রামলীলা ময়দান থেকে বার্তা রাহুল গান্ধীর। ছবি: পিটিআই
‘ভারত জোড়ো’-র আগে রাহুল গান্ধী কংগ্রেসের সঙ্গে বিরোধীদের জোড়ার বার্তা দিলেন। রবিবাসরীয় দুপুরে রাহুল দিল্লির রামলীলা ময়দান থেকে বলেছেন, ‘‘লড়াইটা বিচারধারার। কংগ্রেসের বিচারধারা আর তার সঙ্গে যে সমস্ত বিরোধী দল রয়েছে, সকলে একসঙ্গে মিলে বিজেপি ও আরএসএসের বিচারধারাকে হারাব।’’
মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে ‘হাল্লা বোল’ জনসভায় নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করে রাহুল বলেছেন, দুই শিল্পপতি এখন প্রধানমন্ত্রীকে ‘নিয়ন্ত্রণ’ করছেন। এই দুই শিল্পপতি প্রধানমন্ত্রীর জন্য ২৪ ঘণ্টা কাজ করেন। নরেন্দ্র মোদীও তাঁদের জন্য ২৪ ঘণ্টা কাজ করেন। তাঁদের ছাড়া মোদী প্রধানমন্ত্রীই হতে পারবেন না।
এই পরিস্থিতিতে রাহুলের মত, শুধু কংগ্রেস নয়, সমস্ত বিরোধীদের সামনেই রাস্তায় নামাটা এখন একমাত্র রাস্তা। গত মে মাসে উদয়পুরে দলের চিন্তন শিবিরের শেষে রাহুলই বলেছিলেন, বিজেপির বিরুদ্ধে আঞ্চলিক দলগুলির পক্ষে লড়াই করা সম্ভব নয়। শেষ দিনে রাহুল বলেছিলেন, ‘‘আঞ্চলিক দলগুলির নিজস্ব পরিসর রয়েছে। কিন্তু তারা বিজেপিকে হারাতে পারবে না। কারণ তাদের কোনও মতাদর্শই নেই।’’ সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ৭ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’-য় কংগ্রেস অন্য বিরোধী দলগুলিকে আহ্বান জানিয়েছিল। আজ দিল্লিতে খোদ রাহুল বিরোধীদের সঙ্গে মিলে বিজেপি-আরএসএসের মতাদর্শকে হারানোর কথা বলেছেন।
বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার, তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও সম্প্রতি বিজেপির বিরুদ্ধে সব দলকে একজোট করার কথা বলেছেন। আজ রাহুলের মুখেও তারই প্রতিধ্বনি শোনা গিয়েছে। কিন্তু কী ভাবে কংগ্রেস বিরোধীদের একজোট করবে, তা নিয়ে রাহুল মুখ খোলেননি।
মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সাধারণ মানুষের দুর্দশার কথা বলতে গিয়ে আজ রাহুল মুখ ফসকে বলেন, আটার দাম ইউপিএ আমলে ২২ টাকা প্রতি ‘লিটার’ ছিল। এখন ৪০ টাকা প্রতি ‘লিটার’ হয়েছে। তৎক্ষণাৎ সংশোধন করে কেজি বললেও বিজেপি তা নিয়ে বিদ্রুপ করতে মাঠে নেমে পড়েছে। বিজেপি মুখপাত্র সম্বিত পাত্রর কটাক্ষ, ‘‘আটা কঠিন বস্তু না তরল, রাহুল গান্ধী সেটাই জানেন না। অথচ সব বিষয়ে কথা বলেন।’’ কংগ্রেসের পাল্টা মন্তব্য, ‘‘লিটার ছেড়ে মোদী আমজনতার চিন্তা করুন।’’
রাহুল রবিবার সকালেই বিদেশ থেকে ফেরেন। তার পরেই রামলীলার জনসভায় যোগ দেন। রাহুল বলেন, ‘‘একে দেশে বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি, অন্য দিকে দেশের সমস্ত সম্পদ দুই শিল্পপতির হাতে। এ কদিকে তাঁদের সংবাদমাধ্যমের উপরে নিয়ন্ত্রণ, অন্য দিকে প্রধানমন্ত্রীর উপর নিয়ন্ত্রণ। নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী ঠিকই। কিন্তু গ্যারান্টি দিয়ে বলছি, ওই দুই শিল্পপতিকে ছাড়া নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না।’’ টানা পাঁচ মাস ধরে ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রার পক্ষে রাহুল আজ যুক্তি দিয়েছেন, শুধু কংগ্রেস নয়, বিরোধীদের সামনে রাস্তায় নামা ছাড়া আর কোনও রাস্তা নেই। জনতার মাঝে গিয়েই জনতার সামনে সত্যটা বলতে হবে। বিরোধী দলের সঙ্গে সমাজকর্মী, এনজিও-দেরও পাশে টানতে রাহুলের বক্তব্য, শুধু বিরোধী দল নয়, সমাজকর্মী থেকে এনজিও, যারাই মোদীর বিরুদ্ধে কথা বলছেন, তাদেরই নিশানা করা হচ্ছে। রাহুল বলেন, ‘‘আমাকে ইডি ৫৫ ঘন্টা বসিয়ে রেখেছিল। নরেন্দ্র মোদীকে বলতে চাই, আমি আপনার ইডি-কে ভয় পাই না। আপনি ৫৫, ১০০, ২০০ বা ৫০০ ঘণ্টা, ৫ বছর জিজ্ঞাসাবাদ করুন, কিচ্ছু এসে যায় না।’’