সরকারি চাবিতে গলদ, দাবি রক্ষকের

‘‘এটা প্রভুর স্নানের সময়! রুপোর ঘড়া, সোনার জিভছোলা— আমাকেই বের করে দিতে হবে! এখন মেলা কথার সময় আছে?

Advertisement

ঋজু বসু

পুরী শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৮ ০৩:৫৭
Share:

কোঠারি নারায়ণ। —নিজস্ব চিত্র।

‘‘আমি হোটেলে ঘোরা পান্ডা নই, মাথায় রাখবে!’’— শুক্রবার সকালে গর্ভগৃহের কিনারে দাঁড়িয়ে অগ্নিশর্মা মেজাজে কাউকে তুমুল বকুনি দিচ্ছিলেন খালি গা, উন্নতনাসা, প্রৌঢ় বামুন।

Advertisement

‘‘এটা প্রভুর স্নানের সময়! রুপোর ঘড়া, সোনার জিভছোলা— আমাকেই বের করে দিতে হবে! এখন মেলা কথার সময় আছে?’’

অগত্যা সন্ধেয় অনেক খুঁজে হরচণ্ডী শাহিতে তাঁর বাড়িতেই হানা দেওয়া গেল। জগন্নাথ মন্দিরের পিছনের ঘোড়া দরজার উল্টোদিকেই শ্রী ক্ষেত্রের আদি-অকৃত্রিম সরু নর্দমাঘেরা গলি। জঞ্জাল ও সর-ছানার মিষ্টির টোকো গন্ধের মিশেলে সুবাসটাও একই রকম। আধ কিলোমিটারটাক হেঁটে পুছতাছের ফাঁকে কে এক জন দেখালেন, ওই চিত্রবিচিত্র দেওয়ালের ঘরটাই শ্রী মন্দিরের ভাণ্ডার মেকাপের ঠিকানা।

Advertisement

সরু দালানে ডানাওলা অপ্সরাদের ছবিতে লেখা ‘ওয়েলকাম’! এর পরেই চিত্রিত জগন্নাথদেব। কলকাতার আগন্তুককে দেখে মন্দিরের পরিধান কোমরের বস্ত্রখণ্ডটুকুর উপরে পাঞ্জাবি চাপিয়ে এলেন। তিনি কোঠারি নারায়ণ মেকাপ। মন্দিরের সেবায়েতকুলে, তাঁর পোর্টফোলিয়ো— জগন্নাথের রত্নভাণ্ডারের দেখভাল। পোশাকি নাম, ভাণ্ডার মেকাপ। কয়েক প্রজন্ম ধরে এই সেবাকাজই করে আসছেন! এখন গুরুদায়িত্ব নারায়ণ, তাঁর দাদা গণেশ, ভাই মধুসূদন, বাবনদের উপরে। জগন্নাথের অন্যতম মেকআপ ম্যানও বলা যায় নারায়ণবাবুকে। রত্নভাণ্ডারের চাবি-রহস্যের তদন্তে এক গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীও তিনি।

গত ৪ এপ্রিল, হাইকোর্ট নিযুক্ত টিম রত্নভাণ্ডার পরিদর্শনে যাওয়ার সময়ে মন্দিরের ভাণ্ডার মেকাপকেও থাকতে হয়েছিল। নিজের বাড়ির সদর দরজা ও দালানের ভিতরের দরজা দেখিয়ে নারায়ণ বোঝালেন, রত্নভাণ্ডারের বাহির ভাণ্ডার ও ভিতর ভাণ্ডারের ফারাক। বাইরের দরজার তিনটি চাবির একটি থাকে তাঁরই জিম্মায়। বাকি দু’টি মন্দির প্রশাসকের দফতর ও রাজার কাছ থেকে নিয়ে এসে খোলা হল। নারায়ণবাবুর কথায়, ‘‘ভিতর ভাণ্ডারের চাবি কিন্তু শুধু কালেক্টরের কাছে ট্রেজারি বিল্ডিংয়েই থাকার কথা। ডিসি (কালেক্টর) নিজে চাবি এনেছিলেন, কিন্তু তা দিয়ে দরজা খোলেনি।’’ তখন সবাই সার্চলাইট জ্বেলে ভিতর ভাণ্ডারের জাফরি-কাটা দরজার ও-পার থেকেই রত্নভাণ্ডার দেখে চলে যান। ঘরটার স্তম্ভ, পাথরের পুরনো দেওয়ালের দশা দেখাটাই মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল। পুরীর গজপতি রাজাও সদ্য একই কথা বলেছেন। পুরীর কালেক্টর অরবিন্দ অগ্রবাল এ বিষয়ে কিছু বলতে চাননি। তবে জেলা প্রশাসনের বক্তব্য, যা বলার সরকারি তদন্ত কমিশনকে বলা হবে।

চাবি-বিভ্রাটের জেরে মন্দিরে এখন রত্নভাণ্ডারটা কোথায় বলেও তুমুল কৌতূহল। গর্ভগৃহের ঠিক বাইরে ভক্তদের ওয়েটিংরুম জগমোহন লাগোয়া দালানের বাঁ পাশে তালাবন্ধ সেই দরজা। তার পাশেই ছোট ঘরে ভাণ্ডার মেকাপের অফিস। রত্নভাণ্ডারের দেবতা রুপোর লোকনাথ বা জগন্নাথের শয়নের সময়ে গর্ভগৃহগামী সোনার লক্ষ্মী-নারায়ণ ‘নিদ্রাবতী’ ওই ঘরেই থাকেন। মঙ্গলআরতির সোনার কর্পূরকাঠি থেকে যখন যেটা সেবায় লাগে, ভাণ্ডার মেকাপ এগিয়ে দেন।

সকালে মেরামতির জন্য রত্নভাণ্ডারের বাইরে আসা জগন্নাথের সোনা বেশের সাজের এক জোড়া সোনার পা দেখে ভক্তেরা উদ্বেল! যার যেমন সাধ্য, প্রণামীর টাকা সেই পায়েই জড়ো হতে থাকল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement