প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
ভারতে প্রতিভাবান ক্রীড়াবিদের অভাব ছিল না কোনও দিন। উৎসাহও তাঁদের ছিল ভরপুর। কিন্তু পদক জয়ের প্রশ্নে অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল সামনে। ২০১৪ সালে তিনি সরকার গড়ার পরেই পরিস্থিতি বদলায়। দেশের ক্রীড়াক্ষেত্রে তৈরি হয় আধুনিক ব্যবস্থা (ইকোসিস্টেম)। আজ তাই এশিয়ান গেমসে ভারতের পদকের সংখ্যা একশো পেরিয়েছে। এশিয়াডে পদকজয়ীদের নিয়ে একটি অনুষ্ঠানে আজ এই দাবি করলেন নরেন্দ্র মোদী নিজেই।
প্রধানমন্ত্রী বিশদ বিবরণ দিলেন, গত ন’বছরে তিনি কী কী করেছেন দেশের ক্রীড়াবিদদের উৎসাহিত করতে। চন্দ্রযান অভিযান, কোভিডের টিকার মতো বিষয়গুলিকে সমান্তরালে রেখে মোদীর বক্তব্য, “এর থেকেই প্রমাণ হয়, আমরা ঠিক দিকে এগোচ্ছি।... আমাদের বেটিরা যে কতটা দক্ষ, তা এই এশিয়ান গেমসে দেখা গিয়েছে। যত পদক এসেছে, তার অর্ধেক এনেছেন দেশের নারীরা। মহিলা ক্রিকেট দল এই জয়যাত্রা শুরু করেছিল।”
মোদীর বক্তৃতার পরেই চর্চায় উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক পদকজয়ী সাক্ষী মালিক, বিনেশ ফোগতদের আন্দোলন। যৌন হেনস্থায় অভিযুক্ত জাতীয় কুস্তি সংস্থার সভাপতি ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ দাবি করে রাস্তায় নামা মহিলা কুস্তিগিরদের টেনেহিঁচড়ে আটক করেছিল দিল্লি পুলিশ। সেই ব্রিজভূষণ এখনও বিজেপির লোকসভার সাংসদ। মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী নেত্তা ডি’সুজ়ার বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী যে সময় বার করে এশিয়াডে পদকজয়ীদের সঙ্গে কথা বলেছেন, তা সাধুবাদের যোগ্য। কিন্তু আফশোসের কথা হল, পদকজয়ী মহিলা কুস্তিগিরদেরও তিনি একই ভাবে নিজের বাড়িতে ডেকে কথা বলেছিলেন, উৎসাহ দিয়েছিলেন। ‘বেটি’ বা মেয়ে বলে ডেকেছিলেন। অথচ তাঁরা যখন বিজেপি সাংসদের বিরুদ্ধেই যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুললেন, তখন প্রধানমন্ত্রী একটি কথাও বলেননি। পাশে দাঁড়াননি তাঁদের। নেত্তার কথায়, ‘‘মোদী সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীন দিল্লি পুলিশ ওই বিজেপি সাংসদের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগে এফআইআর পর্যন্ত দায়ের করতে চায়নি। সেখানেও সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীকে তাই ক্রীড়াবিদদের বিষয়ে, মহিলাদের নিরাপত্তার বিষয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে।’’
তৃণমূল কংগ্রেসের লোকসভার সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার বলেন, “আমি মহিলা বিল পাশ করার সময় লোকসভায় বলেছিলাম, এই সরকারের দেখনদারি ষোলো আনা। বাস্তবে তার দু’আনাও প্রতিফলন নেই। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আমাদের ক্রীড়াবিদেরা সোনা আনছেন। কিন্তু তাঁদের উপরে যখন নিগ্রহ হচ্ছে, তখন সরকার নিষ্ক্রিয়।” আর এক তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায় জানান, সোনাজয়ী অনেকেই আজ ঠিকমতো সংসার চালাতে পারছেন না। তাঁর বক্তব্য, ‘‘প্রধানমন্ত্রী ওঁদের সঙ্গে ছবি তুলছেন, খুবই ভাল কথা। কিন্তু তাঁদের প্রাপ্য মূল্যও দিন। যে ব্যক্তি মহিলা কুস্তিগিরদের নিগ্রহে অভিযুক্ত, তিনি এখনও লোকসভার সাংসদ। অর্থাৎ সরকার তাঁর পাশে থাকল।”