(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
একশো দিনের কাজ ও প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় পশ্চিমবঙ্গের বকেয়া টাকা নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার মিলে সমাধানসূত্র বার করার চেষ্টা করছে। আজ নরেন্দ্র মোদী সরকারের গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান বলেন, ‘‘কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার মিলে সমস্যার সমাধান বার করার চেষ্টা করছে।’’ এই বকেয়া উদ্ধারে রাজ্য সরকারও কেন্দ্রের সঙ্গে বৈঠক চাইছে। প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, এই লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকে বার্তা পাঠিয়েছে রাজ্য সরকার। যদিও সেখান থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও উত্তর পায়নি রাজ্য।
একশো দিনের কাজের প্রকল্প বা এমজিএনআরইজিএ এবং প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় দুর্নীতি, অনিয়মের অভিযোগের জেরে দুই প্রকল্পেই দীর্ঘ দিন ধরে কেন্দ্রীয় সরকার টাকা আটকে রেখেছে। এ নিয়ে রাজনৈতিক টানাপড়েন, পারস্পরিক দোষারোপও দীর্ঘদিন ধরে চলছে। কিন্তু তার ফলে যে সাধারণ মানুষেরই সমস্যা হচ্ছে, তা-ও কেন্দ্রীয় সরকার বুঝতে পারছে।
তৃতীয় মোদী সরকারে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের দায়িত্ব পাওয়ার পরে শুক্রবার এ বিষয়ে প্রথম বার মুখ খুলে শিবরাজ বলেন, ‘‘আমরা কোনও রাজ্যকে বঞ্চিত করতে চাই না। কিছু অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। এখন প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার যদি নাম বদলে ফেলা হয়, তা হলে কী করা যাবে?” কিন্তু এর ফলে সাধারণ মানুষের সমস্যা নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে শিবরাজ জানান, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার মিলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি বৈঠকের পরে কেন্দ্র ও রাজ্যের আমলাদের মধ্যে বহু বার আলোচনাতেও জট কাটেনি। কৃষি ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের দায়িত্বভার গ্রহণের পরে বিভিন্ন রাজ্যের সঙ্গে শিবরাজ বৈঠক করা শুরু করলেও পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে তাঁর এখনও বৈঠক হয়নি। তবে এর মধ্যে ফের একটি কেন্দ্রীয় দল ঘুরে গিয়েছে রাজ্যে। তারা আবাস, একশো দিনের কাজ-সহ ১২টি প্রকল্পের গতিবিধি খতিয়ে দেখেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ডিসেম্বরের মধ্যে রাজ্যের তরফে ১১ লক্ষ উপভোক্তার বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। তা করতে গেলে বিপুল আর্থিক বোঝা ঘাড়ে নিতে হবে রাজ্যকে। ১১ লক্ষ উপভোক্তা হলে রাজ্যের প্রায় ১৩,২০০ কোটি টাকা খরচ হবে। এর মধ্যে ৬০% বা প্রায় ৭,৯০০ কোটি টাকা দিতে হবে ডিসেম্বরের মধ্যেই। রাজ্যের বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতিতে যা বেশ কঠিন।
এর মধ্যে কেন্দ্রের সঙ্গে দৌত্যের ইতিবাচক ফল মিললে কেন্দ্রের থেকে সমপরিমাণ বা ৬০% বরাদ্দ মিলবে। রাজ্যের বোঝা অনেকটাই কমে যাবে। সেই দিক থেকে কেন্দ্রের সঙ্গে বৈঠকের আগ্রহ তাৎপর্যপূর্ণ।
তৃতীয় মোদী সরকার গ্রামে নতুন ২ কোটি বাড়ি তৈরির লক্ষ্য ঘোষণা করেছে। আবাস যোজনায় শহরেও এক কোটি বাড়ি তৈরি হবে। ১৭ সেপ্টেম্বর তৃতীয় মোদী সরকারের ১০০ দিন পূর্ণ হচ্ছে। ওই দিন প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন। সে দিন প্রধানমন্ত্রী নতুন উপভোক্তাদের অ্যাকাউন্টে প্রথম কিস্তির টাকা তুলে দেবেন। এ দিকে ২০২২-এর মার্চ থেকে পশ্চিমবঙ্গে একশো দিনের কাজের টাকা আটকে রয়েছে। এই মুহূর্তে বকেয়ার পরিমাণ ৫,৫৫৩ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা-গ্রামীণ প্রকল্পে বকেয়ার পরিমাণ ৮,৪১২ কোটি টাকা। ফলে দুই প্রকল্প মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা কেন্দ্রের কাছে পাওনা রয়েছে।
গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক অবশ্য সম্প্রতি সংসদে জানিয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা-গ্রামীণে গত তিন বছরে পশ্চিমবঙ্গকে প্রায় ৬৮৮ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। ২০২১-২২ থেকে ২০২৩-২৪-এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ১২ লক্ষ ৭৩ হাজার মানুষের জন্য বাড়ি মঞ্জুর হয়েছে। এই অর্থ বছরে কেন্দ্রীয় সরকার প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা-গ্রামীণে কেন্দ্রের ভাগ হিসেবে রাজ্যের জন্য ৬৮৭.৮৪ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে। রাজ্য সরকার সেই অর্থ ও আগের দেওয়া অর্থ এবং রাজ্যের ভাগ থেকে প্রায় ৬,৬১২ কোটি টাকা খরচ করেছে।