ওয়েনাড়ে প্রচারের শেষ লগ্নে কংগ্রেস প্রার্থী প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা। ছবি: সংগৃহীত।
লোকসভা নির্বাচনে যত না ছিল, তার চেয়ে ঢের বেশি তিক্ততার আবহ তৈরি হয়েছে উপনির্বাচনের সময়ে। এক দিকে কংগ্রেস সিপিএমে কটাক্ষ করছে ‘কমিউনিস্ট জনতা পার্টি (মোদীবাদী)’ বলে! আবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন থেকে সিপিএমের পলিটব্যুরোর কো-অর্ডিনেটর প্রকাশ কারাট পর্যন্ত পাল্টা অভিযোগ করেছেন, ওয়েনাড়ের উপনির্বাচনে কংগ্রেস জামাত-ই-ইসলামির রাজনৈতিক দলের সমর্থন নিয়ে লড়ছে। এই তরজার মধ্যেই লোকসভা উপনির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা তাঁর প্রচার-পর্ব কার্যত শেষ করলেন সকলের মন জয়ের চেষ্টায়। এমনকি, চূড়ান্ত বিরোধের পরিমণ্ডলেও তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিআই প্রার্থী সত্যন মোকেরির প্রচার-সভায় ঢুকে পড়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করে নিলেন প্রিয়ঙ্কা!
কেরলের মলপ্পুরম জেলার আদিবাসী-অধ্যুষিত চুঙ্গাতারা এলাকায় দু’দিন আগে প্রচারে ছিলেন সিপিআইয়ের রাজ্য সহ-সম্পাদক সত্যন। সেই এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময়ে সন্ধ্যায় সিপিআই প্রার্থীর সভা দেখে নেমে পড়েন প্রিয়ঙ্কা। মঞ্চে গিয়ে সত্যনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নেন। সৌজন্য বিনিময়ের অবসরে দু’জনের মধ্যে কিছু ক্ষণ কথা হয়। তার পরে আবার নিজের কর্মসূচিতে চলে যান কংগ্রেস প্রার্থী এবং এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক। পরে প্রিয়ঙ্কার এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েও সত্যন অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘কংগ্রেস এখন বুঝতে পারছে, এখানে লড়াই আছে! সেই জন্যই প্রিয়ঙ্কা শেষ লগ্নে আত্মবিশ্বাসের চূড়া থেকে নেমে এসে বাম প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলে গিয়েছেন। এলডিএফ এখানে কংগ্রেসের সঙ্গে জোর টক্কর দেবে।’’
ওয়েনাড়ে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়ে রাহুল গান্ধী ২০১৯ সালে চার লক্ষ ৩১ হাজার এবং ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রায় তিন লক্ষ ৬৪ হাজার ভোটে জিতেছিলেন। প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে ওয়েনাড় লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হয়ে সিপিআইয়ের এই সত্যনই সে বার কংগ্রেসের ব্যবধান কুড়ি হাজারে নামিয়ে এনেছিলেন। যদিও ওয়েনাড় জেলার সদর কালপেট্টার কংগ্রেস বিধায়ক টি সিদ্দিকের দাবি, ‘‘অল্প দিনে প্রিয়ঙ্কা গান্ধী সকলের কাছের মানুষ হয়ে উঠেছেন। ভোটে তারই প্রতিফলন হবে। কয়েক মাস আগের লোকসভা নির্বাচনের চেয়ে এ বার আরও বড় জয় সময়ের অপেক্ষা!’’
প্রিয়ঙ্কাও সব রকম চেষ্টা চালিয়েছেন এলাকার মানুষের মূল সমস্যার দিকে নজর দেওয়ার। তিরুনেল্লির মহাবিষ্ণু মন্দিরে রবিবার প্রার্থনা করতে গিয়েছিলেন তিনি। তিরুনেল্লির পাপনাশিনী নদীতে ভাসানো হয়েছিল প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর চিতাভষ্ম। রাহুলের মতোই প্রিয়ঙ্কার জন্যও এই নদী এবং সংলগ্ন মন্দিরের সঙ্গে আবেগের যোগ। পুজো সেরে শেষ বেলার সভায় প্রিয়ঙ্কা বলেছেন, ‘‘আপনারা হয়তো বলবেন, ভোটের পরে দিল্লি ফিরে কয়েক দিন বিশ্রাম নিতে। কিন্তু আপনাদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ সব সময়েই থাকবে। আপনাদের সমস্যা, উদ্বেগ সবই মাথায় থাকবে।’’
সিপিএম বিজেপির পথে চলছে কি না বা কংগ্রেস জামাতের সমর্থনে কী করছে, এ সব প্রশ্নে রাজ্য রাজনীতিতে বিতর্ক চললেও প্রিয়ঙ্কা সেই প্রসঙ্গেই যাননি। ওয়েনাড়ে জঙ্গল-ঘেরা পঞ্চায়েত এলাকায় বন্যপশুর আক্রমণ স্থানীয় মানুষের আতঙ্কের কারণ। বন্যপ্রাণীর হামলায় মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষতিপূরণ বাড়ানোর কথা তুলেছেন প্রিয়ঙ্কা। বন্যপ্রাণীদের কারণেই ওয়েনাড় থেকে মহীশূর যাওয়ার সড়কে রাতের যান চলাচল বন্ধ আছে অনেক দিন। তাতে সমস্যায় পড়েছেন স্থানীয় শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা। প্রিয়ঙ্কা জানিয়েছেন, কর্নাটকের কংগ্রেস সরকারের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার সঙ্গে তাঁরা কথা বলেছেন। উপ-মুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমারকে এই বিষয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। উপনির্বাচন মিটে গেলে দুই রাজ্য কর্নাটক ও কেরলের মধ্যে সরকারি স্তরে আলোচনা হবে।
স্থানীয় আবেগে ভর করেই জয়ের মন্ত্র খুঁজছেন প্রিয়ঙ্কা!