রাফাল-বিতর্ক কাঁটা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে

আসন্ন নির্বাচনে এই ফরাসি বিমান কেনাবেচায় দুর্নীতির প্রসঙ্গ তুলে মোদী সরকারকে কোণঠাসা করে প্রচারও করবে বিরোধী দলগুলি। কিন্তু ভোটের রাজনীতির এই দাপটে ক্রমশ রাহুগ্রস্ত হবে ভারত-ফ্রান্স দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:৫৩
Share:

রাফাল-চুক্তি নিয়ে দেশে রাজনৈতিক চাপানউতোর ক্রমশ বাড়বে। আসন্ন নির্বাচনে এই ফরাসি বিমান কেনাবেচায় দুর্নীতির প্রসঙ্গ তুলে মোদী সরকারকে কোণঠাসা করে প্রচারও করবে বিরোধী দলগুলি। কিন্তু ভোটের রাজনীতির এই দাপটে ক্রমশ রাহুগ্রস্ত হবে ভারত-ফ্রান্স দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, যা এই মুহূর্তে অন্যতম দামি সাউথ ব্লকের কাছে। এমনটাই মনে করছে কূটনৈতিক শিবির।

Advertisement

ইতিমধ্যেই তাদের অস্বস্তির কথা জানিয়েছে প্যারিস। ফ্রান্সের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদের মন্তব্যকে তুলে ধরে সে দেশের উপ-বিদেশমন্ত্রী জঁ বাপতিস্ত লিমোঁ বলেছেন, ‘‘ভারত এবং ফ্রান্সের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওলাঁদের করা মন্তব্য কোন ওভাবেই সেই সম্পর্ককে এগিয়ে দিচ্ছে না। উনি এই মুহূর্তে পদাধিকারী নন। কিন্তু ওঁর করা মন্তব্যে ভারত এবং ফ্রান্সের কৌশলগত সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভারতে বিতর্কে ইন্ধন জোগানো ছাড়া আর কিছুই হচ্ছে না।’’

শুধু ওলাঁদের মন্তব্যই নয়। ফরাসি শিষ্টাচার মেনে এখনও প্রকাশ্যে মুখ খোলা হয়নি অন্য একটি বিষয় নিয়েও। কূটনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, ভারতের মতো ঘনিষ্ঠ একটি রাষ্ট্রের (যে ঘনিষ্ঠতার কথা সর্বরাষ্ট্রবিদিত এবং অনেকের চক্ষুশূলও বটে) জাতীয় বিতর্কের কেন্দ্রে চলে আসছে ফরাসি বিমান— এটা ফ্রান্সের কাছে আদৌ কাম্য হতে পারে না। দুর্নীতির গন্ধ রয়েছে এমন একটি আন্তর্জাতিক লেনদেনে ফ্রান্স পরোক্ষ ভাবে হলেও যুক্ত— এটি তাদের প্রশাসনিক ভাবমূর্তির জন্য আদৌ সুখকর নয়।

Advertisement

অথচ এটা ঘটনা যে, অভিজাত পরমাণু ক্লাব বা এনএসজি-তে অন্তর্ভুক্তি থেকে পরমাণু চুক্তি, গোটা বিশ্ব জুড়ে সৌর জোটে যৌথ নেতৃত্ব দান, দীর্ঘদিনের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক বহাল রাখা, বিনিয়োগ, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভারতকে মজবুত করা— সর্বত্রই পশ্চিম বিশ্বের এই দেশটি নিঃশব্দে পাশে থেকেছে ভারতের। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বিতর্কে নয়াদিল্লিকে সমর্থন করেছে প্যারিস। ভূকৌশলগত রাজনীতিতে প্রতিবেশী রাষ্ট্র, বিশেষ করে চিন এবং পাকিস্তানের প্রবল চাপকে হজম করে পায়ের তলায় জমি শক্ত করা সম্ভব হয়েছে অনেকটাই ফ্রান্সের জন্য, এমনটাই মনে করেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। সবচেয়ে বড় কথা ভারত এবং ফ্রান্সে রাজনৈতিক পালাবদল ঘটলেও— দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের কূটনীতিতে তার ছায়া পড়েনি কখনও। আমেরিকার আসার অনেক ফ্রান্স পরমাণু বিশ্বে ভারতের প্রবেশাধিকার নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের বিভিন্ন দেশের কাছে সওয়াল শুরু করেছে। সম্প্রতি পশ্চিম ভারত মহাসাগরে কিছু ফরাসি দ্বীপে ভারতকে নৌ-ঘাঁটি বানানোর অনুমতি (যৌথ উদ্যোগে) দিয়েছে ফ্রান্স, যা কৌশলগত ভাবে নয়াদিল্লির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার মতে, ‘‘ভারত মহাসাগরে নয়াদিল্লির সক্রিয়তা খর্ব করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে চিন। ফলে নিজের আধিপত্য ধরে রাখতে ফ্রান্সের মত অংশীদার রাষ্ট্রের প্রয়োজন ছিল ভারতের।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement