হামলার পর পুলওয়ামায় অব্যাহত সেনা অভিযান। ছবি: রয়টার্স।
পাঠানকোট, উরির মতো পুলওয়ামা হামলার দায়ও ঝেড়ে ফেলেছে পাকিস্তান। উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই ভারত পাকিস্তানকে দোষারোপ করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন সে দেশের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। এ নিয়ে মুখ খুলল ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকও। পুলওয়ামা হামলা নিয়ে কোনও রকম নিন্দার কথা শোনা যায়নি ইমরানের মুখে। সে বিষয় উল্লেখ করে ভারত সরকারের বক্তব্য, ইমরানের আচরণ একেবারেই অপ্রত্যাশিত নয়। এর আগেও বার বার হামলার দায় ঝেড়ে ফেলেছে পাকিস্তান। ইমরান সেই পথেই চলেছেন।
মঙ্গলবার একটি টেলিভিশন চ্যানেলে ইমরান খানের মন্তব্য সম্প্রচারিত হওয়ার পর বিদেশ মন্ত্রকের তরফে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। তাতে বলা হয়, “পুলওয়ামায় ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর উপর হামলা হয়েছে। অথচ সেটাকে সন্ত্রাসী হামলা বলে মানতে রাজি নন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। হামলার নিন্দা করা তো দূর, নিহতদের পরিবারকে সমবেদনাটুকু জানাবার প্রয়োজন বোধ করেননি উনি। ওঁর আচরণে একটুও অবাক হইনি আমরা।”
বিদেশ মন্ত্রকের মতে, “এর আগেও একাধিকবার সন্ত্রাসযোগ অস্বীকার করেছে পাকিস্তান। নানা অজুহাতে দায় ঝেড়ে ফেলেছে। জইশ-ই-মহম্মদ যে পাকিস্তানি সংগঠন তাতে কোনও সন্দেহ নেই। সংগঠনের চাঁই মৌলানা মাসুদ আজহারের ঘাঁটিও পাকিস্তানেই। এ বার তো জইশ নিজে থেকেই দায় স্বীকার করেছে। এই জঘন্য হামলা ঘটিয়েছে যে জঙ্গি, সেও অনেক অনেক তথ্য সামনে এনেছে। পদক্ষেপ করার পক্ষে যা যথেষ্ট। কিন্তু ইচ্ছাকৃত ভাবে সে সব এড়িয়ে গিয়েছেন পাক প্রধানমন্ত্রী।”
রবিশ কুমারের মন্তব্য।
সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলা সম্পর্কে এই তথ্যগুলি জানেন?
আরও পড়ুন: ভারত যুদ্ধ শুরু করলে পাল্টা জবাব দেবে পাকিস্তান, হুমকি দিলেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান
সংবাদ সংস্থা এএনআইকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রবিশ কুমার বলেন, ভারতের তরফে উপযুক্ত প্রমাণ পেলে পুলওয়ামা নিয়ে তদন্ত শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন ইমরান। এটা বাজে অজুহাত। ২৬/১১-র সময় প্রমাণ দেওয়া হয়েছিল ওদের। তার পর ১০ বছর কেটে গিয়েছে। তদন্ত একচুল এগোয়নি। পাঠানকোটের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। নয়া পাকিস্তান গড়ার ডাক দিয়েছিলেন ইমরান। তাঁর সেই নয়া পাকিস্তানে হাফিজ সঈদদের মতো জঙ্গির সঙ্গে এক মঞ্চে দেখা যায় মন্ত্রীদের।
সন্ত্রাস ইস্যুতে একাধিকবার পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক বাতিল করেছে ভারত। এ দিন নতুন করে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিয়েছেন ইমরান খান। সেই প্রেক্ষিতে রবিশ কুমার বলেন, ‘‘ আলোচনায় আগ্রহ দেখিয়েছেন পাক প্রধানমন্ত্রী। ভাল কথা। কিন্তু ভারত আগে একাধিকবার জানিয়েছে, সন্ত্রাস এবং হিংসামুক্ত পরিস্থিতিতেই আলোচনা সম্ভব।’’
সন্ত্রাসমূলক কাজে পাকিস্তানের কোনও সমর্থন নেই বলে এ দিন দাবি করেন ইমরান। তাও খারিজ করেন রবিশ কুমার। তিনি বলেন, ‘‘নিজেদের ভুক্তভোগী বলে দাবি করেছেন পাক প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু আসল সত্যিটা আন্তর্জাতিক মহলের সকলেরই জানা। পাকিস্তান থেকেই সন্ত্রাসের উত্থান।’’
আরও পড়ুন: আর বরদাস্ত নয়, কাশ্মীরে এ বার অস্ত্র হাতে নিলেই গুলি, চরম বার্তা দিল সেনা
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পাক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদের হয়ে দক্ষিণ কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সিআরপিএফ কনভয়ে হামলা চালায় বছর ২২-এর আদিল আহমেদ দার। তাতে ৪০ জন জওয়ানের মৃত্যু হয়। গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, হামলা চালাতে নিজের বিশ্বস্ত অনুচরদের পাকিস্তান থেকে কাশ্মীর পাঠিয়েছিল মাসুদ আজহার। সেই মাসুদ আজহার, যে কিনা পাঠানকোট হামলার মূল চক্রী। যাকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে গত কয়েক বছর ধরে আন্তর্জাতিক মহলে চেষ্টা চালাচ্ছে ভারত। কিন্তু চিন এবং পাকিস্তান তাতে বাধা দিয়ে চলেছে। নিজেদের দেশে তাকে নিরাপদ আশ্রয়ও দিয়েছে পাক সরকার। পুলওয়ামা হামলার জন্য তাই সরাসরি পাকিস্তানকেই দায়ী করছে ভারত। সন্ত্রাস দমনে ইমরান খান সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরে, সমালোচনা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও। কিন্তু হামলার নিন্দা তো দূর, এ দিন ভারতকেই পাল্টা হুমকি দিতে দেখা যায় ইমরানকে। পুলওয়ামার প্রতিশোধ নিতে ভারত আক্রমণ করলে, পাকিস্তান প্রতি আক্রমণ করবে বলে হুমকি দেন তিনি।