প্রিন্স। —ফাইল চিত্র।
টানা ৪৮ ঘণ্টা ৬০ ফুট গভীর নলকূপের গর্তে বন্দি। তার পরেও পাঁচ বছরের প্রিন্স জীবিত অবস্থায় বেরিয়ে আসার পরে হরিয়ানার গ্রামের মানুষ ধরেই নিয়েছিলেন, এ ছেলে নির্ঘাত ‘দেবশিশু’।
বারো বছর আগে প্রিন্সের উদ্ধারের পর আশেপাশের গ্রামে যেখানেই পুজোআচ্চা, ভাণ্ডারা, কীর্তন বা জলসা হত, ডাক পড়ত ‘দেবশিশু’-র। গাড়ি এসে নিয়ে যেত। সঙ্গে মোটা ‘প্রণামী’। কুরুক্ষেত্রের হলধেরি গ্রামের গরিব চাষি রামচন্দ্র কাশ্যপ ছেলেকে নিয়ে ছুটতেন। সেই টাকায় পাকা বাড়ি তুলেছেন। কিন্তু ছেলের পড়াশোনায় নজর দেননি। এ বছর মাধ্যমিকেই ফেল করে গিয়েছে প্রিন্স।
সেনা জওয়ানরাই প্রিন্সকে নলকূপের গর্ত থেকে উদ্ধার করেছিলেন। গোটা দেশ সেই উদ্ধার অভিযানের ‘লাইভ টেলিকাস্ট’ থেকে চোখ সরায়নি। অসাধ্য সাধনের পর পাঁচ বছরের প্রিন্সের বাবা-মা’কে সেনা অফিসাররা বলেছিলেন, ছেলেকে ভাল করে পড়াশোনা শেখান। বড় হয়ে যাতে সেনায় যোগ দিতে পারে।
বুধবার বিহারের মুঙ্গেরে ১১০ ফুট গর্ত থেকে ৩০ ঘণ্টা পরে তিন বছরের সানাকে উদ্ধার করা হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, কেমন আছে প্রিন্স?
১৭ বছরে পা দিয়েছে প্রিন্সকুমার কাশ্যপ। সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে চাও? উত্তর এল, ‘‘অবশ্যই!’’ মাথার চুলে সেই জন্যই ফৌজি ছাঁট।
মনে আছে সে দিনের ঘটনা? প্রিন্স বলে, ‘‘আংরেজের সঙ্গে খেলছিলাম। একটা ইঁদুর দেখে ধরতে দৌড়ই। ইঁদুরটা একটা বস্তার পিছনে লুকোয়। বস্তার উপর উঠতেই সব দুলে উঠল। তার পর কিছু মনে নেই।’’ ৬০ ফুট গভীর বোরওয়েলটি বালির ওই বস্তা দিয়েই চাপা দেওয়া ছিল। কিন্তু বালি ঝুরঝুরে হয়ে বস্তা পাঁচ বছরের ছেলের চাপও নিতে পারেনি। তলিয়ে যায় প্রিন্স। প্রিন্সের ঘরের তাকে সাজানো সারি সারি উপহারের মধ্যে সেনার শংসাপত্রও রয়েছে। তাতে লেখা, প্রিন্স পড়াশোনা শেষ করে সেনায় যোগ দিতে চাইলে, সুযোগ মিলবে। কিন্তু বাস্তবটা উল্টো। সামনের বছরও যে সে পাশ করবে, প্রিন্সের শিক্ষকরা নিশ্চিত নন। ‘‘পড়াশোনায় মন নেই। রোজ স্কুলে আসে না। বাবাকে বলেও লাভ হয় না,’’—দুঃখ করেন সম্বালখি সরকারি স্কুলের শিক্ষক হরমিত সিংহ।
প্রিন্সের যে মা-কে টিভি-র পর্দায় হাহাকার করে কাঁদতে দেখেছিলেন দেশের মানুষ, তিনি কোথায়? গ্রামের পড়শিরা জানালেন, প্রিন্সের জন্যই গ্রামে পুজো-ভাণ্ডারা বসেছিল। সেই পুরোহিতের সঙ্গেই পালিয়ে যান প্রিন্সের মা। বাবা রামচন্দ্র আবার বিয়ে করেছেন। প্রিন্স বলেন, ‘‘নতুন মা আমাকে খুবই ভালবাসে।’’
কিন্তু মাধ্যমিকে ফেল প্রিন্সকে আর কেউ ‘দেবশিশু’ বলে না। পুজোআচ্চাতেও ডাক পড়ে না। প্রিন্স বলে, ‘‘আর কেউ টাকা দেয় না।
খোঁজ নেয় না। আমি পড়াশোনা করছি। বাবার সঙ্গে মাঝেমাঝে খেতি করি। এ বার নিজেকেই রোজগার করতে হবে।’’