Narendra Modi

আয়কর বিল পেশের আগে রাজ্যসভায় মধ্যবিত্তের মন ছোঁয়ার চেষ্টা মোদীর! দিল্লি ভোট নিয়ে একটি শব্দও নেই

এ বারের বাজেটে ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বার্ষিক আয়ের উপর করে ছাড় দেওয়া হয়েছে। আয়কর নিয়ে নতুন বিলও আনছে কেন্দ্র। তার আগে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে রাজ্যসভার ভাষণে মধ্যবিত্তের মন ছোঁয়ার চেষ্টা মোদীর।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৯:৪৬
Share:

বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।

সংসদে শীঘ্রই নতুন আয়কর বিল আনছে কেন্দ্র। শুক্রবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় এই বিল পেশ হতে পারে। তার ঠিক আগেই রাজ্যসভার বক্তৃতায় মধ্যবিত্ত-মন ছুঁয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় রাষ্ট্রপতির বক্তৃতার জবাবি ভাষণে মোদী বোঝাতে চাইলেন, গত এক দশকে তাঁর সরকার মধ্যবিত্তের কথা মাথায় রেখেই সব সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে প্রায় দেড় ঘণ্টার বক্তৃতায় দিল্লির ভোটের প্রসঙ্গে একটি শব্দও ব্যবহার করেননি তিনি। দরিদ্র এবং মধ্যবিত্তদের প্রসঙ্গ ছাড়া পুরো বক্তৃতা জুড়েই থাকল কংগ্রেসকে আক্রমণ এবং দুই জমানার ফারাকের কথা।

Advertisement

এ বারের বাজেটে আয়করে আরও ছাড় দিয়েছে কেন্দ্র। বার্ষিক ১২ লক্ষ টাকা আয়ের উপর কোনও কর দিতে হবে না বলে ঘোষণা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় প্রায় দেড় ঘণ্টার বক্তৃতায় সে কথা আবারও মনে করিয়ে দিলেন মোদী। প্রধানমন্ত্রী শোনালেন ‘নব্য মধ্যবিত্ত’ (নিও মিডলক্লাস)-এর কথাও। তাঁর বক্তব্য, কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রকল্প এবং উদ্যোগের কারণে দরিদ্র শ্রেণির মানুষকে মধ্যবিত্তের পর্যায়ে উন্নীত করা সম্ভব হয়েছে। দরিদ্র থেকে মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে উঠে আসা মানুষদেরই তিনি ব্যাখ্যা করছেন ‘নব্য মধ্যবিত্ত’ বলে। মোদীর কথায়, “কেন্দ্রীয় সরকার মধ্যবিত্ত এবং নব্য মধ্যবিত্তের পাশে সব সময় রয়েছে। আমরা মধ্যবিত্তদের একটি বড় অংশের জন্য আয়কর শূন্য করে দিয়েছে। ২০১৩ সালে (মোদী জমানা শুরুর আগে) বার্ষিক ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ের উপর ছাড় ছিল। আজ আমরা বার্ষিক ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ের উপরে করে ছাড় দিয়েছি।”

রাজ্যসভায় মোদীর বক্তৃতায় উঠে আসে আয়ুষ্মান যোজনা, আবাস যোজনার মতো প্রকল্পগুলির কথাও। আয়ুষ্মান যোজনায় সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধদের চিকিৎসা বিমা দেয় কেন্দ্র। মোদীর দাবি, এই প্রকল্পে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাচ্ছেন দেশের মধ্যবিত্ত প্রবীণেরাই। পাশাপাশি, মধ্যবিত্তদের জন্য কেন্দ্রের তরফে ৪ কোটি বাড়িও তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এক কোটি বাড়ি তৈরি হয়েছে শহরাঞ্চলেই। মোদী যখন বাড়ি তৈরির পরিসংখ্যান তুলে ধরছিলেন, তখন বিরোধী সাংসদদের আসন থেকে হইহট্টগোল শুরু হয় কিছু ক্ষণের জন্য। তাঁরা দাবি করতে থাকেন, প্রকৃত পরিসংখ্যান ৪ কোটির থেকে অনেকটা কম।

Advertisement

এ ছাড়া দেশের পর্যটন প্রসারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মধ্যবিত্তেরা উপকৃত হচ্ছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তাঁর কথায়, অতীতে বিদেশিরা ভারত বলতে দিল্লি, মুম্বই বা বেঙ্গালুরুকেই চিনতেন। তবে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে জি-২০ বৈঠক আয়োজন করানোর ফলে এখন বিশ্ববাসী ভারতকে নতুন করে চিনেছেন। দেশীয় পর্যটনেও আকর্ষণ বৃদ্ধি পেয়েছে। পর্যটনের সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসাও বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মধ্যবিত্তেরাই এর সুবিধা পাচ্ছেন বলে মত প্রধানমন্ত্রীর।

মোদীর বক্তৃতায় উঠে আসে আদিবাসী, দলিত, তফসিলি জাতি, জনজাতি এবং অন্য পিছিয়ে পড়া শ্রেণির প্রসঙ্গ। তাঁর সরকার যে সাধারণ শ্রেণির গরিব মানুষদের জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণ এনেছে, সে কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। উঠে আসে বিশেষ ভাবে সক্ষমদের জন্য সুবিধা, তৃতীয় লিঙ্গকে আইনি স্বীকৃতির কথাও। দলিতদের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বিআর অম্বেডকর এবং কংগ্রেসেরও প্রসঙ্গ টানেন মোদী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অম্বেডকরের প্রতি কংগ্রেসের কী পরিমাণ ঘৃণা ছিল! তাঁর প্রতিটি কথায় কংগ্রেস বিরক্ত হয়ে যেত। এর সব তথ্য রয়েছে। বাবাসাহেবকে দু’বার নির্বাচনে হারানোর জন্য তারা কী করেনি! বাবাসাহেবকে তারা কখনও ভারতরত্নের যোগ্য মনে করেনি ( প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই হইহট্টগোল শুরু করেন বিরোধীরা)। তবে দেশবাসী অম্বেডকরের ভাবনাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। তাই আজ বাধ্য হয়ে কংগ্রেসকে জয় ভীম বলতে হয়। এ কথা বলতে গিয়ে তাদের গলা শুকিয়ে আসে।”

জরুরি অবস্থার সময়ে দেশের পরিস্থিতির কথাও স্মরণ করিয়ে দেন মোদী। দেশবাসীর বাক্‌স্বাধীনতা হনন এবং সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধের চেষ্টার অভিযোগ তোলেন তিনি কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। বেশ কিছু উদাহরণও তুলে ধরে মোদীর অভিযোগ, শিল্পীদেরও রেহাই দেওয়া হয়নি সেই সময়। জরুরি অবস্থাকে প্রকাশ্যে সমর্থন জানাতে রাজি না হওয়ায় দেবানন্দের সিনেমা দূরদর্শনে সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ তোলেন মোদী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যাঁরা এখন সংবিধানের কথা বলছেন, তাঁরা বছরের পর বছর সংবিধানকে নিজেদের পকেটে ঢুকিয়ে রেখে দিয়েছিলেন।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement