লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের ভরাডুবির কারণ শুধু নরেন্দ্র মোদী-ঝড় নয়। ভোটের দু’বছর আগে থেকে কংগ্রেসের ঔদ্ধত্যকেও এই হারের জন্য দায়ী করলেন স্বয়ং রাহুল গাঁধী। আর সে কথা বলে বিজেপির হাতেই অস্ত্র তুলে দিলেন কংগ্রেসের সহ-সভাপতি।
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলে-য় এ দিন নিজের প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রস্তুতির কথা বলে মোদীকেও এক হাত নিয়েছেন রাহুল। একই সঙ্গে অকপটে কবুল করেছেন কংগ্রেসের অবক্ষয়ের কারণও। তাঁর মতে, দশ বছর কোনও দল ক্ষমতায় থাকলে অবক্ষয় আসে। দল মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়। রাহুল জানান, ২০১২ সাল থেকেই ঔদ্ধত্য এসেছে দলে। ঘটনা হল, রাহুল নিজে দলের সহ-সভাপতি হয়েছেন ২০১৩ সালে, লোকসভা ভোটের কয়েক মাস আগে। অনেকেই বলছেন, ২০১২ থেকেই দলে ঔদ্ধত্যের কথা বলে রাহুল কার্যত নিজের উপর থেকে হারের দায় ঝেড়ে ফেললেন।
বস্তুত বিজেপিও সেটাই বলেছে। রাহুলের মন্তব্যের মোকাবিলায় দল দ্রুত আসরে নামায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানিকে। যিনি গত লোকসভা ভোটেই অমেঠীতে রাহুলের বিরুদ্ধে ভোটে লড়ে হেরেছিলেন। তা ছাড়া, বরাবরই রাহুল সম্পর্কে কড়া কথা বলতে পটু স্মৃতি। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘কংগ্রেসের যে ঔদ্ধত্যের কথা রাহুল বলেছেন, সেটি তো খোদ তাঁর মা সনিয়া গাঁধীর আমলে! কারণ, রাহুল সহ-সভাপতি হয়েছেন ২০১৩ সালে। আর ২০১২ সালে ঔদ্ধত্য এলে, সে সময় কংগ্রেসের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন তো সনিয়া গাঁধী!’’ একই সঙ্গে স্মৃতি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীকে খাটো করে রাহুলের মন্তব্যে বিস্মিত নই। এ সব কথা আগেও বলেছেন তিনি। কিন্তু মানুষ ভোট দিয়ে আস্থা প্রকাশ করেছেন নরেন্দ্র মোদীর উপরেই।’’
থেমে থাকেননি কলকাতায় বিজেপি সভাপতি অমিত শাহও। তিনি বলেন, ‘‘পরিবারতন্ত্র, জাতিবাদ, তোষণের রাজনীতিকে খতম করেছে নরেন্দ্র মোদীর দল। এখন কাজের রাজনীতিই শেষ কথা।’’ এর পরেই রাহুলকে সরাসরি কটাক্ষ করে অমিত বলেন, ‘‘অনেক নেতাই আমেরিকায় গিয়ে বক্তৃতা দেন। দেশ তাঁদের কথা শোনে না!’’
স্মৃতির মতে, প্রধানমন্ত্রীকে রাহুলের আক্রমণ একটি ব্যর্থ কৌশল। একই ভাবে পরিবারের ব্যর্থ উত্তরসূরি হিসেবে রাহুল ভারতের ভুল ছবি বিদেশে তুলে ধরেছেন। স্মৃতির কথায়, ‘‘রাহুল ভুলে যাচ্ছেন, এই মুহূর্তে রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী সকলেই গরিব ঘরে জন্ম নিয়ে কোনও পরিবারতন্ত্র ছাড়াই আজ শীর্ষ পদে। আর রাহুল এটিও ভুলে যাচ্ছেন, বিদেশের মাটিতে এ কথা বললেও ভোট দেবেন দেশের মানুষ।’’
স্মৃতির মন্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে কংগ্রেসের আনন্দ শর্মা বলেন, ‘‘বিদেশের মাটিতে ভারতীয়দের অপমান করার প্রথা শুরু করেছেন নরেন্দ্র মোদীই। প্রথম বিদেশ সফরে গিয়েই তিনি ভারতীয়দের দুর্নীতিগ্রস্ত বলেছিলেন!’’ আর কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘পরিবারতন্ত্র নিয়ে কংগ্রেসকে না দুষে বিজেপি আগে নিজেদের তালিকা খতিয়ে দেখুন।’’