নজরদারির মাত্রা নিয়ে থেকেই গেল ধন্দ

বিশেষ করে আইএস-এর মতো জঙ্গি সংগঠনগুলি যখন স্মার্টফোন-কম্পিউটারের মাধ্যমে তাদের ভাবধারা ছড়াতে তৎপর, তখন নজরদারিতে ঢিলে দেওয়াটা বিপজ্জনক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৭ ০৩:০৯
Share:

ব্যক্তিপরিসর নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় আসার পর আম-নাগরিকের উপর রাষ্ট্রের নজরদারির লক্ষণরেখা কী হওয়া উচিত, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ, মোবাইল থেকে ইন্টারনেট— সব ক্ষেত্রেই পরোক্ষে চালু রয়েছে রাষ্ট্রের নজরদারি। সরকারের যুক্তি, সন্ত্রাস বা নাশকতা থেকে আম নাগরিককে সুরক্ষা দিতে বাধ্য হয়েই নজরদারি চালাতে হয় রাষ্ট্রকে। কিন্তু ব্যক্তিপরিসরের অধিকার শীর্ষ আদালতের স্বীকৃতি পাওয়ার পরে সরকারের অবস্থান কী হবে, তা নিয়ে ধাঁধায় বিভিন্ন মহল।

Advertisement

‘বিগ ব্রাদার ইজ ওয়াচিং ইউ’— এই আতঙ্ক রয়েছে বিশ্ব জুড়েই। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও মানবাধিকার সংস্থা রাষ্ট্রের নজরদারি নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই সরব। গত কালের সুপ্রিম কোর্টের রায় গোটা দেশে নতুন করে ওই বিতর্ককে উস্কে দিয়েছে। লন্ডনে ২০১২ সালে ওলিম্পিকের সময়ে নিরাপত্তার জন্য স্টেডিয়াম ও সংশ্লিষ্ট চত্বর সিসিটিভি দিয়ে মুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু দর্শকদের একাংশ আপত্তি তুলে বলেন, এতে তাদের ব্যক্তিপরিসর ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। এ দেশেও বিভিন্ন পার্ক বা রাস্তায় সিসিটিভি লাগানো নিয়ে সরব হয়েছেন অনেকে। আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদের মত হল— পার্কে বা রাস্তায় লাগানো ক্যামেরায় কারওর ছবি উঠলে তাঁর গোপনীয়তা ক্ষুণ্ণ হওয়ার অভিযোগ করতেই পারেন। কিন্তু প্রয়োজনেই ওই ক্যামেরা লাগানো হয়েছে, সেটা বুঝতে হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক আজ জানিয়ে দিয়েছে, আদালতের রায় মানতে সরকার বাধ্য। কিন্তু সন্ত্রাস বা নাশকতার প্রশ্নে গা-ছাড়া মনোভাব দেখানোর প্রশ্নই নেই।

বিশেষ করে আইএস-এর মতো জঙ্গি সংগঠনগুলি যখন স্মার্টফোন-কম্পিউটারের মাধ্যমে তাদের ভাবধারা ছড়াতে তৎপর, তখন নজরদারিতে ঢিলে দেওয়াটা বিপজ্জনক। এক স্বরাষ্ট্র কর্তার কথায়, ‘‘গত এক বছরে দেশে ডজন খানেক আইএস অনুগামী যুবককে আটক করা হয়েছে। নজরদারি চালিয়েই তাদের জঙ্গি কার্যকলাপ সম্পর্কে জানা গিয়েছিল।’’

Advertisement

রায়ের পর মূল প্রশ্নটি সামনে এসেছে যে— আধার কার্ডের ভবিষ্যত কী হবে। আধারের মাধ্যমে ভবিষ্যতে সরকার নাগরিকের উপর নজরদারি চালাতে পারে, এই আশঙ্কায় ওই আইনকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। যদিও সরকার জুলাইয়ে সুপ্রিম কোর্টে হলফনামায় জানায়, আধারের মাধ্যমে কোনও ভাবেই নজরদারি সম্ভব নয়। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, প্যান কার্ড সংযুক্তিকরণের পর সব তথ্যই মিলবে আধার থেকে। ভবিষ্যকে রেল বা বিমানের টিকিটেও আধার কার্ড জরুরি করার কথা ভাবা হচ্ছে। ফলে সরকার চাইলে কোনও ব্যক্তির সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিতেই পারে। যদিও আইনমন্ত্রীর দাবি, ‘‘নাম, ঠিকানা বা বয়স ছাড়া আধার থেকে কিছু জানা সম্ভব নয়।’’ আইনমন্ত্রীর ওই যুক্তি অবশ্য মানতে রাজি নন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের কথায়, ‘৩৬০ ডিগ্রি প্রোফাইল’ তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে কেন্দ্রের, যে ব্যবস্থায় সবার সব তথ্য থাকবে সরকারের ঘরে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement