—প্রতীকী চিত্র।
জঙ্গি হামলার পরে সেনা হেফাজতে তিন জনের মৃত্যুর অভিযোগের জেরে এ দিনও উত্তপ্ত রইল জম্মু-কাশ্মীরের পুঞ্চ। তবে নিহত তিন জনের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও নিকটাত্মীয়কে সরকারি চাকরি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন।
অন্য দিকে এ দিনও জম্মুর আন্তর্জাতিক সীমান্তে একটি অনুপ্রবেশের চেষ্টা ব্যর্থ করেছে সেনা। আখনুর সেক্টরে ওই সংঘর্ষে এক জঙ্গি নিহত হয়েছে বলে দাবি সেনার। সূত্রের দাবি, ভারতীয় সেনার দৃষ্টি অন্য দিকে ঘোরাতে সীমান্তের জঙ্গলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল পাকিস্তানি সেনা। বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের বক্তব্য, ‘‘সীমান্তপারের সন্ত্রাসের মোকাবিলা করতে হবে। আমরা চড় খেলে আর একটা গাল বাড়িয়ে দিতে রাজি নই।’’
বৃহস্পতিবার পুঞ্চের ডেরা কি গলি ও বাফলিয়াজ় এলাকার মধ্যে জঙ্গি-দমন অভিযানের সময়ে বাহিনীর দু’টি গাড়িতে হামলা চালায় জঙ্গিরা। তাতে পাঁচ জন সেনা নিহত হন। এর পরে ওই এলাকায় ব্যাপক তল্লাশি অভিযানে নামে যৌথ বাহিনী। তখনই ওই এলাকার টোপা মাস্টানডারা গ্রাম থেকে সেনা বেশ কয়েক জনকে পাকড়াও করে বলে অভিযোগ। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, সেনা হেফাজতে মারধরের ফলে ধৃতদের মধ্যে বছর সাঁইত্রিশের সাফির হুসেন, বছর ছাব্বিশের মহম্মদ শওকত ও বছর বত্রিশের শাবির আহমদের মৃত্যু হয়। গত কালই এ নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন গ্রামবাসীরা।
আজ টোপা মাস্টানডারা গ্রামের গ্রামপ্রধান ও নিহত শওকতের কাকা মহম্মদ রফিক বলেন, ‘‘মোট আট জনকে পাকড়াও করেছিল ৪৮ নম্বর রাষ্ট্রীয় রাইফেলস।’’ তাঁর দাবি, সেনা হেফাজতে যে ধৃতদের মারধর করা হচ্ছে তা তিনি জানতে পেরেছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি বেশ কয়েক জন স্থানীয় রাজনীতিক ও আমলাকে ফোন করেছিলাম। কিন্তু কেউ আমাদের সাহায্য করেননি।’’ রফিকের দাবি, আজ সকাল আটটা নাগাদ নিহতদের দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু অন্য গ্রাম থেকে আত্মীয়-পরিজনকে টোপা মাস্টানডারায় আসতে দেওয়া হয়নি। গ্রাম ঘিরে রেখেছে সিআরপি।
এ দিন জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসনের তরফে বলা হয়েছে, বাফলিয়াজ়ে নিহত তিন জনের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। সরকারি চাকরি পাবেন তাঁদের নিকটাত্মীয়েরা। সেনার তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘বাফলিয়াজ়ে তিন জন বাসিন্দার মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। সেনা তদন্তে পুরোপুরি সহযোগিতা করবে।’’ ঘটনার জেরে এ দিন পুঞ্চে বন্ধ রাখা হয়েছিল মোবাইল ইন্টারনেট।
অন্য দিকে, এ দিন জম্মুর আখনুরের খৌর সেক্টরে অনুপ্রবেশের চেষ্টা ব্যর্থ করেছে সেনা। বাহিনীর তরফে জানানো হয়েছে, আজ ভোরে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছিল চার সশস্ত্র জঙ্গি। ভারতীয় সেনার দৃষ্টি অন্য দিকে ঘোরাতে অনুপ্রবেশের চেষ্টার সময়ে সীমান্তের জঙ্গলে আগুন ধরিয়ে দেয় পাক সেনা। কিন্তু নজরদারির যন্ত্রে জঙ্গিদের গতিবিধি টের পেয়ে তাদের চ্যালেঞ্জ করে ভারতীয় সেনা। সেনার দাবি, সংঘর্ষে এক জঙ্গি নিহত হয়েছে। তার দেহ সীমান্তের ওপারে টেনে নিয়ে যেতে দেখা গিয়েছে অন্য জঙ্গিদের।
এ দিনই দিল্লিতে এক সাংবাদিক বৈঠকে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, ‘‘স্বাধীনতার সময় থেকে ভারত সন্ত্রাসের শিকার। তখনই পাকিস্তান থেকে হানাদারেরা এসেছিল। এ নিয়ে আমাদের স্পষ্ট অবস্থান থাকা উচিত।’’ মন্ত্রীর কথায়, ‘‘আমার মনে হয়, মুম্বইয়ে ২৬/১১-র হামলার পরে এ দেশে অনেকের দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে। সন্ত্রাস সরাসরি না দেখা পর্যন্ত অনেকেই সন্দিহান ছিলেন।’’