রাস্তার উপর এ ভাবেই ধর্নায় নামেন ভি নারায়ণস্বামী ও তাঁর মন্ত্রীরা। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত।
কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সঙ্ঘাতে এ বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথ ধরলেন পুদুচেরির মুখ্যমন্ত্রী ভি নারায়ণস্বামী। প্রশাসনিক কাজে মোদী সরকারের হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে রাতভর ধর্নায় বসলেন তিনি। কেন্দ্রশাসিত পুদুচেরিতে কংগ্রেস ও ডিএমকে-র জোট সরকার। বুধবার বিকেলে দুই দলের বিধায়ক ও মন্ত্রীদের নিয়ে লেফ্টেন্যান্ট গভর্নর কিরণ বেদীর বাসভবনের সামনে হজির হন নারায়ণস্বমী। পাতলা চাদর গায়ে চাপিয়ে রাস্তায় শুয়ে রাত কাটান সকলে। বৃহস্পতিবার সকালে ধর্নায় যোগ দিতে হাজির হন দুই দলের সমর্থকরাও। রাজ নিবাসের বাইরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তাঁরা। সেই সঙ্গে কিরণ বেদীর অপসারণের দাবিও তোলা হয়। আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি নারায়ণস্বামীকে বৈঠকের জন্য ডেকে পাঠিয়েছেন কিরণ বেদী। বৈঠক না হওয়া পর্যন্ত ধর্না চলবে বলে জানিয়েছে পুদুচেরি সরকার।
গতকাল বিকেলে কালো রঙের খাটো কুর্তা এবং ধুতি পরে ধর্নায় বসেন নারায়ণস্বামী। নিজেই টুইটারে সেই ছবি আপলোড করেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, ‘‘সরকারি প্রকল্পে সই করা ছাড়া তেমন ক্ষমতাই নেই কিরণ বেদীর। মন্ত্রিসভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করার ওঁর এক্তিয়ারের মধ্যেই পড়ে না। তা সত্ত্বেও ইচ্ছাকৃতভাবে ৩৯টি সরকারি প্রকল্প আটকে রেখেছেন উনি। দরিদ্র মানুষকে বিনামূল্যে চাল দেওয়ার প্রস্তাবও ছিল তার মধ্যে। সই করেননি তাতেও। সব কেন্দ্রীয় সরকারের ষড়যন্ত্র। নরেন্দ্র মোদীর নির্দেশই সরকারি কাজে বাধা সৃষ্টি করছেন কিরণ বেদী। প্রতিদিন কোনও না কোনও সমস্যা তৈরি করছেন।’’
চিটফান্ড কাণ্ডে পুলিশ কমিশনারের বিরুদ্ধে সিবিআই লেলিয়ে দেওয়ার অভিযোগে সম্প্রতি কলকাতার রাস্তায় ধর্নায় বসেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেইসময় তাঁর সমর্থনে এগিয়ে এসেছিলেন নারায়ণস্বামী। পুদুচেরি নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও মন্তব্য করেননি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপি বিরোধী শিবির থেকে এখনও পর্যন্ত শুধুমাত্র এমকে স্ট্যালিনই এগিয়ে এসেছেন। ফোনে নারায়ণস্বামীকে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
ভি নারায়ণস্বামীর টুইট।
আরও পড়ুন: দিল্লিতে আপের সঙ্গে জোটে কার্যত না কংগ্রেসের, জানালেন কেজরীওয়াল
তবে যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেন প্রাক্তন আইপিএস অফিসার কিরণ বেদী। এ ভাবে তাঁর বাসভবনের সামনে ধর্নায় বসারও তীব্র নিন্দা করেন। বৃহস্পতিবার সকালে নারায়ণস্বামী ও তাঁর বিধায়কদের সঙ্গে দেখা না করেই চেন্নাই রওনা দেন তিনি। তবে লোক মারফত চিঠি দিয়ে বলেন, ‘‘যাবতীয় অভাব-অভিযোগ নিয়ে ৭ ফেব্রুয়ারি আমাকে চিঠি দিয়েছিলেন আমি। উত্তরের জন্য আর কটা দিন অপেক্ষা করতে পারতেন। কিন্তু তা না করে বেআইনিভাবে রাজনিবাসের সামনে হাজির হয়েছেন। একজন মুখ্যমন্ত্রীর এমন আচরণ মোটেই শোভন নয়।’’ তিনি কোনও সরকারি প্রকল্প আটকে রাখেননি বলেও পাল্টা দাবি করেন কিরণ বেদী।
২০১৬-র মে মাসে পুদুচেরির লেফ্টেন্যান্ট গভর্নর হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস অফিসার কিরণ বেদী। শুরু থেকেই বিভিন্ন ইস্যুতে তাঁর সঙ্গে বিরোধ বেধেছে নারায়ণস্বামী সরকারের। তবে এ বার ঝামেলার নেপথ্যে রয়েছে পথ নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ। পথ দুর্ঘটনা এড়াতে সম্প্রতি হেলমেট বাধ্যতামূলক করায় জোর দেন কিরণ বেদী। রবিবার রাস্তায় নেমে মোটরসাইকেল আরোহীদের থামিয়ে হেলমেট পরার নির্দেশও দিতে দেখা যায় তাঁকে।
আরও পড়ুন: ডুবছে পিএফ-পেনশনের ২০ হাজার কোটি, অবসরের পাওনা অনিশ্চিত ১৪ লক্ষ কর্মীর
গভর্নরের এই ‘অতিসক্রিয়তা’ই মনে ধরেনি নারায়ণস্বামী সরকারের। হেলমেট বাধ্যতামূলক করতে আপত্তি নেই তাদের। তবে তাড়াহুড়োর চেয়ে ধাপে ধাপে এগনোর পক্ষে তারা। মঙ্গলবার হেলমেট ভেঙে কিরণ বেদীর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নামেন বিরোধী দল এআইএডিএমকে-র নেতারাও।
(কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, গুজরাত থেকে মণিপুর - দেশের সব রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)