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা। তবে তাঁরা তাকিয়ে ছিলেন রাহুলের কেরল সফরের দিকেও। সে রাজ্যে দলের সতীর্থদের আপত্তি তিনি কী ভাবে সামাল দেন সেটা দেখার জন্য।

কেরলে যে হেতু কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ সরকারের প্রধান প্রতিপক্ষ বামেরা, তাই এ কে অ্যান্টনি, রমেশ চেন্নিথালার মতো নেতারা চেয়েছিলেন, ভোটের মুখে রাজ্যে এসে বামেদের উপরেই খড়্গহস্ত হোন রাহুল। সিপিএমের পিনারাই বিজয়নরাও যেমন চাইছেন বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে জোট সম্ভাবনা নাকচ করতে। রাহুল কিন্তু কেরলের কংগ্রেস নেতাদের হতাশই করেছেন। গত কাল প্রকাশ্য সভায় তাঁর নিশানায় ছিল বিজেপি। আজ ঘরোয়া আসরেও তাই।

Advertisement

এ দিন কেরল প্রদেশ কংগ্রেসের এগ্‌জিকিউটিভ কমিটির নেতাদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেন রাহুল। সূত্রের খবর, বাংলায় বাম-কংগ্রেস জোটের পথ আগলে দাঁড়ানোর ব্যাপারে আগাম কৌশল নিয়েছিলেন প্রদেশ নেতারা। এ বিষয়ে রাহুলের সামনে তাঁরা সমস্বরে দাবি জানান। কেরল কংগ্রেসের পারস্পরিক রেষারেষির অন্ত নেই। কিন্তু বামেদের সঙ্গে জোটের প্রশ্নে ইদানীং বাংলা কংগ্রেসে যেমন বিরল ঐক্য হয়েছে, জোটের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে তেমনই ঐক্য দেখান কেরলের নেতারা।

বৈঠকের শুরুতেই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ভি এম সুধীরণ রাহুলকে বলেন, বাংলায় কংগ্রেস যদি বামেদের সঙ্গে জোটের কথা ভাবে, তা হলে ভুল হবে। কারণ, সিপিএম নির্ভরযোগ্য শরিক নয়। বিহারে মহাজোটের থেকে আলাদা হয়ে লড়ে সিপিএম ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে দুর্বল করার চেষ্টা করেছে। এর পরেও বামেদের সম্পর্কে কড়া কথা বলেননি রাহুল। উল্টে কেরল কংগ্রেসের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, সিপিএম নয়, রাজ্যে কংগ্রেসকে হারাতে পারে কংগ্রেসই। অতএব ভোট না-হওয়া পর্যন্ত নেতারা দ্বন্দ্ব ভুলে একসঙ্গে চলুন। জয় আপনিই আসবে। সঙ্গে সরস মন্তব্য, ‘নিজেদের মধ্যে লড়াইয়ের সময় পরেও পাওয়া যাবে!’

কংগ্রেস সূত্রের খবর, কেরলের নেতাদের এ দিন রাহুল বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, বাংলায় বামেদের সঙ্গে জোটের ব্যাপারে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তিনি নেননি। তবে এক রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভেবে অন্য রাজ্যের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা তাঁর ধাতে নেই। পাশাপাশি বিহারে মহাজোটের সাফল্যের প্রসঙ্গ তুলে বাংলায় জোটের ব্যাপারেও যে তিনি আশাবাদী, রাহুল সে কথাই বুঝিয়ে দিয়েছেন বলে সূত্রের মত।

কেরল সফরে রাহুলের অবস্থান দেখে স্বাভাবিক ভাবেই বাংলার কংগ্রেস নেতারা স্বস্তিতে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘কেরলের নেতারা রাহুল গাঁধীকে কী জানিয়েছেন, আমি জানি না। তবে বাংলায় কংগ্রেস এবং সিপিএমের নিচুতলার কর্মীদের মধ্যে জোটের আবহ যে তৈরি হয়ে গিয়েছে, তা তাঁকে জানিয়েছি। তাঁর চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছি।’’ আর মান্নানের মতে, ‘‘বাংলায় বাম-কংগ্রেস জোট হলে কেরলে কোনও ফারাক হওয়ার কথা নয়। কারণ, এ জন্য অস্বস্তি হলে দুই দলেরই হবে।’’

অনেকেই মনে করছেন, কেরল সফরে গিয়ে রাহুল বামেদের ব্যাপারে যে অবস্থান নিয়েছেন, তা আলিমুদ্দিনের নেতাদের স্বস্তি দিয়েছে। পরশু পশ্চিমবঙ্গে সিপিএম রাজ্য কমিটির বৈঠক। তার আগে রাহুল বামেদের উদ্দেশে নেতিবাচক মন্তব্য করলে জোটের ব্যাপারে যুক্তি সাজাতে বঙ্গ সিপিএমের নেতাদের অসুবিধা হতো। সেটা প্রকাশ কারাটদের কাছে জোট আলোচনা ভেস্তে দেওয়ার হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারত।

রাহুলের কেরল সফরের নজর রেখেছিল বিজেপি-ও। সিদ্ধার্থনাথ সিংহ এ দিন বলেন, ‘‘রাহুল বলেছেন, বামেদের মতাদর্শ অচল। তা হলে বাংলায় কেন বামেদের সঙ্গে জোট সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছেন? মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে যে কোনও জিনিসই তো বিষাক্ত হয়ে যায়!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement