উমর খালিদ। ছবি পিটিআই
দিল্লির হিংসায় মদত দেওয়ার অভিযোগে ধৃত সিএএ-এনআরসি-বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম মুখ, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রনেতা উমর খালিদের মুক্তি দাবি করে সরকারের উদ্দেশে বিবৃতি দিয়েছেন দু’শোরও বেশি শিক্ষাবিদ, লেখক এবং চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব। এঁদের মধ্যে রয়েছেন নোম চমস্কি, মীরা নায়ার, অমিতাভ ঘোষ, সলমন রুশদি, অরুন্ধতী রায়, রত্না পাঠক শাহ, পি সাইনাথেরা। উত্তর পশ্চিম দিল্লির সাম্প্রদায়িক হিংসার মামলার চার্জশিটে উমর খালিদ-সহ সিএএ-এনআরসি-বিরোধী আন্দোলনের অনেক নেতাকেই আসামি করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণাধীন দিল্লি পুলিশ। খালিদের বিরুদ্ধে দমনমূলক ইউএপিএ-র ধারাও দেওয়া হয়েছে।
এ দিনই খালিদকে ২২ অক্টোবর পর্ষন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। জেলের মধ্যে তাঁর উপরে হামলা হতে পারে আশঙ্কা করে খালিদের জন্য সেখানে পর্যাপ্ত সুরক্ষার বন্দোবস্ত করার আর্জি জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবী। দিল্লি পুলিশ আদালতে জানিয়েছে, আবগারি দফতরের এক সাব ইনস্পেক্টরকে দেওয়া তাদের এক চরের খবরের ভিত্তিতে ৬ মার্চ খালিদের বিরুদ্ধে তারা এফআইআর-টি করে। ওই চর আবগারি পুলিশকে জানিয়েছিল, উত্তর-পশ্চিম দিল্লির সাম্প্রদায়িক হিংসা ‘সম্ভবত পূর্ব পরিকল্পিত এবং উমর খালিদ এই চক্রান্তে থাকতে পারে’। তার পরে সেই এফআইআর-এর সূত্রে সেপ্টেম্বরে খালিদ ও কয়েক জন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করে দিল্লি পুলিশ। হিংসায় মদতদাতা হিসেবে কংগ্রেসের সলমন খুরশিদ, সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি, বৃন্দা কারাট, সিপিআই (এমএল) নেত্রী কবিতা কৃষ্ণন, ছাত্রনেতা কাওয়ালপ্রীত কৌর, বিজ্ঞানী গওহর রেজা, আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণের নামও চার্জশিটে রাখা হয়েছে।
বিশিষ্ট ২০০ জন তাঁদের বিবৃতিতে লিখেছেন, ‘নাগরিকদের সমানাধিকার লঙ্ঘনকারী এনআরসি-সিএএ-র বিরোধিতা করার জন্যই দিল্লি পুলিশ উমর খালিদকে দাঙ্গায় উস্কানির মতো মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার করেছে। সরকারের উচিত অবিলম্বে তাঁকে মুক্তি দেওয়া। এই কাজ করে দিল্লি পুলিশ তাদের সাংবিধানিক শপথও ভঙ্গ করেছে।’ বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, ‘ফেব্রুয়ারিতে হিংসার ঘটনার পরে সেপ্টেম্বরে মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া এই সাহসী মানবাধিকার কর্মীর পাশে আমরা আছি।’
সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনার যে চার্জশিট দিল্লি পুলিশ দিয়েছে, তাকে প্রতারণাপত্র বা ‘চিটশিট’ আখ্যা দিয়েছেন সিপিএমের পলিটবুরো সদস্য বৃন্দা কারাট। এই চার্জশিটে ‘উত্তেজক বক্তৃতা’ দেওয়ার জন্য অনেকের সঙ্গে তাঁর নামও রাখা হয়েছে। বৃন্দা বলেন, “নাগরিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার চক্রান্তের প্রতিবাদ করলেন যাঁরা, তাঁদের দেশদ্রোহী, দাঙ্গাবাজ বলে অভিযুক্ত করছে দিল্লি পুলিশ। আর কপিল মিশ্রের মতো যে সব নেতা হিংসাত্মক বক্তৃতা দিয়ে উত্তেজনা ছড়ালেন, তাঁদের ‘হুইস্লব্লোয়ার’ বলে আড়াল করল পুলিশ। এটা চার্জশিট নয়, চিটশিট!’’