এক দিকে একে ৪৭, অন্য দিকে গাদা বন্দুক!

ঢাল নেই, তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দার! সোমবারের জঙ্গি হানায় পঞ্জাব পুলিশের এই ছবিটাই আরও এক বার ধরা পড়ল। হাতে সেই পুরনো দিনের রাইফেল। গায়ে নেই কোনও বুলেট প্রুফ জ্যাকেট। এমনকী, হেলমেটের বদলে মাথায় রয়েছে পাগড়ি। ‘স্পেশাল উইপনস অ্যান্ড ট্যাকটিক্‌স’ বাহিনীর সদস্যদের নি-প্যাড থাকলেও মাথায় ছিল না কোনও হেলমেট।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৫ ১৯:৩২
Share:

এ ভাবেই চলছে লড়াই। ছবি: এএফপি।

ঢাল নেই, তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দার! সোমবারের জঙ্গি হানায় পঞ্জাব পুলিশের এই ছবিটাই আরও এক বার ধরা পড়ল।

Advertisement

হাতে সেই পুরনো দিনের রাইফেল। গায়ে নেই কোনও বুলেট প্রুফ জ্যাকেট। এমনকী, হেলমেটের বদলে মাথায় রয়েছে পাগড়ি। ‘স্পেশাল উইপনস অ্যান্ড ট্যাকটিক্‌স’ বাহিনীর সদস্যদের নি-প্যাড থাকলেও মাথায় ছিল না কোনও হেলমেট। কয়েক জনের হাতে অবশ্য এসএলআর থাকলেও পঞ্জাব পুলিশের বেশির ভাগ পুলিশকর্মীই সোমবার এ ভাবেই জঙ্গি নিকেশে ময়দানে নামলেন। এমনকী, যে দীননগর থানায় এ দিন জঙ্গিরা গ্রেনে়ড ছুড়ল, তার মোকাবিলায় পুলিশকর্মীদের কোনও প্রশিক্ষণও ছিল না বলে অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। উল্টো দিকে জঙ্গিদের হাতে ছিল একে ৪৭-সহ অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র। সেনা বাহিনী উদ্ধার কাজে নামার পরও প্রায় ১২ ঘণ্টা লাগল জঙ্গি নিকেশ করতে! আর সেখানেই জাঁকাল হয়ে উঠছে প্রশ্নটি। সীমান্ত ঘেঁষা এমন একটি রাজ্যের পুলিশ বাহিনী এখনও কেন পরিকাঠামোগত ভাবে পুরনো আমলে পড়ে রয়েছে?

এ দিন ভোরে গুলির শব্দেই ঘুম ভাঙে দীননগরের। থানা থেকে ৫০০ মিটার দূরে বাড়ি যতীন্দ্র কুমারের। পেশায় রাজ্য স্বাস্থ্য দতরের কর্মী যতীন্দ্র এ দিন বলেন, ‘‘ঘড়িতে তখন সকাল সওয়া ছ’টা বাজে। এক বন্ধু মোবাইলে ফোন করে জঙ্গি হামলার কথা জানায়। তার আগে থেকেই আধো ঘুমে গুলির শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম।’’ ফোন পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে সিঁড়ি দিয়ে ছাদে ওঠেন তিনি। যতীন্দ্রের সংযোজন, ‘‘গোলাগুলির শব্দে বাইরে তখন কান পাতা দায়।’’ সেনা জওয়ানরা তত ক্ষণে এসে গিয়েছে। দু’পক্ষের লড়াইয়ের মাঝে তখন ভয়ে কাঁপছে গোটা দীননগর।

Advertisement

থানায় পৌঁছনোর আগে জঙ্গিরা একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও একটি ধাবায় হামলা চালায়। এই দুই জায়গায় তিন জন নিহত হন। একটি যাত্রিবাহী বাসেও বেমক্কা গুলি চালায় তারা। জখম হন চার যাত্রী। তার আগে ভওর পাঁচটা নাগাদ এক টেম্পোচালককে গুলি করে তাঁর গাড়িটি হাতানোর চেষ্টা করে জঙ্গিরা। তবে, এ কাজে সফল না হয়ে ফের এক মারুতি চালককে নিশানা করে তারা। ওই মারুতিচালক কমলজিত্ সিংহ মাথারু বলেন, ‘‘সেনা পোশাক পরা, হাতে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র-সহ কয়েকজন লোক হঠাত্ই আমার উপর হামলা চালায়। গায়ে গুলি লাগায় আমি যন্ত্রণায় চিত্কার করে উঠি। তারই মধ্যে গাড়িটি নিয়ে ওরা পালিয়ে যায়।’’ স্থানীয় হাসপাতালে আপাতত চিকিত্সাধীন কমলজিত্। তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল।

একটা সময় পঞ্জাব ছিল সন্ত্রাসের ‘আঁতুড়ঘর’। কিন্তু, বেশ কয়েক বছর শান্ত রয়েছে এই রাজ্য। বরং পড়শি রাজ্য জম্মু-কাশ্মীরই এখন সে জায়গা নিয়েছে। এ দিনের হঠাত্ হামলায় তাই দিশাহারা অবস্থা দীননগরের। এ দিন ভোরে গুলির আওয়াজে ঘুম ভাঙে বারীন্দ্র কুমার ভিকির। জঙ্গিরা যে ধাবায় আক্রমণ চালায় তার পাশেই বাড়ি তাঁর। গুলির শব্দ পেয়েই বাইরে এসে দেখেন, থানার দিকে একটি গাড়ি নিয়ে হু হু করে যাচ্ছে। আর রাস্তায় পড়ে কাতরাচ্ছেন এক জন। পরে জানা যায়, তিনিই গাড়িচালক কমলজিত্। ভিকি বলেন, ‘‘অত ভোরে রাস্তায় লোকজন প্রায় ছিলই না।’’ তাঁর দাবি, জঙ্গিরা ওই সময় তিন রাউন্ড গুলি চালায়। পরে জানা যায়, ওই গুলিতেই নিহত হয়েছেন ধাবার এক কর্মচারী।

কয়েক দিন বাদেই স্বাধীনতা দিবস। তার আগে দেশ জুড়ে কড়া সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এই রকম একটা সময়ে কী ভাবে এই জঙ্গিরা আক্রমণ চালাল সেটাই এখন সবচেয়ে মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের। আর পঞ্জাবের মতো সীমান্ত প্রদেশের পুলিশি পরিকাঠামো যদি এমন হয়, তবে গোটা দেশের কী অবস্থা তা নিয়েও প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে বিরোধীরা। প্রতিরক্ষা খাতে যেখানে প্রতি বছর বরাদ্দ বাড়ানো হয়, সেখানে এমন ঘটনায় উদ্বেগ সব মহলেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement