নরেন্দ্র মোদী (বাঁ দিকে) এবং রাহুল গান্ধী। —ফাইল চিত্র।
মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে শাসক-বিরোধী তরজা অব্যাহত রইল। বিলটি সংসদের দুই কক্ষে নির্বিঘ্নে পাশ হয়ে যাওয়ার পরেও বাগ্যুদ্ধ অব্যাহত রইল কংগ্রেস এবং বিজেপির মধ্যে। শুক্রবার দিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের সামনে প্রধানমন্ত্রী মোদী জানান, দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার থাকার জন্যই রাজনৈতিক স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশ করানো গিয়েছে। মোদীর এই বক্তব্যের কিছু সময় পরেই সাংবাদিক বৈঠক করেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। মোদী সরকারকে তোপ দেগে তিনি দাবি করেন যে, জাতগণনার বিষয়টি থেকে নজর ঘোরাতেই ওই বিল এখন আনা হয়েছে।
শুক্রবার মোদী দেশের মা, বোন এবং কন্যাদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “আমরা দেখলাম যে ২১ এবং ২২ সেপ্টেম্বর নতুন ইতিহাস তৈরি হল। আমরা ভাগ্যবান যে, মানুষ ইতিহাস তৈরি করার সুযোগ দিয়েছে।” এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সংযোজন, “সংসদের দুই কক্ষেই বিলটি পাশ করানো গিয়েছে। সবাই দেখেছে কী ভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার কাজ করে। নারী সংরক্ষণে আমরা কোনও রাজনৈতিক স্বার্থকে বাধা হয়ে আসতে দিইনি।”
রাহুল অবশ্য এই বিল কবে কার্যকর করা হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এই বিলের প্রশংসা করেও ওয়েনাড়ের কংগ্রেস সাংসদ বলেন, “নারী সংরক্ষণ একটি ভাল বিষয়। কিন্তু এই বিল কার্যকর করতে হলে প্রথমে আদমশুমারি বা জনগণনা করতে হবে, তার পর আসন পুনর্বিন্যাস করতে হবে। কেউ জানে না বিলটি কবে কার্যকর হবে।” ঘটনাচক্রে, এই বিল নিয়ে বিতর্কে অংশগ্রহণ করে কবে আইনসভায় নারী সংরক্ষণ চালু হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন সনিয়া গান্ধীও। ৩৩ শতাংশ মহিলা সংরক্ষণের আওতায় তফসিলি জাতি (এসসি), তফসিলি জনজাতি (এসটি)-র পাশপাশি অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি)কেও স্থান দেওয়ার কথা বলেছিলেন সনিয়া।
শুক্রবার রাহুলও ওবিসি সংরক্ষণের দাবিতে সরব হন। ২০১০ সালে ইউপিএ আমলে রাজ্যসভায় যে সংরক্ষণ বিল পাশ করানো হয়েছিল, তাতে ওবিসিদের জন্য সংরক্ষণের কথা বলা ছিল না। সেই বিষয়ে রাহুলকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, ১০০ শতাংশ দুঃখিত বিষয়টির জন্য। এমনটা না হতেই পারত বলে জানিয়েছেন তিনি। বিল কার্যকরের বিষয়ে মোদী সরকারকে কটাক্ষ করে রাহুল বলেন, “সরকার বিলটি এখন নিয়ে এলেও আজ থেকে ১০ বছর পরে এটি কার্যকর হবে।”
বিজেপি সূত্রে খবর, মহিলা এবং ওবিসি ভোটকে পাখির চোখ করেই ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে নামতে চলেছে তারা। এ দিকে জাতগণনার দাবিতে সরব হয়েছে আরজেডি এবং জেডি (ইউ)-এর মতো দলগুলিও। বিরোধীদের একটি অংশ মনে করছে জনসংখ্যার অনুপাতে ওবিসিদের সংরক্ষণের পরিমাণ কম, নতুন আদমশুমারিতে তা প্রমাণিত হলে অস্বস্তি বাড়বে বিজেপির। বিরোধীদের মোকাবিলায়, এ বার শিক্ষা, চাকরির পাশাপাশি, আইনসভাতেও ওবিসি সংরক্ষণের বিল আনতে পারে মোদী সরকার। তার আগে মহিলা সংরক্ষণে কংগ্রেসের আন্তরিকতা এবং উদ্যোগের দিকটি স্মরণ করিয়ে দিয়ে জাতগণনার দাবিও তুলে রাখতে চাইছে কংগ্রেস।