প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
ইংরেজির পরিবর্তে আঞ্চলিক ভাষায় শিক্ষাদানের উপরে জোর দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আজ জাতীয় শিক্ষা নীতির তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আঞ্চলিক ভাষায় শিক্ষাদানের প্রশ্নে সওয়াল করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘এতে ভাষা নিয়ে যাঁরা রাজনীতি করেন, তাঁদের দোকানে ঝাঁপ পড়তে বাধ্য।’’
নরেন্দ্র মোদী সরকারের আমলে যে জাতীয় শিক্ষা নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে, তাতে বিশেষ ভাবে জোর দেওয়া হয়েছে আঞ্চলিক ভাষায় শিক্ষার উপরে। সেই লক্ষ্যে উচ্চশিক্ষার পঠনপাঠনে যে বই লাগে, সেগুলি আঞ্চলিক ভাষায় অনুবাদ শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রক। আজ জাতীয় শিক্ষা নীতির তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আঞ্চলিক ভাষায় শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে ইউরোপের উদাহরণ টেনে মোদী বলেন, ‘‘ইউরোপের অধিকাংশ দেশে ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের মাতৃভাষায় পড়াশুনো করে থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে বহু সংখ্যক সমৃদ্ধ ভাষা থাকা সত্ত্বেও মাতৃভাষার ব্যবহার মানে সামাজিক ভাবে পিছিয়ে থাকা বোঝায়। এতে প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও এত দিন অসুবিধায় পড়তে হচ্ছিল গ্রামীণ পড়ুয়াদের।’’
মোদীর বক্তব্য, স্বাধীনতার ৭৫ বছরের মাথায় ওই ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসার লক্ষ্যেই নতুন শিক্ষানীতিতে মাতৃভাষায় শিক্ষার উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। এর পরে তিনি নিজের উদাহরণ টেনে মজা করে বলেন, ‘‘আমি কিন্তু রাষ্ট্রপুঞ্জে নিজের ভাষাতেই কথা বলি। তাতে তালি বাজতে একটু সময় বেশি লাগে। দেরি হলে হবে। মাতৃভাষায় শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে সমাজবিজ্ঞান থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং বইয়ের ১২টি ভারতীয় ভাষায় অনুবাদ করা হচ্ছে।’’ মোদীর কথায়, যুবকদের ভাষার আত্মবিশ্বাস সঙ্গে থাকলে প্রতিভার স্ফূরণ সঠিক ভাবে হবে। এর পরেই মোদী বলেন, ‘‘যারা ভাষা নিয়ে রাজনীতি করে, বিভেদের রাজনীতি করতে চায়, (মাতৃভাষায় শিক্ষাদান) তাদের ঝাঁপ ফেলতে বাধ্য করবে।’’ ভাষা নিয়ে বিভেদের রাজনীতি প্রশ্নে মোদী কারও নাম নেননি। তবে অনেকেই মনে করছেন, দক্ষিণের রাজ্যগুলি গত কয়েক বছরে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে হিন্দি ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে বারবার সরব হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারি বিজ্ঞাপন, প্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলক হিন্দি ব্যবহারের বিরুদ্ধে সরব ওই রাজ্যগুলি হিন্দির পরিবর্তে আঞ্চলিক ভাষা এবং ইংরেজির পক্ষে সওয়াল করে থাকে। এ দিন পরোক্ষে তাদেরই নিশানা করতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
আজ মোদী দাবি করেন, দেশের আইআইটি শিক্ষাপ্রণালীর কদর ক্রমশ বাড়ছে বিদেশে। তানজানিয়ার জিঞ্জিবার এবং আবু ধাবিতে ভারতের উদ্যোগে আইআইটি স্থাপন করা হচ্ছে। অন্য দিকে অস্ট্রেলিয়া-সহ একাধিক দেশ ভারতে তঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা গুজরাতে খুলতে আগ্রহী বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। অন্য দিকে ছোট থেকেই পড়ুয়াদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে প্রাকৃতিক বিপর্যয়, জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশবান্ধব এনার্জি-র বিষয়ে পড়ানোর উপরে স্কুলগুলিকে পরামর্শ দেন মোদী।