প্রতীকী ছবি
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নীরব। মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন শেষ বার মুখ খুলেছিলেন তিন সপ্তাহ আগে।
খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির চড়া হার আগেই আট বছরের রেকর্ড ভেঙে ফেলেছিল। এ বার পাইকারি বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার ২৪ বছরের রেকর্ড ভেঙে ফেলল। আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে টাকার দরও পড়ছেই। যার জেরে এক ডলারের দাম বেড়ে ৭৭.৭৯ টাকা ছুঁয়ে ফেলল।
আজ দিল্লিতে সারা দিন বিজেপির মন্ত্রী-নেতাদের চোখ রইল টিভির পর্দায়, জ্ঞানবাপী (যার অর্থ জ্ঞানের কূপ) মসজিদ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের শুনানির দিকে। দিল্লির শাহজাহান রোডে কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি রাস্তার নাম বদলের দাবিতে বিক্ষোভ দেখাল। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে না অর্থমন্ত্রী, না তাঁর অর্থ মন্ত্রক— কারও তরফ থেকেই কোনও সাড়াশব্দ মিলল না। স্বাভাবিক ভাবেই বিরোধীদের প্রশ্ন, অভূতপর্ব ও অসহনীয় মূল্যবৃদ্ধির ছ্যাঁকা সত্ত্বেও, প্রধানমন্ত্রী বা অর্থমন্ত্রী মুখ খুলছেন না কেন?
বিরোধীদের আরও অভিযোগ, বাজারদরের আগুন থেকে নজর ঘোরাতেই বিজেপি তথা আরএসএসের সংগঠনগুলি কাশীর জ্ঞানবাপী মসজিদ, মথুরার ইদগা নিয়ে বিতর্ক তৈরি করছে। সাম্প্রদায়িক অশান্তি তৈরি করে মানুষের নজর ঘোরাতে চাইছে। সে দিক থেকে তারা সফল। কারণ, সংবাদমাধ্যমের একাংশে শুধু জ্ঞানবাপী মসজিদে শিবলিঙ্গ মিলল কি মিলল না, তা নিয়েই বিতর্ক।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী আজ বলেছেন, আমজনতার বিষয় হল— রোজগার, মূল্যবৃদ্ধি। আর বিজেপির বিষয় হল— সাম্প্রদায়িক হিংসা, স্বেচ্ছাচারিতা। কংগ্রেস নেতা অজয় মাকেনের অভিযোগ, মূল্যবৃদ্ধি, টাকার দরের পতন থেকে নজর ঘোরাতেই জ্ঞানবাপী মসজিদ নিয়ে বিতর্ক খাড়া করা হচ্ছে। তৃণমূলের অভিযোগ, মূল্যবৃদ্ধি তিন দশকের রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে। কিন্তু বিতর্ক চলছে কুতুব মিনার, লাউডস্পিকার, তাজমহল নিয়ে। যেখানে চড়া মূল্যবৃদ্ধি, টাকার পতন, অর্থনীতির অব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত।
অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন তিন সপ্তাহ আগে বলেছিলেন, মূল্যবৃদ্ধিতে লাগাম পরানো যাবে। তাঁর কথা ভুল প্রমাণ করে পাইকারি বাজারে মূল্যবৃদ্ধি যখন ১৫ শতাংশ ছাপিয়ে যাচ্ছে, অর্থমন্ত্রী তখন মঙ্গলবার অনেকখানি সময় অর্থ মন্ত্রকের বদলে বিজেপির সদর দফতরে কাটালেন। বিজেপির সহযোগ কর্মসূচিতে দলের কর্মীদের মুখে অভিযোগ, সমস্যা শুনে। কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালার অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী শুধু নীরব নন। তাঁরা কাজের বেলাতেও নেই। অর্থ মন্ত্রকের একটি সূত্রের অবশ্য বক্তব্য, অর্থমন্ত্রী মুখ খুলতে গেলেই প্রশ্ন উঠবে, মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানতে কি পেট্রল-ডিজ়েলে কর কমানো হবে? বিশ্ব বাজারে দামের জন্য জ্বালানি বা ভোজ্য তেলের দাম কমার পথ নেই। খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাবে আতঙ্কে রাতারাতি গমের রফতানি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু তার ফল রাতারাতি মিলবে না। ফলে সরকারের হাতে হাতিয়ারই নেই। অর্থমন্ত্রী মুখ খুলে বলবেনটা কী?
প্রসঙ্গত, অর্থ মন্ত্রকের এপ্রিল মাসের রিপোর্টে বলা হয়েছিল, কেনাকাটার ধরন ইঙ্গিত করছে, মূল্যবৃদ্ধি বেশি আয়ের মানুষের তুলনায় কম আয়ের মানুষের উপরে কম প্রভাব ফেলেছে। এ নিয়ে হইচই হওয়ায় সরকারি তরফে বলা হয়েছিল, অর্থ মন্ত্রক মোটেই বলেনি যে মূল্যবৃদ্ধি গরিবদের তুলনায় ধনীদের উপরে বেশি প্রভাব ফেলবে। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় আজ বলেছেন, মূল্যবৃদ্ধির জেরে গরিব, মধ্যবিত্তের উপরে বেশি বোঝা চাপবে।
শুধু মূল্যবৃদ্ধি নয়। অর্থনীতির অন্যান্য মাপকাঠিও মোদী সরকারের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। শিল্পোৎপাদনের সূচক গত পাঁচ মাস ধরে ২ শতাংশ নীচে। বাণিজ্যিক ঘাটতি গত ৮ মাস ধরে ১,৫০০ কোটি ডলারের উপরে। কংগ্রেসের অভিযোগ, শুধু জ্ঞানবাপী মসজিদ ঘিরে বিতর্ক তৈরি করা নয়, ইউপিএ-সরকারের মন্ত্রী পি চিদম্বরমের বাড়িতে আচমকা সিবিআই হানাও চড়া মূল্যবৃদ্ধি, টাকার পতন থেকে নজর ঘোরাতে। চিদম্বরম নিজেও সিবিআই হানার সময়কে ‘ইন্টারেস্টিং’ বলে তকমা দিয়েছেন। কংগ্রেস মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনতের কটাক্ষ, “বিজেপি আসলে অর্থব্যবস্থা নিয়ে চিদম্বরমের লেখাপত্র হাতাতে চাইছিল। এখন বেলাগাম মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব সামাল দেওয়ার সেটাই উপায়। চেয়েই নিতে পারতেন। অকারণে তল্লাশির কি দরকার ছিল?”