আদালত বলে, ‘‘রামায়ণ, মহাভারতের মতো মহাকাব্যে স্বয়ংবর সভার যে উল্লেখ মেলে তারই আধুনিক রূপ সংবিধানের ২১ নম্বর অনুচ্ছেদ।’’ —প্রতীকী চিত্র।
বিবাহের অধিকারের কোনও আধুনিক বিষয় নয়। প্রাচীন কালেই রয়েছে তার শিকড়। রামায়ণ, মহাভারতের মতো মহাকাব্যে স্বয়ংবর সভার যে উল্লেখ মেলে তারই আধুনিক রূপ সংবিধানের ২১ নম্বর অনুচ্ছেদ। যেখানে ব্যক্তির মৌলিক অধিকারের কথা বলা হয়েছে। একটি মামলার শুনানিতে এমনই পর্যবেক্ষণ পঞ্জাব এবং হরিয়ানা হাই কোর্টের। বিচারপতি জগমোহন বনশলের একক বেঞ্চের মত, ‘‘স্বয়ংবর সভার ধারণা থেকে নিজের ইচ্ছেয় বিয়ের অধিকারের কথা এসেছে। নিজে পাত্র কিংবা বা পাত্রী নির্বাচনের কথা রয়েছে রামায়ণ, মহাভারতের মতো মহাকাব্যে।’’
সম্প্রতি পঞ্জাব এবং হরিয়ানা হাই কোর্টে একটি মামলার শুনানি হয়। যেখানে এক ব্যক্তি তাঁর মেয়েকে অপহরণ করে বিয়ের অভিযোগ করেন এক যুবকের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া এফআইআর খারিজের আর্জি নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন। যুবকের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৬৩ (অপহরণ), ৩৬৬ (নাবালিকাকে প্ররোচনা দেওয়া) ইত্যাদি ধারায় মামলা দায়ের রুজু করেছিল পুলিশ। ওই মামলার শুনানিতে দু’পক্ষের সওয়াল জবাবের পর আদালত জানায় ওই যুগল সুখী দাম্পত্য কাটাচ্ছেন। তাই আদালত কিংবা কোনও আইনের কারবারি দিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে যাবে না। বিচারপতি বলেন, ‘‘যে রকম ভাবে যুগল থাকতে চান, সে ভাবে থাকার অধিকার ওই দু’জনের রয়েছে। দুই সন্তান রয়েছে দম্পতির। এই পরিস্থিতিতে একটি অপরাধের মামলা ওই সংসারের সুখ-শান্তি বিঘ্নিত করবে। তাই আদালত এ ব্যাপারে পদক্ষেপ করবে না।’’ উল্লেখ্য, এই মামলাটি ২০১৯ সালের।
সম্প্রতি মামলার শুনানিতে আদালতের পর্যবেক্ষণ, ওই যুগল সম্পূর্ণ নিজেদের ইচ্ছেয় বিয়ে করেছেন বলে আদালতে জানিয়েছেন। তা ছাড়া, তাঁর নাবালিকা কন্যাকে ফুঁসলিয়ে নিয়ে যাওয়ার যে অভিযোগ করেছেন বাবা, তার কোনও প্রমাণ পায়নি আদালত। এর পরেই স্বয়ংবর সভার উদাহরণ টানেন বিচারপতি। জানান, ওই রীতির আধুনিক রূপই সংবিধানের মৌলিক অধিকারের মধ্যে সংযুক্ত হয়েছে। বিষয়টি এ ভাবে দেখা যেতে পারে।
এর মধ্যে মামলাকারীর আইনজীবীও জানান যে, কন্যার বাবা পুলিশের কাছে যে অভিযোগ নিয়ে হাজির হয়েছিলেন, এখন তা খারিজ করা হলে তাঁর কোনও আপত্তি নেই।