রাহুল-প্রিয়ঙ্কাকে গাড়িতে তুলে দ্রুতগতিতে উধাও পুলিশ

পুলিশের ধাক্কায় এক সময় মাটিতে পড়ে যান রাহুল গাঁধী। উঠে দাঁড়ানোর পর তাঁর সঙ্গে পুলিশের আরও একপ্রস্ত ধস্তাধস্তি শুরু হয়।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

লখনউ শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২০ ১৪:২৩
Share:

উত্তরপ্রদেশ পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি রাহুল গাঁধীর। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া

আশঙ্কাই সত্যি হল। হাথরসের পথে গ্রেফতার করা হল রাহুল গাঁধীকে। তার আগে দেওয়া হল গলাধাক্কা। উত্তরপ্রদেশ পুলিশের ধাক্কায় মাটিতে পড়েই যান সনিয়া-তনয়। শেষ খবর, হাথরসের নির্যাতিতার বাড়ি যেতে না দিয়ে রাহুলকে মাঝপথ থেকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। তার আগে পথের মধ্যেই পুলিশের সঙ্গে রাহুলের তর্কাতর্কি শুরু হয়। কর্তব্যরত পুলিশ অফিসার রাহুলকে বলে, ‘‘আপনি ১৪৪ ধারা ভাঙছেন।’’ পাল্টা রাহুল বলেন, ‘‘১৪৪ ধারার অপব্যবহার করছেন আপনারা।’’

Advertisement

একপ্রস্ত ধস্তাধস্তির পর রাহুল এবং প্রিয়ঙ্কা গাঁধীকে একটি সাদা রঙের মাহিন্দ্রা বোলেরো গাড়িতে তুলে যমুনা এক্সপ্রেসওয়ে ধরে দ্রুতগতিতে উধাও হয়ে যায় উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। গাড়িটি পুলিশেরই। তার গায়ে লেখা, ‘বিটা ২’। দেখায় যায়, সেই গাড়ির চালকের পাশের আসনে মুখে মাস্ক পরে বসে আছেন রাহুল। গাড়ির পাদানির উপরে ঝুলছেন দুই সাফারি পরিহিত নিরাপত্তারক্ষী। পিছনের আসনে ছিলেন প্রিয়ঙ্কা এবং রণদীপ সুরজেওয়ালা। গাড়ির পিছনের দরজা খোলা। সেখান থেকে ঝুলছেন উত্তরপ্রদেশ পুলিশের এক কনস্টেবল। সেই গাড়ির পাশাপাশি ছুটতে দেখা যায় আরও কিছু এসইউভি-কে। অনুমান, সেগুলি কংগ্রেস নেতাদেরই গাড়ি। অন্য দিকে, কিছু কংগ্রেস কর্মী রাস্তা অবরোধ করে বসে পড়েন। তাঁদের বক্তব্য, যত ক্ষণ না রাহুলকে ছাড়া হচ্ছে, তাঁরা অবরোধ তুলছেন না। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত রাহুল-প্রিয়ঙ্কাকে যমুনা এক্সপ্রেসওয়ের পাশে একটি গেস্টহাউসে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখান থেকে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

এ দিন প্রিয়ঙ্কা গাঁধী-সহ কংগ্রেস নেতা-নেত্রীদের প্রতিনিধি দলের একটি কনভয় হাথরসের পথে রওনা হয়। মাঝপথে তাদের প্রথমে আটকে দেওয়া হয়। কিন্তু নাছোড় রাহুল-প্রিয়ঙ্কাও। তাঁরা স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে হেঁটেই রওনা দেন হাথরসের দিকে। রাহুল-প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে ছিলেন বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ তথা লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরীও। দিল্লি-উত্তরপ্রদেশ হাইওয়ের উপরেই তাঁদের কনভয় আটকে দেওয়া হয়।

Advertisement

আগে থেকেই রাহুল-প্রিয়ঙ্কা ঘোষণা করেছিলেন হাথরসে যাওয়ার কথা। কিন্তু আজ বৃহস্পতিবার ১৪৪ ধারা জারি করে যোগী সরকার। তাতেও কর্মসূচি বাতিল করেননি কংগ্রেস নেতা-নেত্রীরা। রাহুল-প্রিয়ঙ্কার কনভয় গ্রেটার নয়ডায় আসতেই আটকে দেওয়া হয়। সেখানে গাড়ি থেকে নেমে উত্তরপ্রদেশ-দিল্লি হাইওয়ে ধরে হাঁটতে শুরু করেছেন তাঁরা। রাহুল প্রিয়ঙ্কাকে যেখানে আটকানো হয়েছে, সেখান থেকে হাথরসের দূরত্ব প্রায় ১৪০ কিলোমিটার। সেখান থেকে কিছু দূরে এগনোর পরেই রাহুল-প্রিয়ঙ্কাদের আটকায় পুলিশ। শুরু হয় ধস্তাধস্তি। রাহুলকে গলাধাক্কা দিতেও দেখা যায় পুলিশকে। পরে গ্রেফতার করা হয় কংগ্রেস সাংসদকে।

Send a message

উত্তরপ্রদেশ পুলিশের অজুহাত, কোভিডের কারণেই রাজ্যে নিয়ন্ত্রণ জারি রয়েছে। সেই কারণেই রাহুল-প্রিয়ঙ্কার কনভয় আটকানো হয়েছে। এক পুলিশ কর্তা বলেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ আটকাতে ১ সেপ্টেম্বর থেকে রাজ্যে প্রবেশের উপর নিয়ন্ত্রণ জারি করা হয়েছিল। সেই নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়ে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত করা হয়েছে। তাঁর দাবি, রাজ্য বহু পুলিশকর্মী করোনা আক্রান্ত।

দেখুন ভিডিয়ো:

গণধর্ষণ ও নির্মম অত্যাচারে হাথরসে দলিত মহিলার মৃত্যুর ঘটনায় দেশ জুড়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। ফের জীবন্ত হয়ে উঠেছে ২০১২ সালে নির্ভয়া গণধর্ষণ কাণ্ডের স্মৃতি। ইতিমধ্যেই দেশের একাধিক জায়গায় হাথরসের ঘটনাকে সামনে রেখে বিক্ষোভ-প্রতিবাদে নেমেছে বিরোধী দলগুলি। বুধবার মুম্বইতে মোমবাতি মিছিল করেন কংগ্রেস কর্মী সমর্থকরা। বৃহস্পতিবার কলকাতাতেও একটি প্রতিবাদ বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়েছে। সেই আন্দোলন আরও জোরদার করতেই হাথরস যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন দুই কংগ্রেস নেতা-নেত্রী।

অন্য দিকে ঘটনার তীব্র নিন্দা করে যোগী সরকার তথা বিজেপির বিরুদ্ধে ধারালো আক্রমণ শানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি টুইট করেছেন, ‘‘হাথরসের দলিত তরুণীকে ঘিরে এই বর্বর এবং লজ্জাজনক কাণ্ডের নিন্দার কোনও ভাষা নেই। নির্যাতিতার পরিবারকে গভীর সমবেদনা জানাই। আরও লজ্জাজনক ঘটনা হল, পরিবারের কারও অনুমতি এবং উপস্থিতি ছাড়াই তরুণীর দেহ সৎকার করে দেওয়া। যারা খালি ভোটের জন্য স্লোগান দেয় আর লম্বাচওড়া প্রতিশ্রুতি দেয় তাদের আসল চেহারাটা সামনে এনে দিচ্ছে এই ঘটনা।’’

হাথরসের জেলাশাসক পি লস্কর সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে আগেই জানিয়েছিলেন, জানিয়েছিলেন, রাহুল- প্রিয়ঙ্কার সফরের কোনও খবর তাঁদের কাছে নেই। তিনি আরও বলেছেন, ‘ অপ্রীতিকর পরিস্থিতি’ এড়াতে জেলার সীমানা সিল করে দেওয়া হয়েছে এবং এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। ঘটনার তদন্তে যে বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করা হয়েছে, তার সদস্যরা এদিন নিহত তরুণীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করবেন বলে জানিয়েছেন লস্কর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement